ডিএমপি কমিশনার একেএম শহীদুল হক সম্প্রতি বলেছেন, সীমান্ত পথে অবাধে অস্ত্র চোরাচালানির মাধ্যমে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক হারে অস্ত্র আসছে। আর এই অস্ত্র রাজধানী ঢাকায় সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছার কারণে রাজধানীতে আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সীমান্তের বিভিন্ন বন্দর, ঘাট, চোরাগুপ্তা রাস্তা ও উন্মুক্ত সীমান্ত পথের সূত্রগুলো তার এই বক্তব্যের সত্যতার খবর দিয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে আসছে অবৈধ ক্ষুদ্র অস্ত্র। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এই চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।
সাম্প্রতিককালে ক্ষুদ্র অস্ত্রের চোরাচালান বাংলাদেশে বেড়ে যাওয়ায় ভারতে বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে অনেক জায়গায় গড়ে উঠেছে অস্ত্র তৈরির কারখানা। বিএসএফ চাল এবং গরু ছাড়া কোন কিছুরই বাংলাদেশের প্রবেশ বাধা দিচ্ছে না। ফলে অস্ত্র এবং মাদক দ্রব্যের ব্যাপক আগমন ঘটছে। ক্ষুদ্র অস্ত্রের ব্যাপক সংগ্রহে হঠাৎ করে কেন ক্ষমতাসীনরা নেমেছে তা কারো বোধগম্য নয়। তবে কোন অশনি সংকেত অশুভ আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কোন সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধেরই যেন প্রস্তুতি নিতে ক্ষুদ্র অস্ত্র বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী হয়েছে তারা।
দেশের পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের সীমান্তপথ বর্তমানে অনেকটাই উন্মুক্ত। বিশেষ করে গত বছর ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের পর থেকে কার্যত বিডিআর এক ঠুটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। সীমান্ত চলছে সম্পূর্ণই বিএসএফের দয়ার ওপর। ভারতীয় বিএসএফ এখন সীমান্তের একক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা।
বিডিআর বিদ্রোহের পর বিভিন্ন সীমান্তে বিডিআর ৮ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত অস্ত্র, পোশাক বুট, ক্যাপ ছাড়াই কর্তব্য পালন করছে। বিদ্রোহের মামলায় বর্তমানে সারাদেশে ৭ থেকে ১০ হাজার বিডিআর বন্দি অবস্থায় আছে। তাদের বিচার কার্য চলছে বিভিন্ন বিডিআর সেক্টর সদর দফতরে। যারা বিচারের সম্মুখীন হয়নি তাদেরও এতদিন অজানা শংকা তাড়া করে ফিরেছে। এখনো সে শংকা অনেকের মধ্যে রয়েছে।
এই শংকা মাথায় থাকার কারণে কার্যত বিডিআর-এর মনোবল বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এই সুবাদে এখন সীমান্ত চোরাচালান সিন্ডিকেট এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। বিডিআর বিদ্রোহের পর তারা সীমান্তে শতাধিক বাংলাদেশী নাগরিককে গুলী করে হত্যা করেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো চোরাচালানির ক্ষেত্রে। কার ইঙ্গিতে আর কোন কারণে তা জানা না গেলেও মতলবটা স্পষ্ট।
সীমান্তের সূত্রগুলো জানায়, পিস্তল, রিভলবার, পাইপগান, বোমা এবং বোমা তৈরির বিভিন্ন ধরনের মশলা ব্যাপকহারে এখন ঢুকছে বাংলাদেশে। কোন কোন জায়গায় বিডিআর বা থানা পুলিশ এসব চোরাকারবারীকে অস্ত্রসহ আটক করলেও তা ক্ষমতাসীনদের তদ্বীর এবং ধমকের কারণে তাৎক্ষণিকভাবেই ছেড়ে দিতে হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে অস্ত্র পর্যন্তও ফেরত দিতে হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া, ভোমরা এবং বেনাপোলের সাদীপুর সীমান্তসহ কয়েকটি স্থানে অহরহই মোটরসাইকেল মহড়ার মাধ্যমে চোরাকারবারীর অস্ত্র পাহারা দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই অস্ত্র খুলনা, যশোরসহ আঞ্চলিক শহর, নগর, বন্দর তো বটেই খোদ রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত চলে আসছে নানা পথে।
