আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা

বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী জাতীয় কবির ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে মঙ্গলবার। বঙ্গাব্দ ১৩৮৩ ’র ১২ই ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ অগাস্ট) ঢাকায় মারা যান বিদ্রোহ ও সুন্দরের পূজারী নজরুল।
মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয় কবিকে স্মরণে ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে। বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমি ও নজরুল ইনস্টিটিউট পৃথক কর্মসূচি নিয়েছে।
কবির পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনসহ সাধারণ মানুষ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

 
সকালে কবি পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবির নাতনী খিলখিল কাজী। তিনি সবাইকে কবির আদর্শ ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলার আহ্বান জানান।
সরকারের পক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমিন্ত্রী শামসুল হক টুকু জাতীয় কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দীপু মনি বলেন, “বর্তমানে নারীর অধিকার ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় যেসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে, কবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সূচনা করেছিলেন। বর্তমান সরকারও তা অব্যাহত রেখেছে।


যত বাধা বিপত্তি আসুক, তা মোকাবেলা করে কবির দেখানো পথে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, “দেশের এই সঙ্কটময় সময়ে নজরুলের জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে রাজনীতিতে তার আদর্শের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। ”
বিএনপির পক্ষে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।
তিনি বলেন, “মানবতা ও সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। তার জীবনী ও আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানের সংঘাতময় পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে।


 
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমী, নজরুল ইনস্টিটিউট, আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্র, উদীচী, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বিভাগ এবং বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সর্বস্তরের মানুষের ফুলে ফুলে ভরে ওঠে কবির সমাধি।   
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম।
মাত্র ২২ বছরের সাহিত্যজীবনে অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও নাটক রচনার পাশাপাশি বেশ কিছু পত্রিকা সম্পাদনা করেন তিনি। এই বৈচিত্র্যপিয়াসী কবি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন।


১৯২২ সালে নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশিত হওয়ার পর তার অগ্নিগর্ভ কবিতার বজ্রনির্ঘোষে ব্রিটিশ রাজের ভিত কেঁপে ওঠে। ব্রিটিশবিরোধী লেখার জন্য বেশ কয়েকবার কারারুদ্ধও হতে হয় তাকে।
ভারতবর্ষের রাজনৈতিক মুক্তির অন্যতম শর্ত যে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য সে কথা সে সময় তার মতো করে আর কেউ বলেননি। আজীবন তার সাহিত্য সাধনায় ও জীবনাচরণে সেই ঐক্যের সাধনা করে গেছেন কবি।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বজনীন মুক্তি ও মানবতার কবি নজরুল সাহিত্যকে নিয়ে গেছেন সাধারণ মানুষের কাছে।

বাংলা গানে সুরের যে বৈচিত্র্য তিনি রচনা করেছেন তা অতুলনীয়।
কবির জীবনাচরণ ছিলো অনিয়ন্ত্রিত। সেই সঙ্গে ছিল দারিদ্র্যের কষাঘাত। ফলে চল্লিশের দশকের শুরু থেকে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হন বিদ্রোহী কবি। এক পর্যায়ে বাকশক্তি হারান; বন্ধ হয়ে যায় তার লেখনী।

সে সময় নজরুল ছিলেন কলকাতায়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে অসুস্থ কবি ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। এর কিছুদিন পর তাকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়।
বাংলা সাহিত্যে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে তাকে সম্মানসূচক ‘ডি লিট’ ডিগ্রি দেয়।
১৯৭৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় নজরুলকে।

সে বছরই ২৯ অগাস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মানবতা ও বিদ্রোহের কবি।  
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবিকে সমাহিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উত্তর পাশে, যেখানে এখন গড়ে উঠেছে নজরুল কমপ্লেক্স।  

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.