ক্রমশ আগুন নিভে আসে। ইতোমধ্যে বাড়িগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমরা লক্ষ্ করি আগুন নিভে গেলে হানাদার পাক বাহিনী ওপারের পথ ধরে উত্তরের দিকে চলে যায়। আমি ভীত,ত্রস্ত সাইকেল চালাতে চালাতে বাড়ি ফিরি। সব ঘটনা খুলে বলার পর সম্পূর্ণ আলাদা কারণে মা ও মামার মুখ কালো হয়ে যায়।
মামা চলে যাবার পর আমরা আবারো খেলাধুলায় মেতে উঠি। দোয়েলগুলো খুব নাদুস-নুদুস হয়ে উঠেছে। এগুলো এখন খাঁচার ভেতর ঘুরে বেড়ায়। পালক গজানোর পর এদের শরীরে অন্যরকম জেল্লা আসে। আমি ও সজল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখি।
আমাদের কোনো পরিশ্রম করতে হয় না। পেয়ারা গাছের সাথে প্রতিদিন ভোরে খাঁচাটি ঝুলিয়ে দিই। পাখিরা যথারীতি আসে এবং আমরাও নিশ্চিত সময় কাটাই।
আমরা বাড়ির ভেতরেই দৌড়াদৌড়ি করি। আমাদের সাথে মহা উৎসাহে দৌড়ায় বাঘা।
আমাদের পোষা কুকুর। রাতের বেলা বাঘার সাথে আরো কিছু কুকুর এসে জোটে। ওরা গভীর রাতে কুঊউ শব্দে কাঁদে। বড়রা বলে-কুকুর কাঁদছে, তার মানে বিপদ আসছে।
আমরা এতশত বুঝিনা।
নিত্য নতুন খেয়াল আর দুষ্টুমি নিয়ে থাকি। এর মধ্যে খবর আসে মামা ভারতে ট্রেনিং শেষে যুদ্ধে নেমে পড়েছে। অনেকের সাথে মন্টু ভাইও আছে। আজকাল রাতের বেলা গোলাগুলির শব্দও শোনা যায়। বড়রা সাউন্ড কমিয়ে রেডিও শোনে।
নতুন একটি বেতার কেন্দ্র নাকি খুলেছে। ঐ কেন্দ্র থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধের খবর শোনা যায়। মাঝে
মাঝে বড়রা খুব উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। তাঁদের খুশী আমাদেরও ছুঁয়ে যায়।
এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে আমাদের গ্রামের কয়েকজনকে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায়।
পরদিন ভোরেই হত্যা করে এদের কয়েকজনকে। এই ঘটনা সারা গ্রামকে স্তব্ধ করে দেয়। লোকজন খুব একটা ঘর থেকে বেরোয়না। কথা বলে ফিসফিসিয়ে। আমরাও কেমন গুম মেরে যাই।
[চলবে]
[চলবে]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।