আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাফিন আহমেদঃ একজন কিংবদন্তী!

এই ব্লগের কোন লেখা আমার অনুমতি ব্যতীত কোথাও ব্যবহার না করার অনুরোধ করছি

কারও বাবা যদি হন একজন অমর স্রষ্টা, কারও মা যদি হন একজন অসামান্য প্রতিভা, তাহলেই যে তাঁদের সন্তানেরা তাঁদের মতো হবে, এটা ভাবার কোনই কারণ নেই। বাংলাদেশেই শুধু নয়, পুরো পৃথিবীতেই এমন অনেক ব্যক্তিত্ব আছেন/ছিলেন, যাঁদের সন্তানেরা তাঁদের মুখ উজ্জ্বল করতে তো পারেনইনি, মুখ যেটুকু উজ্জ্বল ছিল সেটুকুও ম্লান করে দিয়েছেন! কিন্তু 'তিনি' ব্যতিক্রম। তিনি শাফিন আহমেদ। তিনি এক অর্থে ছাড়িয়ে গেছেন তাঁর বাবা-মাকেও। বাবা কমল দাশ গুপ্ত ছিলেন একজন অসাধারণ সুরস্রষ্টা।

কমল দাশ গুপ্তের সুর করা গানগুলো আজও মানুষের মনে দোলা দিয়ে যায়। মা ফিরোজা বেগম হচ্ছেন উপমহাদেশের কিংবদন্তী নজরুল সঙ্গীত শিল্পী। তাঁদের সন্তান-শাফিন আহমেদ। পড়াশোনা করেছেন দেশের বাইরে, কিন্তু সঙ্গীত জীবনে যাঁর পদার্পণ মাত্র ৯ বছর বয়েসেই। জীবন্ত কিংবদন্তীতূল্য এই শিল্পী তাঁর দীর্ঘ সংগীত জীবনে রচনা করেছেন অসংখ্য গান, সুর করেছেন অনেক, কম্পোজিশন করেছেন; কিন্তু তাঁর প্রধান পরিচয় হয়ে উঠেছে একজন ব্যতিক্রমী গায়ক হিসেবে, যিনি তাঁর স্টাইলের জন্য হয়ে উঠেছেন অন্যরকম একজন, পেয়েছেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা।

তাঁর স্টাইল শুধু তাঁর গানের কথা-সুর-মিউজিক-গায়কীর ভিন্নধর্মীতাতেই নয়, তাঁর স্টাইল তাঁর গেট-আপেও। শুধুমাত্র স্টাইলিশ, এই যুক্তিতে আর্টিস্টির মতো কোন ব্র্যান্ড তাঁকে এম্বাসেডর করেছে বাংলাদেশের বহু মডেল-চিত্রনায়ককে পিছনে ফেলেই। বাবার কাছ থেকে সুর আর মায়ের কাছ থেকে গায়কী এই নিয়েই বোধহয় জন্মেছিলেন এই মানুষটি, যিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে অসংখ্য অজর্ন, তিনি যেখানে চাকরি করেছেন, সেটাকে আমাদের অনেকের কাছেই স্বপ্ন বলে মনে হবে। তিনি একসময় ক্রিকেটার ছিলেন, ছিলেন আরো অনেক অনেক ক্ষেত্রে স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল।

আমি শুধু এখানে বলব তাঁর সংগীত জীবনের সামান্য কয়েকটি কথা, কারণ, তাঁর সম্পূর্ণ জীবনী লিখতে গেলে সেটা অনেকটা গবেষণার পর্যায়ে চলে যাবে! শাফিন আহমেদ বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের জগতে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীতের একজন পাইওনিয়ার হচ্ছেন শাফিন আহমেদ। স্বাধীনতার কিছুদিন পরই, সময়টা ১৯৭৯ সাল, বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতে পা রাখে একটি ব্যান্ড-মাইলস। মাইলসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যদিও তিনি ছিলেন না, কিন্তু প্রতিষ্ঠাতার মাত্র কয়েকমাসের মাথায়ই তিনি, এবং তাঁর ভাই, হামিন আহমেদ, যোগ দেন মাইলসে। মাইলস তাঁদের হাত ধরে পথ চলে ১৯৭৯ থেকে ২০১০ পর্যন্ত।

