চিন্তায় আছে আইজ উদ্দিন
পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক হানাহানির ঘটনা ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরে স্বাক্ষরিত বিতর্কিত শান্তি চুক্তি উত্তর নতুন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের এক-দশমাংশ প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক প্রাচুর্যের এই জনপদ নিয়ে আন্তর্জাতিক দেনদরবার শুরু হয়েছে। ১৯৯৭ সালের চুক্তিতে উপজাতি-অউপজাতি দুই পক্ষের উপস্থিতির কথা স্বীকার করা হলেও এখন আদিবাসী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিগির উঠেছে। যাদের আদিবাসী বলা হচ্ছে তারা কয়েকশ বছর আগেই যে তাড়া খেয়ে আশপাশের রাষ্ট্র থেকে এই পাহাড়ী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন তাও বুদ্ধিজীবীরা এখন বলছেন। আবার এমন বুদ্ধিজীবীর সংখ্যাও কম নয় যারা পার্বত্য এলাকার বর্তমান উপজাতিদের ‘আদিবাসী’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
ব্রিটিশ নাগরিক লর্ড অ্যাববুরির নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক একটি কমিশনের তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সন্তু লারমার জেএসএস ও প্রণীত খীসার ইউপিডিএফ-এর ভূমিকা নিয়েও সম্প্রতি প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের নবতর পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও নিরাপত্তা মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সাথে। লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বাহিনীকেই কাজে লাগাতে হবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘পার্বত্য এলাকা ঘুরে আসার পর তার যে ধারণা হয়েছে, তাতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমেই সেখানে শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আর পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের আদিবাসী বলাই সমীচীন বলে আমি মনে করি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল ইবরাহিমের প্রশ্ন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন নামক একটি বিতর্কিত সংস্থার প্রতিনিধিগণ ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করেছেন কি-না, যদি সফর করে থাকেন তাহলে সরকারের অনুমতি ছিল কি- না? বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যাপারে তাদের এতো আগ্রহ কেন? ১৯৯৭-এর চুক্তির পর জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা সন্তু লারমার বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকেন প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ।
গত জানুয়ারি মাসেও সন্তু লারমা ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি করেন খাগড়াছড়িতে তার ওপর সশস্ত্র হামলার পর। কিন্তু রহস্যজনক ঘটনা হলো: এখন জেএসএস ও ইউপিডিএফ বাঙালিদের উচ্ছেদে একাট্টা হয়ে কাজ করছে। সেনা প্রত্যাহার হবে আত্মঘাতী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম তো বাংলাদেশের অংশ।
কাজেই সেখানে নিরাপত্তা বিধান বাংলাদেশের দায়িত্ব। সেখান থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের কোন উদ্যোগ হবে আত্মঘাতী। কোন বিদেশী কমিশনের এটি কাজ নয়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান গত মঙ্গলবার এই প্রতিবেদককে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতি ও অউপজাতিরা একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করে হানাহানি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে সরকারকেই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
তাদের আদিবাসী বলাই সমীচীন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন টিমের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরকারি বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল গত মঙ্গলবার বলেন, সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকা দরকার। আমার মনে হয় এ জন্য স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমেই উদ্যোগ নেয়া উচিত। স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি বলতে স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সামাজিক নেতৃবৃন্দকেই বুঝাচ্ছি। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আয়োজিত একটি সফরে আমি তিন পার্বত্য জেলা সফর করেছি। তাও প্রায় বছর দুয়েক হলো।
তখন স্থানীয়দের সঙ্গে বেশ আলাপ আলোচনা হয়েছে। সেখানে ভূমি সমস্যা রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারীদের ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তিতে উপজাতি বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু এখন দেশী-বিদেশী অনেকেই বলছেন, তারা আদিবাসীÑ আপনার কি মত-এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, আমার মতে, উপজাতি কথাটির চেয়ে আদিবাসী কথাটি সম্মানজনক। কাজেই তাদের আদিবাসী বলে অভিহিত করা দোষের কিছু নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে তার যথোপযুক্ত ব্যবহার করা যায়-যাতে সেখানকার অধিবাসীদের আয় উপার্জন বাড়ে।
বাঘাইরছড়ির ঘটনা হঠাৎ নয় : প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষক এবং এ বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, বাঘাইরছড়িতে ঘটনাটি হঠাৎ করে হয়নি। গত দুমাস যাবত সেখানে উত্তেজনা তিলে তিলে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। উপজাতি জনগোষ্ঠী স্থানীয় হাটবাজার বয়কট করে আসছিলেন। অতএব স্বাভাবিক প্রশ্ন উপজেলা প্রশাসন ও নিরাপত্তা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জানি না।
জেনারেল ইবরাহিম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন বা চট্টগ্রাম কমিশন বা চিটাগাং হিল ট্রাক্টস কমিশন নামক একটি বিতর্কিত সংস্থার প্রতিনিধিদল ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করেছেন কি-না এটা জানা প্রয়োজন এবং যদি সফর করে থাকেন তা হলে এ জন্যে সরকারের অনুমতি ছিল কি-না এটাও প্রশ্ন। বিতর্কিত কমিশনের বিষয়ে মেজর জেনারেল ইবরাহিম বলেন, আমি প্রশ্ন তুলছি, বাংলাদেশের একটি সমস্যা নিয়ে তাদের এতো আগ্রহ কেন? আমার জানামতে, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের বুদ্ধিজীবীগণ কর্তৃক নাগাল্যা কমিশন বা ত্রিপুরা কমিশন বা আসাম কমিশন এই ধরনের কোন প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়নি। তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কেন? সম্ভাব্য উত্তর-আমরা দুর্বল এবং পরনির্ভর বলেই। মেজর জেনারেল ইবরাহিম বলেন, বাঙালিদের সরে যেতে বাধ্য করতে উসকানি দেয়া হচ্ছে। বাঙালিদের দুরবস্থার বিষয়টি সচেতনতার সাথে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আবার দাবি উঠেছে পুরোপুরি সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের। সরকার এ বিষয়ে সরাসরি স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বলছে আংশিক সেনা প্রত্যাহারের কারণেই এমনটা ঘটেছে। জেনারেল ইবরাহিম বলেন, ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরের শান্তি চুক্তিতে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আছে বা অলিখিত মর্ম আছে যে কৌশলে বাঙালিদের পাহাড় থেকে সরিয়ে নেয়া হবে। উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দাতাগোষ্ঠী এর প্রধান ইন্ধনদাতা।
‘শান্তি আনয়নে শান্তি চুক্তির ভূমিকা : ‘আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে ও পরিস্থিতির মূল্যায়ন’ গবেষণা বিষয়ে গবেষক জেনারেল ইবরাহিম বলেন, বাঘাইরছড়ি ঘটনায় আহত সেনা সার্জেন্ট সাদা পোশাকে ছিলেন বলে ঢাকার অধিকাংশ পত্রিকা লিখেছে। কিন্তু মিলিটারি হাসপাতালে তাকে নেয়ার সময় তিনি কোন পোশাকে ছিলেন? শোনা যাচ্ছে তিনি ইউনিফর্মেই ছিলেন। তাহলে কি বাঘাইরছড়ি ঘটনা নিয়ে পরিকল্পিত অপপ্রচার চলেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।