আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাফিন, আজ কেন জানি তোর কথা খুব মনে পড়ছে।

সপ্নেরা হয়ে যাক সবুজ ডানা.....ইচ্ছেদের ছুটি দিলাম, খেয়ালের যত সব নিয়ম ভেঙে .... জোছনার সঙ্গি হলাম

শাফিন। তখন বয়স ছিল সাড়ে চার বছর। খুব হাসি খুশি ভামূর্তি সম্পন্ন একটা শিশু। সম্পর্কে আমার খালাত ভাই। যখন কথা বলতে শেখে তখন থেকেই তার কথা বার্তায় কি যেন একটা খুঁজে পেতাম।

খুব মধুর একটা কিছু হবে। আর আমার সাথে তার খুনসুটির কোন অন্ত ছিলনা। যদিও ওদের সাথে খুব কম দেখা হত। আমাকে সব সময় "তুই" সম্বধন করে কথা বলত। আমার খুব মজা লাগত।

ইচ্ছে করেই ওকে খেপিয়ে তুলতাম ওর মুখের মিষ্টি গালি শোনার জন্য। ওর যে কথাটা আমাকে এখনো খুব নাড়া দেয় সেটা হল " তোর নাক ভাইঙি দিবুন দেইকতুনি" (আন্চলিক ভাষায়)। এর অর্থ হল "তোর নাক ভেঙে দেব দেখিস"। এই কথাটা ওর মুখে এত পরিমান ভাল লাগত তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা। আর যে বিষয়টা আমি এখনো কষ্ট পাই, সেটা বলি।

ওদের বাড়ি চুয়াডাংগা শহরে। চুয়াডাংগার ব্লগাররা চিনতেও পারেন। ও "সজল জোয়ারদার" এর ছেলে। আমি তখন খুলনায় পড়াশুনা করি । বাড়ি থেকে ট্রেনে যাওয়া আসা করতাম।

চুয়াডাংগা ষ্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠা লাগত। একবার বাড়ি থেকে খুলনা যাচ্ছি। খুব জরুরি একটা কাজে খালার সাথে দেখা করতে হবে। শাফিনের মা আমার খালা। ট্রেনের সময় বিকাল পাঁচটা।

আমি ঠিক সাড়ে চারটায় খালার বাড়ি গিয়ে পৌছাই। ট্রেন ধরার টেনশনে শাফিনের জন্য চকলেট নেওয়ার কথা একদম ভূলে গেছি। আমি খালার সাথে কথা বলছি, এর ভিতর ও কোথাথেকে ছুটে এসে আমার পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিল। আর বলল (ওর ভাষায়) আমার জন্য চকলেট এনেছিস? বললাম ভাইয়া আমি তো একদম ভূলে গেছি। তাড়াতাড়ি চল, সামনের দোকান থেকে চকলেট কিনে দিচ্ছি।

খালা জোর করলেন। আজ না, অন্যদিন চকলেট দিও। আর ওকে উদ্দেশ্য করে বললেন " ভাইয়া যেদিন চাকরি পাবে,সেদিন তোমার জন্য অনেকগুলা চকলেট নিয়ে আসবে"। আমিও কোনরকম বিদায় নিয়ে চলে আসি। কিন্তু আমি জানতাম না যে, এটাই শাফিনের সাথে আমার শেষ দেখা।

১৫ ই আগষ্ট। ২০০৬ সাল। শাফিন ওদের বাড়ির সামনের ছোট্ট আঙিনায় খেলা করছে। সময়টা ভরা দুপুর। ওদের বাড়িতে নতুন দরজা লাগানো হবে।

তাই চৌকাঠের একটা বিশাল এবং ভারি একটা দরজা কিনে এনে প্রাচিরের সাথে হেলান দিয়ে রাখা হয়েছে। আর শাফিন ঐ দরজার সামনে খেলছিল। কিন্তু হঠাৎ কিভাবে যেন ঐ ঘাতক দরজাটা চৌকাঠ সহ শাফিনের গায়ের উপর পড়ে যায়। একটা চিৎকার দেওয়ার সুযোগও পায়নি বাচ্চাটা। শাফিনের ছোট্ট জীবনটা ওখানেই শেষ।

আমি সামান্য দুই টাকা দামের চকলেট শাফিন কে দিতে পারলাম না? ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃণা চলে আসে। আমার চোখে সহজে পানি আসে না। কিন্তু ওর মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা যখনই ভাবি, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা। আর কখনই ভাবতে পারিনা শাফিন আমাদের মাঝে নেই। এরচেয়ে ভাল ভাবে লিখতে পারলামনা।

তাই সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.