আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কমপক্ষে ১৫ কোটি নারী খাৎনা প্রথার শিকার, আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন অযৌক্তিক- ওয়ারিস দিরি


মোহাম্মদ আবুল হোসেন: বিশ্বে কমপক্ষে ১৫ কোটি নারী খাৎনা প্রথার মতো বর্বরতার শিকার। এমন প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন সুপার মডেল ওয়ারিস দিরি। তার মতে, আফ্রিকায় এখনও কুমারী মেয়েদের খাৎনা দেয়া হয়। এর মাধ্যমে কুমারীদের প্রজনন তন্ত্রের বিশেষ একটি অঙ্গকে কেটে ফেলে দেয়া হয়। নারীদের জৈবিক চাহিদা কমাতে এ প্রথা চালু করা হয়েছিল।

এ ধারাটি শুধু আফ্রিকাতে নয় ইউরোপ ও আমেরিকার মতো সভ্য সমাজেও প্রচলিত। তিনি মনে করেন, এই সব সভ্য সমাজে এমন ন্যাক্কারজনক প্রথা চালু থাকার পরেও আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা অযৌক্তিক। ওয়ারিস দিরি সোমালিয়ার যাযাবর। এমন এক সমাজে, সভ্যতায় ১৯৬৫ সালে জন্ম নেয়া ওয়ারিস দিরি এখন সুপারমডেল। মাত্র তিন বছর বয়সে দুই বোনের সঙ্গে তাকেও খাৎনা দেয়া হয়।

কিন্তু তার পরে মারাত্বকভাবে ভুগে তার দুই বোন মারা গেছেন। বেঁচে আছেন ওয়ারিস। ১৩ বছর বয়সের সময় তার চেয়ে অনেক বেশি বয়সী এক পুরুষের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে তার পরিবার। কিন্তু তিনি ওই বিয়ে থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পালিয়ে চলে যান লন্ডনে। সেখানে এক ধনী আত্মীয়র সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করেন।

পরে তিনি ম্যাকডোনাল্ড-এ কাজ করেন। হঠাৎ করে একদিন তাকে আবিস্কার করেন ফটোগ্রাফার টেরেন্স ডোনোভান। তিনিই তাকে ১৯৮৭ সালের ‘পিরেলি’ ক্যালেন্ডারের পাতায় তুলে আনেন। শুরু হয় মডেল হিসেবে তার যাত্রা। তারপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

চ্যানেল, লেভিস, এল’ওরেল এবং র‌্যাভলনের মতো টপ ডিজাইনারদের মতো ব্যক্তিদের মডেলে পরিণত হন তিনি। ১৯৯৮ সালে তিনি লেখেন প্রথম বই ‘ডেজার্ট ফ্লাওয়ার’। এটা তার জীবনিভিত্তিক বই। এটা তখন বেস্টসেলার হয়। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘের অধীনে কুমারীদের খাৎনা বিলোপ বিষয়ক কর্মসূচির স্পেশাল এম্বাসেডর।

তার লেখা ডেজার্ট ফ্লাওয়ার-এর উপর ভিত্তি করে ওই নামেই তৈরি হয়েছে একটি চলচ্চিত্র। সেটি ১০ই মার্চ ফ্রান্সে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। ওই ছবির প্রিমিয়ার শো’র আগে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, প্রতিদিনই নারীরা পাহাড় সমান বাধা অতিক্রম করছেন। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা তাদের প্রতি অসম্মান দেখানো। তিনি বলেছেন, কুমারীদের খাৎনা দেয়ার বিষয়ে আফ্রিকা মোটেও কেয়ার করে না।

সেখানকার সরকার এ বিষয়ে কাউকে সহায়তাও করে না। সেজন্যই বেসরকারি সংগঠনগুলোকে (এনজিও) এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ইতিমধ্যে তিনি এ বিষয়ে কাজ করতে গঠন করেছেন ওয়ারিস দিরি ফাউন্ডেশন। এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে- কমপক্ষে ১৫ কোটি কুমারীকে ওই বর্বর খাৎনা প্রথার শিকার হতে হয়েছে। এ প্রথা এখন আফ্রিকা সহ বিশ্বের অনেক দেশেই চালু আছে।

ইউরোপ বা আমেরিকায় বসবাসকারী হাজার হাজার মা তাদের ছোট্ট কুমারী মেয়েদের খাৎনা করাচ্ছেন প্রথাগত বিশ্বাস থেকে। এর মাধ্যমে তাদের অনেকেই হারিয়ে যাচ্ছেন। ওয়ারিস দিরির জীবনিভিত্তিক ওই ছবিতে দেখানো হয়েছে- প্রতিদিন বিশ্বে ৬ হাজার কুমারীকে খাৎনার শিকার হতে হয়। কিছু মানুষের মধ্যে এমন বিশ্বাস চালু আছে যে, যেসব নারীকে খাৎনা দেয়া হয় না তারা খাঁটি নন। তবে যাদেরকে খাৎনা দেয়া হয় তারা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত ও মানসিক বিশৃংখলতা নিয়ে বেঁচে থাকেন।

এ ছবিটি প্রদর্শন সহায়তা করছে ফ্রান্সের দ্য ফাউন্ডেশন ইন সাপোর্ট অব দ্য ডিগনিটি এন্ড রাইটস অব ওমেন নামের সংস্থা। এ সংস্থাটিও নারীদের খাৎনা প্রথা বন্ধের জন্য কাজ করছে। এর সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী সালমা হায়েক, ডিজাইনার স্টেলা ম্যাককার্টনি, ফ্রিদা গিয়ান্নিনি।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.