দোয়েলের বাসাটি প্রথম সজলই আবিস্কার করে। চুপি চুপি আমাকে এসে বলে,'চারটে বাচ্ছা,এখনো চোখ ফোটে নাই। ' আমি মহা উৎসাহে বলি,'চল। '
চারপাশে মূর্তা গাছগুলো বাতাসে হিলহিল করছে। আমরা এগুলো দু'হাতে সরাতে সরাতে পথ বের করে ফেলি।
আমাদের পায়ের শব্দে ইতিউতি ঘোরাফেরা করা কিছু নেউল,টুনটুনি,কাদা খোঁচা ও কয়েকটি লেজঝোলা ত্রস্তে পালায়। আমরা এসব ভ্রূক্ষেপ করিনা। আমাদের দু'চোখে উল্লাস ও উত্তেজনা। অনেক দিন থেকেই দোয়েলের বাচ্চা পোষার শখ আমাদের। সজলকে খোঁজ নিতে বলেছিলাম।
জানতাম ও বের করে ফেলবে একদিন। অবশেষে ধারণাটি সত্য হলো। দোয়েলের বাচ্চার খোঁজ নিয়ে এলো সজল।
একটি হলদে পাখি সাঁ করে উড়ে গেল মাথার উপর দিয়ে। সম্ভবত ডিমে তা দিচ্ছিল।
তার ডানার ঝাপটানিতে কদম গাছের দুটো পাতা ঝরে পড়লো বাতাসে। কিচ কিচ শব্দে সামনের পানা পুকুর থেকে উড়ে গেল মাছরাঙা। অবশেষে আমরা পানা পুকুরের দক্ষিণ পারের কোণায় অবস্থিত ডেউয়া গাছটির তলায় এসে দাঁড়ালাম। সজল ফিসফিসিয়ে বললো,'এটারই কোটরে বাসা। '
আমি লুঙ্গি মালকোচা মেরে প্রস্তুতি নিতেই সজল বললো,'সাবধানে উঠিস ভাইয়া,সাপ থাকতে পারে।
'
আমি নির্বিকার হেসে বললাম,'দূর সাপ-টাপ কিচ্ছুনা। এতো ভয় পেলে চলে!'
সজল তবু নার্ভাস হেসে বললো,'তবু সাবধানে থাকিস!"
আমি ওর দিকে তাকিয়ে নিরবে হাসলাম। লক্ষ করলাম ওর চোখে মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ। আমরা একটি দড়ির বেড়ি নিয়ে এসেছিলাম। সেটি পায়ে লাগিয়ে আমি কয়েক লাফে কোটরটির কাছে পৌঁছে গেলাম।
সাবধানে উঁকি দিয়ে দেখলাম ঠিকই চারটি বাচ্চা পরস্পরের গা ঘেঁষে শুয়ে আছে। ওরা শব্দ পেয়ে চিঁচিঁ করে উঠলো। লক্ষ করলাম ইতোমধ্যেই বাচ্চাগুলোর চোখ ফুটেছে। আমি হাত বাড়িয়ে একটি বাচ্চা কোচড়ে ঢুকিয়ে দিলাম। অমনি মা ও বাবা দোয়েল দুটি কোথা থেকে ছুটে এলো।
ওরা চেঁচাতে চেঁচাতে মাথার উপর চক্কর দিতে থাকলো। আমি তবু নির্বিকারভাবে একে একে চারটি বাচ্চাই কোচড়ে ভরে দ্রুতবেগে গাছ থেকে নেমে এলাম। সজল হাসিমুখে বললো,'যাক ভালোয় ভালোয় নিয়ে আসতে পারলি। '
মা ও বাবা পাখি দুটি চেঁচিয়েই যাচ্ছে। আমরা মহা উল্লাসে পাখিগুলো নিয়ে ফিরতে থাকি।
চারদিকে সুনসান দুপুর। একটা ঘুঘু অনবরত ডেকে যাচ্ছে। কোথায় কোন গাছের চুড়োয় কে জানে। পানা পুকুরে ঢুপ করে ঘাই মারে কোনো মাছ। পশ্চিম কোণে ভেজা গায়ে মাছ মুখে লাফিয়ে ওঠে একটি ভোঁদড়।
[চলবে]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।