একবার, বিনয় বলল- সমস্ত মাঠকেই আমি আমার করেছি। তাই, আমি হাঁটছি তো আমি আমার মধ্যেই হাঁটছি আর আমি মাঠ হয়ে যাচ্ছি। আমার মধ্যে দুলে উঠছে রাশি রাশি ধানক্ষেত, ফুলে উঠছে ভারাভারা সম্ভাবনা আর ছুটে যাচ্ছে রেললাইন, ঝাঁকঝাঁক বাবুই আর আমার ওপরে মেঘ, খ্যামটা দিয়ে দিয়ে পালাচ্ছে
অন্যবার বিনয় বলল- সমস্ত কবিতাই আমি আমার করেছি। সুতরাং, আমি পড়ছি তো সব আমার কবিতাই পড়ছি। যদিও, একটি কবিতা নির্জন দাশের, একটি কবিতা ঝরাপাতাদের, একটি কবিতা কেবল মাঠের, মাঠও আমার। আহা, একটি কবিতা আরেকটি কবিতায় যেতে গিয়ে, বুকের মধ্যে শাঁখ বাজাচ্ছে শিমুলপুরের ঝিঁঝিঁ; অবশ্য কেউ কেউ এসে বলছে- ধুধু চক্রবর্তী কাল কোলকাতায় এসেছিলেন, আজ প্যারিস যাবেন, পরশু থাকবেন নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায়, শ্যামলীতে!
সবিনয়ে বিনয় বলল- আর কত ঘুরবে তুমি চাকা? এবার কিছু ক্লান্ত হও, ক্লান্তজ্ঞানে দেখে যাও আমি ক্লান্ত মজুমদার, ঠাকুরনগর থাকি, আমাকে রোজ কাকতাড়ুয়া গল্প শুনিয়ে যায়; কাল ঝিঙেফুল ডেকে শুধোল, দাদা, শরীর ভালো? আমাকে নিয়ে ছোটকাগজ সংখ্যা বের করে, আমি গণিতেও ছিলাম শূন্য...
জ্যোতিষী বিনয় বলল- আমার মাঠের মধ্যে, আমি আর খুব বেশিদিন থাকতে পারব না। ধানক্ষেত ছেড়ে, রেললাইন রেখে, মেঘফুল কুড়োতে কুড়োতে আমি আর ফিরব না আমার ক্লান্তির কাছে। ভাঙাসেতু খালপাড়ে, অমলের টি-স্টলে, সন্ধ্যেপাড়ার রহস্যগন্ধে, আজ তোমাদের বলছি, শোনো- যদি সেই শুকিয়ে যাওয়া নদীটিকে মনে রাখো, তো আমাকেও মনে রেখো...
বাল্যমুখর আমার বন্ধু বিনয়- শেষপর্যন্ত কি বলতে চাইল- দেশকাল পেরিয়ে এসে দেখে যাও এই বুড়ো বয়সেও পিচ্চিদের মতো মেঘফুল কুড়োতে গিয়ে, আমি একদম কীরকম বৃষ্টি বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছি...
(২০০২ তে লেখা, বিনয় মজুমদার তখনৌ জীবিত ছিলেন...)
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।