আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্ষার আগেই পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের ভেতরে সবচেয়ে উঁচু এলাকা দনিয়া ইউনিয়ন। গত বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে সেখানে প্রায় তিন ফুট পানি জমেছিল। আর মৃধাবাড়িসহ ভেতরের প্রায় সব এলাকায় ছিল কোমরের ওপর পানি। গত তিন দিনে কিছু পানি নামলেও বাঁধের ভেতরে লাখ লাখ মানুষ এক রকম পানিবন্দী দশাতেই রয়েছে। বর্ষার মৌসুম শুরুর আগেই এই পরিস্থিতিতে পড়েছে সেখানকার বাসিন্দারা।


ময়লা পানিতে এক রকম বন্দী মৃধাবাড়ির ৭০ বছরের বৃদ্ধ আবদুল জব্বারের পরিবার। তিনি বলেন, রাজধানীর কোথাও জলাবদ্ধতা না হলেও ডিএনডি বাঁধের ভেতরে হবেই। তাঁর মতো অনেকেই এই পরিস্থিতিকে ‘নিয়তি’ বলে মেনে নিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অতিরিক্ত মহাপরিচালক সুনীল বরণ দেবরায় প্রথম আলোকে বলেন, ডিএনডি বাঁধের পানি নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে বোর্ডের কয়েকটি দল। কিন্তু খাল ও নর্দমা ভরাট এবং অতিরিক্ত ঘরবাড়ির জন্য পুরো কাজে সমস্যা হচ্ছে।

আরও বৃষ্টি না হলে পানি সরতে চার দিনের মতো লাগতে পারে।
পাউবো সূত্র বলছে, গত শতকের ৬০-এর দশকে নারায়ণগঞ্জের দুটি ইউনিয়নসহ ঢাকা ও শহরতলির আট হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে সেচের জন্য ডিএনডি বাঁধ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। সেখানে ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ খালও খনন করা হয়। সরকার পাঁচ হাজার ৬৬ হেক্টর কৃষিজমিও অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩০০ হেক্টরে।

ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা ছাড়াও সরকারি জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় কৃষিজমির পরিমাণ কমেছে।
গতকাল শনিবার ডিএনডি বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম প্রায় সব খালের অংশ ভরাট হয়েছে। কিছু অংশ দখল করে তৈরি করা হয়েছে বসতবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে এসব খাল দিয়ে পানি দ্রুত নামতে পারে না।
পাউবো সূত্র বলছে, ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ডিএনডি বাঁধের ভেতরের পানি সরাতে রয়েছে শিমরাইলে একটি পাম্প স্টেশন।

এর মধ্যে প্রতি সেকেন্ডে ১২৮ কিউসেক পানিনিষ্কাশন ক্ষমতার চারটি এবং পাঁচ কিউসেক ক্ষমতার ২৫টি পাম্প রয়েছে। কিন্তু এগুলো দিয়ে পুরোপুরি পানিনিষ্কাশন সম্ভব হয় না।
পাউবোর অভিযোগ, আন্তসংস্থার একাধিক সভায় বাঁধের ভেতরের খালগুলোর কঠিন বর্জ্য কেটে পরিষ্কারের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) এবং সেগুলো সচল রাখার জন্য ঢাকা ওয়াসাকে বলা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো কাজ করেনি। তবে ওয়াসা লোকবলের অভাবের কারণে তা করতে পারেনি বলে পাউবোকে লিখিতভাবে জানিয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুনর্বাসন ও উন্নয়ন) এ কে এম সহিদউদ্দিন বলেন, শ্যামপুর শ্মশানঘাটের কাছে ১০টি পাম্প বসানো হচ্ছে।

এ ছাড়া বৃষ্টির পর স্লুইসগেটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান জাভেদ ইকবাল সম্প্রতি কাজে যোগ দিয়েছেন। লোকবলের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান। ওই বিভাগের সদ্য বিদায়ী প্রধান এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে ডিসিসির সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছিল। তারা এখনো প্রতিবেদন দেয়নি।


খাল-জলাভূমি ভরাট, দখল: গতকাল দেখা গেছে, দোকানপাট ছাড়াও পাকা দোতলাবাড়ি এমনকি হোটেল পর্যন্ত গড়ে উঠেছে পূর্ব ধোলাইখালের বিভিন্ন অংশে। যদিও বছর দুয়েক আগে সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিল।
গোদনাইল থেকে মৃধাবাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটিও ভরাট এবং কোথাও কোথাও আগের তুলনায় আরও বেশি জায়গা দখল হয়ে গেছে। শ্যামপুর, তিতাস খালসহ কয়েকটি খালের বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে জলাবদ্ধ লোকালয়ে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, যাত্রাবাড়ী থেকে মৃধাবাড়ি পর্যন্ত জলাভূমি আগে বৃষ্টির পানি ধরে রাখত।

সেগুলো ভরাট করে স্থাপন করা হয়েছে সিএনজি স্টেশন। জানা যায়, ২০০৩ সালে জোট সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ডিএনডি বাঁধের ভেতরে ১৫টি সিএনজি স্টেশন করার জায়গা বরাদ্দ দেয়।
ভোগান্তির শেষ নেই: গতকাল সকালে মৃধাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়েছিলেন কাজিরগাঁও মোল্লাবাড়ির বাসিন্দা জাহেদুল হক। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন তিনি। বললেন, এত বেশি পানি জমেছিল যে গত দুদিন বাসা থেকে বেরোতে পারেননি।

এলাকায় রিকশা, অটোরিকশা কিছুই চলাচল করছে না।
শেখদিতে ডিঙি নৌকা ও ভ্যানে চলাচল করছে লোকজন। দিনমজুর আবদুল কাদির থাকেন সারুলিয়ার একটি বস্তিতে। তিনি জানান, ঘরের ভেতরে চৌকির খুঁটিতে তিনটি করে ইট দেওয়ার পরও পানিতে ডুবে গেছে। গত দুরাত তাঁরা এক রকম পানিতেই বসেছিলেন।

আতঙ্কে ছিলেন, সাপসহ পোকামাকড় না ঢুকে পড়ে।
মোগলপাড়ার গৃহিণী আকলিমা বেগম জানান, গত কয়েক বছর বর্ষা মৌসুমে কালো বিষাক্ত আর বর্জ্যভর্তি পানিতে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছিল তাঁদের। এবারও হয়তো আরও বড় দুর্ভোগ কপালে আছে।
পূর্ব ধোলাইপাড় থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত অনেক স্থানে এখনো পানি। ধোলাইপাড় কাঁচাবাজারে গত দুদিন পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে মাছ ও সবজি বেচাকেনা হয়েছে বলে জানালেন বিক্রেতারা।


বাঁধের ভেতরের সারুলিয়া, ডগাইর, দেইলা, গোবিন্দপুর, রসুলপুর, দৌলতপুর, মুন্সিবাগ, আদর্শনগর, কান্দাপাড়া, সাহেবপাড়া, সানারপাড়, বাগমারা, মৌচাক, কুতুবাইল, নয়ামাটি, চানমারী, শহীদনগরসহ আশপাশের এলাকায় এখনো পানি আটকে আছে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।