বড়াইগ্রাম(নাটোর) উপজেলার সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে এই ব্লগে আলোচনা করা হবে। বেশী করে নিমগাছ লাগান, আপনার পরিবেশ ভাল থাকবে।
নাটোরের বড়াইগ্রামে চলতি মৌসুমে পানের বাম্পার ফলন হওয়ায় ও ভাল দাম পাওয়ায় পান চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। সা¤প্রতিক সময়ে অন্যসব নিত্যপণ্যের মতই পানের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ কারণেই উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন পান চাষীরা।
লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই এখন পান চাষে ঝুঁকছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বড়াইগ্রাম উপজেলায় মোট ৫২০ হেক্টর জমিতে পানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে পিঙ্গুইন, কুমারখালী, আদগ্রাম, জোনাইল, বর্ণি ও বাগডোব গ্রামেই বেশির ভাগ পান চাষ হয়ে থাকে। এ এলাকার প্রায় ১০ সহস্রাধিক মানুষ পান চাষের মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলার নগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও পানচাষী আব্দুস সালাম জানান, সাধারণত উঁচু জমিতে পান চাষ করতে হয়।
পানের জমিতে কোন অবস্থাতেই পানি জমতে দেয়া যাবে না। কার্তিক মাসে জমিতে গোবর ও জৈবসার প্রয়োগ করতে হয়। এরপর বাঁশের কাঠি ও সুতা দিয়ে বরজ তৈরী করে পানচাষ শুরু করতে হয়। ফাল্গুন মাসে গাছ বড় হয়, বৈশাখ মাস থেকে পান তুলে বাজারে বিক্রি করা হয়। এসময় চাষীরা বরজে বিক্রি উপযোগী সকল পান একত্রে উঠিয়ে খাঁচি তৈরী করে।
প্রতি খাঁচিতে ১০০০ থেকে ১২০০ বিড়া পান রাখা হয়(এক বিড়ায় ৮০টি পান থাকে)। প্রতি খাঁচি পান ৪০/৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। এক একর জমিতে ৬-৮ খাঁচি পান হয়। পান পরিচর্যা সহ সকল খরচ বাদে প্রতি একর জমির পান বরজ থেকে বছরে ৩-৩.৫ ল টাকা আয় হয়। এ উপজেলার পান চাষীরা ভালো মানের পান নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোরসহ রাজধানী ঢাকায় পাঠান।
সেখান থেকে এসব পান সৌদিআরব, কাতার, কুয়েত, আবুধাবী, বাহরাইন, নেপাল, ভূটানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়ে থাকে।
বড়াইগ্রাম উপজেলার পিঙ্গুইন গ্রামের পানচাষী আবু তালেব জানান, অত্র এলাকার জমি ও আবহাওয়া পানচাষের উপযোগী এবং অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষ অধিক লাভজনক। যার ফলে কৃষক অন্য ফসলের পরিবর্তে ব্যাপক হারে পান চাষের দিকে ঝুঁকছে। তিনি নিজেও মোট ৫ একর জমিতে পান বরজ করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় এ বছর পানে ভাইরাসের আক্রমণ হলেও এ উপজেলায় তেমন কোন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি।
আবার পানের ফলনও ভালো হয়েছে । দেশের অন্যান্য এলাকায় ভাইরাসের আক্রমণ হওয়ার দরুণ বাজারে পানের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবার উপজেলার কৃষকেরা পানের ভালো দাম পাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে বিগত বছরে ব্যাপক উৎপাদণ হওয়ায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় অনেকেই এখন পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। নতুন করে পান বরজ করেছেন উপজেলার গোপালপুর গ্রামের খন্দকার আমজাদ হোসেন । আগে এসব জমিতে তিনি শুধু শাক-সব্জির চাষ করতেন।
তার মত আরও অনেকেই নতুনভাবে পানের বরজ করছেন বলে তিনি জানান।
বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজ্জাক মোড় ও জোনাইল বাজারে গড়ে উঠেছে পানের আড়ৎ। এসব আড়তে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পান ব্যবসায়ীরা পান ক্রয় করে থাকেন। এসব পানের আড়তে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার পান কেনাবেচা হচ্ছে। এছাড়া বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক চালু হওয়ায় চাষীরা সহজেই সরাসরি রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার আব্দুল আওয়াল জানান, বড়াইগ্রাম উপজেলায় অর্থকরী ফসলের মধ্যে রসুনের পরেই পানের স্থান। অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে চাষীরা ব্যাপকহারে পান চাষের দিকে ঝুঁকছেন বলে তিনি জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।