আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কল্পনা চাকমা ও রাজার সেপাই-৩

ফ্রম দ্যা হার্ট অফ ডার্কনেস

কল্পনা চাকমা ও রাজার সেপাই-শেষপর্ব-জাকির তালুকদার রাজা এক অতিকায় প্রাণীর বেশে বসে থাকে জনপদের প্রবেশমুখে। আর জনপদের লোকজনকে তুলে নিয়ে গিলে গিলে খায়। রোজ সকালে একজন মানুষ চাই রাজার আহারের জন্য। রাজার সেপাইরা বেছে দেয়, রাজা কাকে আগে খাবে, কাকে খাবে পরে। কল্পনা জানে তারও পালা আসবে।

কিন্তু সে ভ্রুক্ষেপও করে না। তার ডায়েরির পাতাগুলো একের পর এক ভরে যায় রাজার নিষ্ঠুরতার বিবরণে। পাহাড়ীদের আত্মত্যাগের বিবরণে। সে আরও বেশি ভালবাসতে থাকে উপত্যাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বাতাসকে, বাতাসের সজীবতাকে, জলের স্বচ্ছতাকে। তার কাছে পবিত্র থেকে পবিত্রতর হয়ে ওঠে পাহাড়ের প্রতিটি ধূলিকণা, প্রতিটি বালুকণা, অন্ধকার অরণ্যের প্রতিটি শিশিরকণা, প্রতিটি মাঠ, প্রতিটি গুন্জরিত পতংগ।

সে প্রতিটি পাহাড়ি বসতিতে যায়, আর প্রত্যেককে মনে করিয়ে দেয়- আমরা এই পাহাড়ের অংশ, যেমন এই পাহাড় আমাদের অংশ। মনে করিয়ে দেয় জংলিফুলেরা- আমাদের বোন। ঝর্ণায়-নদীতে সে স্ফটিক- স্বচ্ছ জল গড়িয়ে যায় সে তো নেহায়েৎ জল নয়, আমাদের প্রপিতামহদের শরীরের স্বেদ, রক্ত। ঝিলের জলে যে অলৌকিক ছায়া পড়ে, তার প্রতিটিতে পাহাড়ি মানুষদের জীবনের স্মৃতি আর ঘটনা বিম্বিত হয়। বনের মর্মরধ্বনিতে আমরা প্রপিতামহদের ডাক শুনতে পাই।

এই বাতাস যেমন প্রথম ফুৎকারে আমাদের প্রপিতামহের ফুসফুসে দিয়েছে প্রানের স্পন্দন, তেমনি গ্রহণ করেছে তার অন্তিম শ্বাসবায়ুও। তাই এই পাহাড়, এই উপত্যকা, এই মাটি, এই ঝর্ণা-নদী চিরকাল আমাদের জন্ম-জন্মান্তরের সংগি। এখানেই চির প্রোথিত থাকবে, চিরটাকাল ঘোষিত থাকবে আমাদের প্রাণের দাবি। কোন নির্যাতনই আমাদের সেই দাবি থেকে একচুলও সরাতে পারবে না। কল্পনা চাকমার পালা আসে।

রাজার সেপাইরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। আর রাজা তাকে হাড়-মাংস-চুল-নখ সব সহ গিলে খায়। রাজা জানেনা কল্পনা প্রস্তুত হয়েই এসেছিল। নিজের সমস্ত শরীর-মনে বিষ মিশিয়ে রেখেছিল। পাহাড়ে-জংগলে প্রতিমুহূর্তে তৈরি হয় এই বিষ।

সবচেয়ে মারাত্মক। নিপীড়িত আত্মার অভিশাপ। এই বিষ তার কাজ করবেই। দেরিতে হলেও।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।