সরকারি দল ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পরিচয়ে এসব অস্ত্র পৌঁছে দেয়া হচ্ছে ওপর পর্যন্ত এবং প্রত্যন্ত এলাকায়।
ওদিকে হিলি স্থলবন্দরসহ দিনাজপুরের বিভিন্ন সীমান্ত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রংপর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামরী, পঞ্চগড়, রাজশাহী, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহের সীমান্ত পথেও আসছে ক্ষুদ্র অস্ত্র বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। এসব স্থানে পুলিশ, বিডিআর এবং আইন-শৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনী অসহায়। ক্ষমতাসীন দলের নেতা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ প্রভাবশালী মহল এই চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।
ফলে প্রশাসনকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখেও না দেখার ভান করতে হয়। আবার ধরা পড়রেও ওপরের চাপে ছেড়ে দিতে হয়। ফলে বাস্তবে তাদের কিছুই করণীয় নেই।
সীমান্তের সূত্রগুলো আরও জানায়, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র অস্ত্র ও বোমার মার্কেট বেশ জমজমাট হওয়ার সুবাদে সম্প্রতি সীমান্তের ওপারে গড়ে ওঠেছে ব্যাপক লেদ কারখানা। এসব লেদে তৈরি হচ্ছে রিভলবার, পাইপগানসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র অস্ত্র যা সহজে বহনযোগ্য।
একই সাথে তৈরি করা বোমা, বোমা তৈরির কৌটা, বারুদ, ডেটোনেটর, তারসহ বিভিন্ন সরঞ্জামও আসছে অবাধে। এসবও ঐসব লেদে তৈরি হচ্ছে।
গোটা সীমান্ত জুড়েই ক্ষমতাসীনদের এই ক্ষুদ্র অস্ত্র সংগ্রহের প্রতি বিশেষ মনোযোগ বেশ লক্ষণীয়। বড় অস্ত্র দিয়ে বড় যুদ্ধ হয়। সম্মুখ সমরে বড় অস্ত্র ব্যবহৃত হয় যা বড় সৈন্য বহর বনাম বড় সৈন্য বহরের অপর কারো সাথে যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।
আর ক্ষুদ্র অস্ত্রের ব্যবহার সারা বিশ্বব্যাপীই ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনছে বলে বিশ্ব সমর বিশেষজ্ঞরা আতংকিত। আশ্চর্যের বিষয় হলো বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনরা এই ক্ষুদ্র অস্ত্র সংগ্রহ করছে। তাদের উদ্দেশ্য কি তাহলে ঘরে ঘরে যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়া? কোন নিশ্চিত গৃহযুদ্ধের ছক একেই কি তারা এই কাজে লিপ্ত হয়েছে? সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাজানো ঘটনাকে কেন্দ্রকরে সারাদেশে যেভাবে হিংসার আগুন ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং ছাত্রশিবির জামায়াতসহ প্রতিপক্ষকে নির্মূলের যে ঘোষণা তারা দিয়েছে তার সম্ভাব্য প্রতিরোধের আশংকা মাথায় নিয়েই কি এই ক্ষুদ্র অস্ত্রের বিষয়টি সংগ্রহের পরিকল্পনা তাদের? আবার যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে নির্মূল করার জন্য সরকারের পদস্থ ব্যক্তিদের যে আস্ফালনমূলক বক্তৃতা তার সাথে কি এই অস্ত্র সংগ্রহের কোন সংশ্লিষ্টতা আছে? এরূপ নানা প্রশ্নই বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক মহলের মধ্যে আতংক তৈরি করেছে। সারাদেশের মানুষই এক অজানা শংকায় ভুগছে সামনে রাজনীতির ময়দান কতটা উত্তপ্ত হবে তা নিয়ে। আর তাতে কি এসব ক্ষুদ্র অস্ত্রের ব্যবহার হতে পারে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।