"বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। "শিহরণে সত্তায় তুমি, হে আমার জন্মভূমি"
আপ্তবাক্য-নাগরিক জীবনে বিনোদনের অভাব, ঘোরার জায়গা নেই, নিরাপত্তা নেই, অর্থের অভাব; এ কথাগুলো আমি মানুষের মুখে ঘুরবার ব্যাপারে হরহামেশা অভিযোগ হিসেবে শুনতে পাই। ক্ষুদ্রজীবনে ঘুরবার জায়গার কখনো কোন অভাব বোধ করিনি। নিরাপত্তাকে থোড়াই কেয়ার করেছি, টাকা কস্মিনকালেও ছিল না। শুধু পায়ে হেঁটে ঢাকা শহরের কত জায়গায় যে গিয়েছি - কি এক দ্রষ্টব্য বস্তু ছিলাম মানুষের চোখে- হাড় জিরজিরে একটা মেয়ে জিন্স আর পাঞ্জাবী পরে, কোমর ছাপানো চুল নিয়ে ভয়াবহ রোদে হাঁটছে কিংবা রিকশায় হুড ফেলে বৃষ্টিতে ভিজছে-কখনো ভাবিনি এগুলো খুব আহামরি কোন কাজ, কেউ কিছু বললে বা ক্ষরচোখে তাকালে আমি দৃষ্টি ফেরত দিয়েছি।
৯৮-৯৯ এ নতুন জায়গা হয়েছে ঢাকার আশেপাশে, সেই জায়গার নাম আশুলিয়া। চারদিকে না কি চলনবিলের মতো পানি, হু হু বাতাস। নৌকায় করে ঘোরা যায়, তখনো তেমন ব্যাপকভাবে চটপটি ফুচকার গাড়ি দাঁড়ায়নি। প্রায়ই প্ল্যান করা হয় কিন্তু যাওয়া আর হয় না। ৯৯ এর অক্টোবর ২৪ তারিখ হওয়া সত্ত্বেও গরম কমেনি।
মীরপুর থেকে আশুলিয়া আসা খুব সহজসাধ্য ব্যাপার না। মাবরুকা, আমি আর কাজলা ফার্মগেট এলাম। সেখান থেকে ম্যাক্সি (হিউম্যান হলার)তে করে আশুলিয়া। আশুলিয়া নেমে দেখি এক এলাহি কান্ড। বর্ষাকাল না হওয়াতে পানি তুলনামূলকভাবে কম।
তিনটা মেয়েকে দেখে নৌকার দালালরা ঝাঁপিয়ে পড়লো। আমরা আস্তে করে দূরে সরে গেলাম। এমনভাব করলাম আমরা কারো জন্যে অপেক্ষা করছি। দালালরা ফিকে হতে আমরা নিজেরাই দেখেশুনে একটু বয়স্ক একজন মাঝিকে নিলাম। ছোট্ট একটা নৌকা।
তিনজনের কেউ সাঁতার জানি না। আমরা জলের উপর আমাদের উপর সূর্য। সে এক জটিল অনুভব। চোখ ধরে আসে মাঝে মাঝে পানিতে সূর্যের প্রতিফলিত আলো চোখে পড়লে। বান্ধবীরা ধরলো গান গাইবার জন্যে-তিনজনে ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে কোরাসে গাইলাম।
মাঝি আমাদের খুব যত্ন করে ঘুরালো সাথে কোন ছেলে না থাকাতে মনে হয় খুশিই হয়েছে। আমাদের এক ঘণ্টা চুক্তির জায়গায় দেড় ঘণ্টার বেশি ঘুরিয়ে পাড়ে নামালো। এখানে সেখানে বিভিন্ন হাউজিং এর সাইনবোর্ড দিয়ে পানিতে খুঁটি দেয়া। এ জায়গার ভবিষ্যত ঐ সাইনবোর্ডগুলো হস্তরেখার মতো আমাদের বলে দিচ্ছে। একটু মন খারাপ হয়ে গেল।
আমরা আবার যেভাবে গিয়েছি সেভাবে ফিরে এলাম। আমাদের তিনজনের সেটাই ছিল একসাথে কোথাও শেষ ঘুরতে যাওয়া-জীবনের টানাপোড়েনে কোন কোন বন্ধু কিভাবে যেন অজান্তেই খসে পড়ে, আর মেয়েদের বিবাহিত জীবন এর প্রারম্ভ তো এ খসে পড়াতে সবচাইতে বেশি কাজ করে।
ঢাকার ভেতর বলধা গার্ডেনে যে যায়নি সে কি বলতে পারবে সাজানো বাগানের বন্য রূপ কেমন হয়? মীরপুরে ক্ল্যাসিক আর শুভেচ্ছা কোচিং সেন্টার ছিল, সেখানে এসএসসি পরীক্ষার পর ঝাঁকে ঝাঁকে ছেলেমেয়ে ভর্তি কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্যে। আমরাও ভর্তি হয়েছি কোনদিন ক্লাস হয় কোনদিন হয় না। যেদিন হয় না সেদিন ঝালমুড়ি খাও, মুসলিম বিরিয়ানিতে বসে অথবা মীরপুর ১৪ নম্বরের ক্যাফে শান এ বসে আড্ডা মেরে বাসায় চলে যাও।
মাঝে মাঝে টাকা পয়সা বেশি যোগাড় হলে রিকশায় ঘণ্টাভ্রমণ। এরকম একদিন গিয়ে দেখি ক্লাস হবে না। কি আর করা - চলে গেলাম যাদুঘর, এটা ৯৪। কয়জন যে গেলাম আমার সবার নামধামও মনে পড়ছে না। যাদুঘর থেকে চারুকলা, আমরা চারুকলাকে আর্টকলেজ নামে চিনতাম।
সেখান থেকে লালবাগ। লালবাগের কেল্লায় আমরা ঢুকে অস্থির-স্কুল কলেজের ড্রেসপরা মেয়েরা ছেলেরা বসা। তারা আমাদের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা দেখে খুবই বিরক্ত। পরীবিবির কবর দেখলাম। লিমা আমাদের বলতে লাগলো একবার ভাব এখানে বড় বড় বাঈজীরা নাচতো! এটা রঙমহল, ঐটা দরবার।
শর্মিলা আফসোস করে বললো ইস্ আমাদের ফুল গ্রুপে একজনও নাচতে জানি না। ফ্যান্সি ইচ্ছা করে এক চক্বর নাচ দিলো তিন্নির ধা ধি না না থুন না বোলের সাথে।
লালবাগের কেল্লার কাছে আহসান মঞ্জিল কিন্তু আমাদের সেখানে যাওয়া হলো না। আমরা গেলাম বলধা গার্ডেনে। ঐখানে ঢুকতে ৫টাকা করে সম্ভবত আমাদের টিকেট করতে হলো।
পুরো শরীরটা শান্তিতে জুড়িয়ে গেল। কত শত ধরনের ফুল। বড় বড় গাছ। এক একজন এক একদিকে গাছের নীচে বসে পড়েছি, পাখির ডাকে গাছের ছায়ায় কোথায় যে এতক্ষণের সব ক্লান্তি উড়ে গেল...আবার যাব এমনভেবে আমরা অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফিরতি পথে রওনা দিলাম। এক নদীর জলে যেমন দুবার স্নান করা যায় না তেমনি আমাদের আর বলধা গার্ডেনে যাওয়া হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।