অকাট মূর্খ যাকে বলে আমি তাই। সুতরাং জ্ঞানীরা বেশি জ্ঞান দিলে আমি চাইয়া চাইয়া দেখা ছাড়া কিচ্ছু করতে পারিনা। পোড়া কপাল!!
বনানী রেলওয়ে টিকেট কাউন্টার।
দুপুর ২.০০ ঘটিকা।
তারিখ মনে নাই।
টিকেটের লাইনে দাঁড়িয়েছি। পিঁপড়ার গতিতে লাইন এগুচ্ছে। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমার তিনজন সামনে একটা ছেলে। ছ'ফুটের বেশি লম্বা। নীল জিন্স এবং কালো টি-শার্ট পরা।
গায়ের সাদা চামরা এবং চেহারার গঠন দেখে বুঝলাম ছেলেটা বিদেশি।
ছেলেটা লাইনে দাঁড়িয়ে কমলা খাচ্ছিল। প্যান্টের দু'পকেটে দুটা কমলা এবং আরেকটা সে খাচ্ছে। এত খিছু খেয়াল করার অবশ্য কারন ছিল। দেখলাম ছেলেটা কমলা খাচ্ছে কিন্তু কমলার খোসা বা বিচি কোনটাই নিচে ফেলছেনা, হাতে রাখছে।
কমলাটা খেয়ে যখন শেষ করল তখন দেখলাম ছেলেটা ইতি-উতি তাকাচ্ছে। ইতিমধ্যে সে কাউন্টারে পৌঁছিয়ে গেল। দুঃখের বিষয় ছেলেটা তার কাঙ্খিত টিকেট পেলনা। তখনও ছেলেটার হাতে কমলার খোসা এবং বিচি।
এর মধ্যেই খেয়াল করলাম একটা লোক বসে বসে পটেটো চিপস খাচ্ছিল।
খেয়ে প্যাকেটটা কাউন্টারের ভিতরই ফেলে দিল। তা দেখে ছেলেটা ওই লোকটার দিকে খুব করুন দৃষ্টি নিয়ে তাকালো!
এরপর ছেলেটা পুরো কাউন্টারের এদিক সেদিক ঘুরল। কিন্তু কোথাও পেলনা তার কমলার খোসা ফেলার জন্য একটা ডাস্টবিন। পেলনা তাও সে ওগুলো বাইরে ফেললনা। চারপাশে এতকিছু ফেলা তাও সে ওগুলো ফেললইনা।
সে সেগুলোকে হাত থেকে তার ব্যাগের পকেটে রেখে কাউন্টার ছেড়ে চলে গেল। হয়তো কোথাও ডাস্টবিন পেলে ফেলবে।
ছেলেটা এত লম্বা চওড়া হলেও চেহারা দেখে দিব্যি বোঝা যায় এর বয়স কিছুতেই ২৫ এর বেশি না। মনে মনে ভাবলাম আমারও তো এরকমই বয়স। অথচ ওই ছেলের মধ্যে যতটুকু সচেতনতা তার সিকেভাগও কি আছে আমার মধ্যে বা আমাদের মধ্যে।
নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন করে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই ধনাত্মক কোন উত্তর পেলামনা।
এটা সামান্য একটা ঘটনা হলেও আমার কাছে অসামান্য মনে হয়েছিল। আমরা এমন একটা দেশে বাস করি যে দেশে একজন বিদেশি ময়লা ফেলার জন্যে ডাস্টবিন খুজে পায়না। তারপরেও সে বিদেশি হয়েও, আমাদেরকে নির্দ্ধিধায় রাস্তায় বা এখানে সেখানে ময়লা ফেলতে দেখেও নিজে ফেলেনা।
আমার টিকেট কেনা শেষ হলে ছেলেটাকে খুঁজলাম চারপাশে।
পেলামনা। কিন্তু মনে মনে একটা স্যালুট দিলাম ছেলেটার সচেতনতাকে।
এই ঘটনা দেখে আমার মধ্যে কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা তা জানিনা। কিন্তু রাস্তায় ময়লা ফেলতে গেলেই হাতটা আটকে যায়, ছেলেটার মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
আচ্ছা, আমরা তো যুবসমাজ।
আমরা চাইলে তো অনেক কিছুই করতে পারি। আমরা কি একটু একটু করে আরো সচেতন হতে পারিনা?দেশের মানুষ সচেতন না হলে তো দেশটা পিছনের দিকেই যেতে থাকবে!
সুতরাং আসুন বিদেশীদের কাছ থেকে ওদের সংস্কৃতিকে বানরের মত অনুকরন, লিভ টুগেদার, পাবলিক প্লেসে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি এইসব না শিখে এইসব ছোটখাটো হলেও আমাদের নিজেদের জন্যেই দরকার এসব জিনিস শিখি।
সবাই একটু সচেতন হলে, হাতে হাত রেখে কাজ করলে সাফল্য আমাদের অনিবার্য্য,ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য বাংলাদেশ রেখে যাওয়া খুবই সম্ভব!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।