বাক স্বাধীনতা মানে সত্য বলার অধিকার।
স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো
সরকারকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি
আগামী নির্বাচনে আগে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো না পেলে সরকারকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক জনতা, সোনালী, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দেয়া এক চিঠিতে এই হুমকি দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো না দেয়া হলে আগামী নির্বাচনে সরকারের ভরাডুবি হবে। কারণ ভোটের আগে প্রার্থীরা অনেক কথা বলে কিন্তু ভোট পেলেই তা আর মনে রাখে না।
আগামী নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন দিলে সরকারের সুনাম অক্ষুণ্ন থাকবে। আর যদি তা বাস্তবায়ন না করা হয় তাহলে সেটা সরকারের জন্য ভালো হবে না।
অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনি যদি সব মন্ত্রীদের দিকে নজর রাখেন তাহলে দেখতে পাবেন তাদের কি পরিমাণ টাকা আছে। প্রত্যেক মন্ত্রীর স্ত্রীই মনে হয় যেন একজন মন্ত্রী। ’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টির (স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো) দিকে নজর দেবেন।
তিনি নিজেই বলেছিলেন আমি জনগণের সঙ্গে আছি। সবাই প্রধানমন্ত্রীর এই কথার বাস্তবায়ন চায়।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদ্যবিদায়ী সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারির কঠোর সমালোচনা করে চিঠিতে বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন চোর। ব্যাংকের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে সুবিধা নিয়ে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে ঘুষ নেয়ার অভিযোগও করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের সরকারি ব্যাংকগুলোর উপর কড়া নজরদারি থাকলেও বেসরকারি ব্যাংকের দিকে কোনো খেয়াল নেই। তারা বেসরকারি ব্যাংকের কাছ থেকে উপঢৌকন পেয়ে থাকেন। তাই এসব ব্যাংককে কিছু বলেন না। একই দেশে সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি একই হওয়া উচিত।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে বেতন কম পাওয়ার জন্য আমাদের অধিকাংশ কর্মকর্তারা ব্যাংক ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লোকশূন্য হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে নিয়োগ দিতে দীর্ঘ সময় লাগে। ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সরকারের বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে। সরকারি ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়ে থাকে। অথচ বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে না।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য কোনো প্রকার বাজেট করতে হয় না। বরং তারাই উৎস কর ছাড়া আবগারী শুল্ক আদায় করে দেয়, যা দিয়ে সরকার বেতন ভাতা দিয়ে থাকেন। এসব কাজের কোনোটাই বেসরকারি ব্যাংক করে না। অথচ তাদের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয় কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো খবরদারি নেই।
সরকারকে পরামর্শ দিয়ে তাঁরা বলেন, স্বল্প আয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জীবনের প্রতি একটি নজর দিন।
জিনিসপত্র ও বাড়িভাড়া যেভাবে বাড়ছে তাতে আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর হচ্ছে। সবাই মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাড়িভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কারণ সরকারের মন্ত্রীদের তো বাড়ি ভাড়া দিতে হয় না। সিটি করপোরেশন থেকে প্রতি বর্গফুট ভাড়া স্থির করে দেয়া দরকার।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে ব্যাংকের দু’টি প্রেক্ষাপট। একটি হলো সরকারি ব্যাংক অন্যটি বেসরকারি ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকের বেতন কাঠামো আছে কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকের বেতম কাঠামো নেই। ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে নামে মাত্র লিমিটেড করে দেয়া হয়েছে। লিমিটেড করার সুফল এখন পর্যন্ত কেউ পায়নি।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কি অন্যায় করেছে তারা বেসরকারি ব্যাংকের মতো বেতন পাবে না।
বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেশি কাজ করে। তাদের মতো বেশি বেতন পেলে সারা রাতও ব্যাংকে থাকতে রাজি আছে। বেসরকারি ব্যাংকের যদি বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে বেতন কাঠামো পরিবর্তন করতে পারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে কেন সেই ক্ষমতা দেয়া হয় না।
চিঠিতে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকেও বিষেদাগার করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, বেসরকারি ব্যাংকের অধিকাংশ কর্মকর্তাই হলো পূর্বে সরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিল। তারা সরকারি ব্যাংকের বেশি টাকা বেতন পেতো না বলেই বেসরকারি ব্যাংকের যোগদান করেছে। বিশ্বের সব দেশে ব্যাংকারদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো আছে এবং তাদের বেতন সরকারি কর্মকর্তাদের চেয়েও বেশি। আপনি (অর্থমন্ত্রী) বলেছিলেন, ২০১১-১২ অর্থবছরের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ঘোষণা করবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো সুরাহা হয় নাই।
সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর সমালোচনা করা হলেও চিঠিতে অর্থমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অর্থমন্ত্রী শতভাগ ভালো মানুষ। তাছাড়া এবারকার বাজেট খুব ভালো হয়েছে যার পুরোটা সাফল্য তার। অর্থনৈতিক বিষয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিতের জ্ঞান অপরিসীম। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো করে দিলে সবাই তাকে আজীবন স্মরণ করবে।
এসব বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সূত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।