দীর্ঘ একুশ বছরের পথ পরিক্রমায় মাইলস তথা বাঙলা ব্যান্ড জগত তাঁর কাছ থেকে পেয়েছে অমর কিছু গান, অসাধারণ জনপ্রিয় অনেক গানের শিল্পী তিনি। তুমুল জনপ্রিয় গান চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি, প্রথম প্রেমের মতো, পাতা ঝড়ে যায়, গুঞ্জন শুনি, এ মন তো আর পারে না, ফিরে এলে না, সে কোন দরদীয়া, ফিরিয়ে দাও, ধ্বিকি ধ্বিকি, পাহাড়ী মেয়ে, কতকাল খুঁজবো তোমায়, কি যাদু, ভালোবেসোনা, জ্বালা জ্বালা, ভুলবোনা তোমাকে, স্বপ্নভঙ্গ, নীল নয়ন, তোমার আশায়, পিয়াসী মন, অনামিকা, নীরবে কিছুক্ষণ, পারিনা বোঝাতে, জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন ইত্যাদি গানগুলো বিগত একুশ বছর ধরে বাংলাদেশের শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরেছে, কনসার্টগুলোতে এই গানগুলোতে সাড়া দেখে বোঝা যায়, আজও এই গানগুলো চির সবুজ। মাইলস এর বাইরে অনেক মিক্সড এলবাম এবং তাঁর সলো এলবামের জন্যও গান করেছেন শাফিন আহমেদ। আজ জন্মদিন তোমার, দুঃখ স্রোত, অভিমানে থাকতে বলিনি, কোন এক সাঁঝে, আয়না ভেঙ্গে যায়, বৃষ্টিভেজা রাতে ফিরি একা, শহর থেকে দূরে, এই না ডাকা, উচাটন এই মনটা, অপ্রিয়তমা, ফিরে ফিরে চাই এই গানগুলো মাইলসের বাইরেও তাঁকে এনে দিয়েছে সমান জনপ্রিয়তা। বাবা কমল দাশ গুপ্তের করা কিছু পুরোনো দিনের গান নিয়ে বের করেছেন একটি রিমেক এলবামঃ কতদিন দেখিনি তোমায়, যেখানে তিনি প্রমাণ করেছেন একজন ব্যান্ডশিল্পী হয়েও তিনি ক্ল্যাসিকাল গান কত চমৎকারভাবে গাইতে পারেন।

২০০১ সালে তিনি বেস্ট সেলিব্রিটি অফ বাংলাদেশ (পুরুষ) নির্বাচিত হন। মাইলসের সঙ্গে দীর্ঘ একুশ বছরের পথ পরিক্রমার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন ২০১০ এর জানুয়ারিতে, গড়েছেন নতুন ব্যান্ড রিদম অফ লাইফ। তাঁর মাইলস ছাড়ার ঘটনায় তোলপাড় ঘটে যায় বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীত জগতে, কিন্তু তিনি অবিচল থাকেন তাঁর সিদ্ধান্তে এবং নতুন ব্যান্ড এর জন্যে মিউজিক কম্পোজিশনে মনোনিবেশ করেন। গত পহেলা বৈশাখে রিলিজ করেন নতুন ব্যান্ডের প্রথম এলবামের একটি গান-নাচো বাংলাদেশ, রেডিওতে গানটি প্রচার হয় বেশ কয়েকবার এবং তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠে গানটি। এই মুহুর্তে শাফিন আহমেদ তাঁর নতুন ব্যান্ডের প্রথম এলবামের জন্য কাজ করছেন।

শাফিন আহমেদ এর জীবনের এক পলকঃ নামঃ শাফিন আহমেদ বাবাঃ কমল দাশগুপ্ত মাঃ ফিরোজা বেগম জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী জন্মতারিখঃ ১৪ই ফেব্রুয়ারি। প্রথম ব্যান্ডঃ মাইলস (১৯৭৯-২০১০) দ্বিতীয় ব্যান্ডঃ রিদম অফ লাইফ (২০১০-) ব্যান্ড এলবামঃ মাইলস, এ স্টেপ ফারদার, প্রতিশ্রুতি, প্রত্যাশা, প্রত্যয়, প্রয়াস, প্রবাহ, প্রতিধ্বনি, প্রিয়তমা। সলো এলবামঃ তোমাকে, পাগলাঘন্টি, বেস্ট অফ শাফিন আহমেদ, ছবি আর স্মৃতিগুলো, কতদিন দেখিনি তোমায়, ভাইরাস, হারানো সুখ, মাই লাভ সং। মিক্সড এলবামঃ বিশটির উপরে। গানের সংখ্যাঃ দুই শতাধিক।

ব্র্যান্ড এম্বাসেডরঃ আর্টিস্টি কালেকশন, গ্রেট ওয়াল মোটরস (জিডব্লিউএম), হোটেল প্লাটিনাম স্যুটস। মাইলস ছেড়ে যাওয়ায় দুঃখ পেয়েছেন হাজারো ভক্ত, জানুয়ারি মাসে ফেসবুকে মাইলস এবং শাফিন আহমেদ এর পেজ দেখলেই সেটা বোঝা যায়। গানের সংখ্যার ব্যাপারে কখনো মাথা ঘামাননি শাফিন আহমেদ, মাথা ঘামিয়েছেন মানের ব্যাপারে, তাই তাঁর গাওয়া প্রায় প্রতিটি গানই মনে গেঁথে আছে এই দেশের মানুষের, তাঁকে মানের প্রশ্নে অটল থাকার তাঁর এই মানসিকতা তাঁকে দিয়েছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। ভেরিয়েশন অফ ভয়েস এর সাথে ডিফারেন্ট প্যাটার্ন অফ ফ্যাশন তাঁকে তরুণ সমাজের কাছে তৈরী করেছে একটি আদর্শে। শাফিন আহমেদ আমাদের দেশের সঙ্গীত জগতকে আরও অনেক বেশি সমৃদ্ধ করবেন, এটাই তাঁর কাছে প্রত্যাশা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.