স্বেচ্ছাচার না করা গেলে তারে স্বাধীনতা বলে না। স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারের অধিকার।
আমার ধারণা জানতেও পারেন নাই তিনি। আমিও জানতে পারতাম না। কিন্তু জাইনা ফেললাম যেই উপায়ে সেইটা বলি।
কাইলকা একটা আমন্ত্রণ পত্র পাইলাম ১১তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবের পক্ষ থিকা। তো দেখলাম, জাদুঘরে এই উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি প্রধানমন্ত্রীকে কখনো সামনাসামনি অবলোকন করি নাই। তো তাঁরে দেখতেই গেলাম।
যাওয়ার সময় 'হাতব্যাগ, ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন' নিলাম না।
নিতে মানা। সাড়ে তিনটায় ভিতরে গিয়া দেখলাম গরীব চেহারার আমন্ত্রিত অতিথিরা বইসা আছেন। গুরুত্বপূর্ণরা তখনো আসেন নাই। আর ডাকসাইটে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কর্মকর্তারা মিডিয়া থিকা আসা ক্যামেরা ম্যানদের ও আগত দর্শকদের নিয়ন্ত্রণ করতেছেন। দেইখা স্বস্তি পাইলাম।
যাক, মধ্যবিত্ত প্রাণখানি নিরাপদেই থাকবে জাদুঘরে!
অনুষ্ঠান যথারীতি হইল। মানে পাশে বসা পিএম কাভার করা মিডিয়া কর্মীর কাছে জানতে পাইলাম সকালেও নাকি কোথায় একই রকম হইছে। বক্তব্যেও মিল ছিল। উনি এইটাও বললেন দেইখেন 'ডিজিটাল' বলবে! আর বললেন, এখন নাকি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানগুলাতে ছায়ানটের ছায়াসঙ্গীত থাকে। তা থাকতেই পারে।
হাসিনা তো আর খালেদা জিয়া না যে ছায়ানট সরকারী কাজে লেজুরবৃত্তি করবে না। তো সব মিলল ঠিক মতো।
আরো কিছু চাহিদা ও প্রেরণার ব্যাপার ঘটলো। তো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিসমাপণান্তে ইয়াসমীন কবিরের 'শেষকৃত্য' বা 'দি লাস্ট রাইটস' শর্ট ফিল্ম দেখানো হইল। পুরাতন জাহাজ ভাঙ্গাঁ (ভাঙার এমন বানানই আছে ওইখানে) বিষয়ে মানবিক অর্থাৎ অরাজনৈতিক দুঃখের ছবি।
আমার ভালো লাগল না।
তো ছবি শেষ হইলে ভাবলাম, ভাগি। ভাগার প্রাক্কালে ঘোষণা হইল প্রধানমন্ত্রী এখন বেরুবেন। এই সময়ে যাতে অভ্যাগতরা যার যার সিটে বইসা থাকেন। তো বসলাম।
কিন্তু দেখি প্রধানমন্ত্রী আর যান না... তো দেখি একটু পরে তারেক মাসুদ আর ক্যাথরিন মাসুদের ছবি 'নরসুন্দর' দেখাইবে। প্রধানমন্ত্রী দেখলাম উঠলেন না, নতুন কোনো ঘোষণাও হইল না। আমি দ্বিধায় জড়িত পদে, কম্পিত বক্ষে দরজার দিকে আগাইলাম। এবং যেহেতু প্রধানমন্ত্রী এখনই উঠছেন না সুতরাং আমারে নিরাপত্তারা বেরুইতে দিলেন। অনেক নিরাপত্তা রক্ষীর দেখা মিলল।
মজা দেখলাম গেটের বাইরে আইসা। অনেক লোক। ভিড়। শ্লোগানও দিতেছে দলীয়রা। কিন্তু এর বাইরে চারিদিকে সুনশান।
সকল যানযাহন ইঞ্জিন বন্ধ কইরা মৃতদেহ হইয়া আছে, শাহবাগের চারদিকে... দূরে আরো দূরে সব নিস্তব্ধ। । ওদের আশা প্রধানমন্ত্রী চলমান হইলে... চলিয়া গেলে ওরাও যাইতে পারবে। হাঃ হাঃ। পাঠক আপনেরাও কম পক্ষে ১৫ মিনিট হাইসা নিতে পারেন।
কারণ প্রধানমন্ত্রী তখনও 'নরসুন্দর' দেখতেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বোধহয় বাইরের ট্রাফিক সার্জেন্টদের কোনো নির্দেশ দিতে পারেন নাই যে কতক্ষণ লাগতে পারে! কারণ তারা নিশ্চয়ই 'নরসুন্দর' দেখেন নাই। (তবে দেখলেই যে মনে থাকবে এমনও না। আমি পাবলিক লাইব্রেরিতে আগে দেখছিলাম। এখন ইন্টারনেট ঘাইটা দেখলাম ১৫ মিনিটের ছবি।
ভুইলা গেছিলাম। ) জাদুঘর থিকা বাইর হইয়া শাহবাগ আজিজ মার্কেটে একটা চক্কর দিয়া হাইটা কাঁটাবনের দিকে আসবার কালেও দেখলাম মার্কেটের সামনে যেই গাড়ি সেই জায়গায়। ঢাকা শহরে যে কত গাড়ি! থাইমা থাকে।
কিন্তু যাত্রী সাধারণ কি জানত 'নরসুন্দর' কত মিনিটের ছবি! বাংলা মোটর থিকা শাহবাগে আসা, কাটাবন থিকা শাহবাগে আসা, বিশ্ববিদ্যালয় থিকা শাহবাগে আসা, পল্টন থিকা শাহবাগে আসা ও কোথাও যাইতে না থাকা ঐ অ-দর্শকগুলা কেমনে জানব, অরা কি আর্ট-কালচার করছে জীবনে! একটা শর্ট ফিল্ম দেখার সময়ও যাদের নাই সেই অভিশপ্ত নগরবাসীদের জন্য ১৫ মিনিট জামে আটকাইয়া থাকাটা খারাপ কী? (অবশ্য আমি বাইর হওনের আগে আরো কত মিনিট তারা আটকাইয়া ছিল তা আমি জানি না। ) আর ঐ ১৫ মিনিটের জন্য ঐ চৌরাস্তাটাও তো একটা শর্টফিল্মই, নাকি।
অন্তত শর্টফিল্ম শেষে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর ফাঁকা রাস্তা দিয়া সাইরেন বাজাইয়া কি না বাজাইয়া যখন দৌড়াইতে দৌড়াইতে আগায় যাইতেছিল তিনি নিশ্চয়ই জানতেও পারেন নাই কত লোকের কত কর্মঘণ্টা তিনি বা তার নিরাপত্তাঅলারা নষ্ট করলেন বা গাড়িতে সিদ্ধ হইতে থাকা আলুরা এসিতে বইসা থাকা মন্ত্রী, উপমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী আর নিরাপত্তাতন্ত্রীদের কী কী অভিশাপ সরবে ও নিরবে দিতেছিল!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।