আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাগরিক প্রেসনোট-৩: এগুলোকে এডাল্ট নিউজ হিসেবে ট্যাগ লাগালে একটি বাজারী সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে

munirshamim@gmail.com

ভাল হয়, প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতা না উল্টাতে পারলে। ভাল হয় যদি চলার পথে রেডিও না বাজে। বাজলেও তাতে যদি প্রতি ঘন্টার সংবাদ না থাকে। বাসার টেলিভিশনটাকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে পারলে আরও ভাল হয়। বাচ্ছাকাচ্ছা আর বিচ্ছুদের চাপে পড়ে অথবা বয়:বৃদ্ধদের আগ্রহের কারণে যদি সেটি করা না যায় তাহলে উচিত হবে সংবাদ-টকশো জাতীয় বিষয়গুলো বয়কট করা।

শতভাগ বুঁদ হয়ে থাকা হিন্দী-ইংরেজি সিরিয়ালে। আমার সংস্কৃতি-নিজস্বতা-জীবনবোধ গোল্লায় যাক। আমি মুক্তি চাই। দু:সংবাদ থেকে। খারাপ খবর থেকে।

এখন এ রাষ্ট্রে দু:সংবাদ-খারাপ খবর থেকে মুক্তির একটিই পথ। সব কিছু বন্ধ করে থাকা। চোখ-কান এমকি নাসিকাও। চোখ কান বন্ধ দেখে দু:সংবাদের ভয়ানক ঘ্রান যেন নাকে ঢুকে পৌছাতে না পারে। কোন ভাবেই যেন স্পর্শ না করতে পারে আমার শরীর-মন-অস্তিত্ব।

ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে নিজ ঘরেই নিজের নির্বাসন দিতে পারলে সব চেয়ে ভাল হয়। যে দেশটা কয়েক দশক ধরে গণতান্ত্রিক লেবাসে অদৃশ্য কয়েদখানায় পরিণত হয়েছে, আর এক একজন নাগরিককে তৈরি করছে যাবজ্জীবনের বন্দী হিসেবে, সে দেশে নিজের জন্য নিজের ঘরে একটা ছোট্র কয়েদখানা তৈরি করলে এমন ক্ষতি কি!। বরং একটা আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলা যাবে। বলা যাবে, এ রাষ্ট্র আমাকে স্বেচ্ছা নির্বাসনের স্বাধীনতা দিয়েছে। আমি স্বাধীন আমার নিজের জেলখানায়।

আমি কৃতজ্ঞ আমার রাষ্ট্রের কাছে। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের দুই সাধারণ সম্পাদক যতসব অসাধারণ বক্তৃতা-বিবৃতি প্রসবের কাজ সম্পাদন করেন। প্রায় প্রতিদিন। তাদের এ নিরবিচ্ছিন্ন প্রসব বেদনার ছাপ পড়ে সকালের সংবাদপত্রে। রেডিও, টিভিতে, অন্যান্য গনমাধ্যমে।

দিনের পর দিন। মাসের পর মাস। বছরের পর বছর। দশকের পর দশক। নাগরিক কাক-ডাকা ভোরে ঘুম থেকে জেগেই সংবাদপত্রের পাতায় সেসব দেখে আমার কেবল অর্থ অপচয়ের কথা মনে পড়ে।

প্রতিদিনের সংবাদপত্র মানে এখন একজন খেটে খাওয়া নাগরিকের কমপক্ষে আট টাকার গচ্ছা। ফাও হিসেবে পাওয়া যায় অতিরিক্ত টেনশন-উচ্চ রক্তচাপ, আরও কতকি, যতসব দূরারোগ্য জটিল রোগের সম্ভাবনা। বিচিত্র দু:সংবাদের জামা পরা পত্রিকা আমাদের শিশুদের হাতে গেলে বিপ্রতীপ সামাজিকায়নের ভয় আমাদের আপাদমস্তকে ছড়িয়ে পড়ে। আর হৃদয়ের গভীরতা দিয়ে আমরা যে শিশুদের বর্ণমালা শেখাই, প্রতিদিন, একটু একটু করে, আমাদের প্রাণের ভাষা-বাংলা বর্ণমালা, সে বাংলা বর্ণমালার সাথে সদ্য সখ্যতার ওপর ভর করে যখন আমাদের শিশুরা বানান করে করে সেসব দু’একটি সংবাদ শিরোনাম হঠাৎ পড়ে ফেলে, আমাদের কাছে অর্থ জানতে চায়, তখন প্রিয় শিশুর এ প্রাগ্রসর অতিক্রম দেখে আমাদের উৎফুল্ল হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা উৎফুল্ল হতে পারি না।

বরং ভয়ে কুঁচকে যাই। না শোনার, না দেখার ভান করি। তারপরও 'বলনা, বলনা' বলে নাছোড় বান্দার মতো শিশুরা যখন বায়না ধরে, আমাদের বাধ্য করে, তখন শিশুটিকে ভুল অর্থ বলা ছাড়া উপায় থাকে না। সংসদ অধিবেশনে মাননীয় সাংসদদের পারস্পরিক কাঁদাছোড়াছুড়ি, ফাইল ছোড়াছুড়ি আর পরস্পরককে বাক্যবান করার প্রক্রিয়ায় শব্দচয়ন দেখলে আমার বারবার মনে হয়, এ সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশনের আগে একটা ট্যাগ লাগানো উচিত। বলা উচিত, এখন প্রচারিত হবে এডাল্ট নিউজ মানে-প্রাপ্তবয়স্কদের সংবাদ।

ক্ষতি কি, এডাল্ড মুভি যদি থাকতে পারে, এডাল্ড নিউজও থাকতে পারে। তাতে অন্তত কোন মা-বাবা-অভিভাবক বলতে পারবে না যে, আমাদের নেতা-নেত্রীদের কাছ থেকে আমাদের শিশুরা খারাপ ভাষা শিখছে। গালিগালাজ শিখছে। ট্যাগ লাগানো নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি বাজারী আকর্ষণ চিরকালের। তখন এডাল্ড মুভির মতো আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা-বিবৃতিসম্পন্ন এডাল্ড নিউজ এরও কাটতি বাড়বে।

রমরমা ব্যবসা হবে। ট্রিক্যোল ডাইন এপ্রোচ বা চুঁইয়ে পড়া অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী রমরমা এডাল্ট নিজউ ব্যবসার সুফল হয়তো তখন দরিদ্র মানুষের গায়ে গিয়েও লাগবে। সব সম্ভবনার দেশে কোন সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেয়া যায় না।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.