জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হঠাৎই মনে এল জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশের ওপারে আকাশ’। ১৭ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ে চলেছে বাংলাদেশ বিমানের এয়ারবাস-৩১০, ঢাকার দিকে। ঢাকা থেকে খুব সম্ভব ১০ মিনিটের দূরত্বে যখন, তখনই সাদা মেঘের রং যেন একটু একটু বদলাতে দেখছি। সাদা মেঘের দল বঙ্গোপসাগর থেকে উড়ে চলেছে হিমালয়ের দিকে।
আশ্চর্য, সাদা মেঘের দলকে দেখে মনে মনে বাংলা তারিখ হিসাব করে অনুমান করি, এখন আশ্বিনের মাঝামাঝি।
তার মানে শরতেরও শেষ প্রায়। ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস শরৎকাল। শরতের আকাশ যে কত নির্মল নীল, তা শুধু আকাশের নিচে থেকে যেমন দেখা যায়, তেমনি আকাশের ওপর থেকে আরও পরিষ্কার বোঝা যায়। শরৎ নিয়ে ভাবতে ভাবতেই শুনি সিটবেল্ট বাঁধার ঘোষণা। চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমরা মাটি স্পর্শ করব।
বিমান এবার মেঘের দেশ ভেদ করে নিচের দিকে নামতে থাকল। ওপর থেকে যে সাদা মেঘের দল দেখছিলাম, এবার মেঘের ভেতরে ঢুকে মনে হলো এরা ওপরে সাদা, ভেতরে ধোঁয়া ধোঁয়া জলকণায় ভরা, এদের ভেতরের রং সাদা নয়, সাদাকালো কিংবা ধূসর। বিমানের জানালা খোলার ব্যবস্থা থাকলে জলভরা মেঘে হাত ভিজিয়ে নেওয়া যেত।
এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে এবার নিচ থেকে শরতের মেঘ দেখার চেষ্টা করছি। না, ওপর থেকে দেখা সেই শুভ্র সাদা মেঘমালার এবার আর চেনা যায় না।
ঢাকার ওপরের আকাশ বিপন্ন। ওপরের নির্মল রূপ এখানে মলিন। নানা দূষণে বাতাস ভারী। বিপর্যস্ত পরিবেশের জন্য সাদা মেঘের নিচে একটা মৃদু মলিন আস্তরণ আছে, তাই আমরা অমলিন সেই সাদা মেঘের ভেলাগুলো ঢাকা শহর থেকে দেখতে পাই না।
ঢাকার যানজটে বসে শরতের পরিচয় মনে করার চেষ্টা করি।
অভিধানে শরৎ হলো সংবৎসর। আগেকার দিনে আশীর্বাদ করা হতো ‘শত শরৎ আয়ু হোক তোমার’। তার মানে শরৎ খুব সুন্দর ঋতু। এই ঋতুতে শারদীয় দুর্গোৎসব হয়। কাশফুলে নদীর চর মোহনীয় হয়ে ওঠে।
শিউলি ফুলের গন্ধে শেষ রাতের ঘুম ভেঙে যায়। তীব্র গরমের অত্যাচার এই ঋতুতে নরম হয়ে আসে।
আমরা কী সব নিয়ে যেন ব্যস্ত। শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত—কীভাবে কখন যেন চলে যায়। জীবনে ভয়ংকরভাবে অনাবশ্যক অনেক কিছু যোগ হয়েছে।
কাশের গুচ্ছ, শিউলি, পদ্ম ফুল, নদীর চর, হালকা হিমভেজা পালংশাক, নতুন লাউয়ের ডগা—এসব এখন শুধুই সাহিত্যের বিষয়!
প্রকৃতির যে বৈচিত্র্য আছে, আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে যে আনন্দ পেতে পারি, পেতে পারি জীবনের নানা উপচার, তা আর কতটুকু গ্রহণ করি, যা কিনতে হয় না। তাতেই আমাদের অনাগ্রহ। মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যেমন পবিত্র একটা হূদয় দরকার, তেমনি প্রকৃতিকে ভালোবাসার জন্য পবিত্র দুটি চোখ দরকার। আর কদিন পরই আসবে উত্তুরে হিমেল হাওয়া। হিমেল হাওয়ার আগেই ভাবছি, সদলে যাব যমুনার চরে, দেখব সাদা মেঘমালা আর গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল।
দিগন্তজোড়া কাশফুল। কাশফুলের মতোই সুন্দর হবে আমাদের মন।
উপদেষ্টা, জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ, প্রথম আলো বন্ধুসভা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।