আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"নির্বাসিতের আপনজন" বইটির ভূমিকা।

যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

কিভাবে এই বইটি লেখা হোল মাঝে মাঝে আমাদের জীবনের একটি-দুটি মুহুর্ত আসে যেটির উপর ভর করে দেখা দেয় বিশাল কোন কিছু। তেমনি একটি দিন এসেছিল বছর দুয়েক আগে আমার জীবনে। সামহোয়্যারইন নামের একটি বাংলা ব্লগসাইটে চোখ বুলাচ্ছিলাম কাজের ফাঁকে। সেখানে ‘সর্বদা বেলায়েত’ নামের এক ব্লগারের পোস্ট চোখে পড়লো।

তিনি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। লেখাটি পড়ে মনে পড়লো নিজের ছাত্রজীবনের কথা,মনে পড়লো বন্ধুদের কথা,মনে পড়লো শিক্ষকদের কথা। আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম সেদিনের কথা ভাবতে ভাবতে। সামনে রাখা সাদা কাগজে আঁকিবুকি কাটতে কাটতে মনে হোল,আচ্ছা আমিও দু’কলম লিখে ফেলি না কেন? পরের মুহুর্তে আবার নিজেই হেসে ফেলেছিলাম। কেন লিখবো? কি লাভ? কে পড়বে? কেন পড়বে? আমি একজন আম-পাবলিক,আমার জীবনের কথা বা আমার আশপাশের মানুষের কথা শোনার সময় কোথায় অন্যলোকের? পরক্ষণেই আর একটা চিন্তা মাথায় এলো।

অনেক কিছুই আজকাল ভুলে যাচ্ছি। লিখে রাখলে জিনিসটা থাকলো। আমিই নিজেই না হয় একসময় পড়বো,যখন মাথার মধ্যে আর কোন কিছুই থাকবে না। বেভুল মানুষের মতই নিজের লেখা পড়ে হয়তো ভাববো,আহা কে এই মানুষটি? সেই নিয়তেই 'নির্বাসিত' ছদ্মনামের আড়ালে বসে লেখা শুরু করলাম। ভেবেছিলাম টুকিটাকি কিছু স্মৃতিকে ধরে রাখি অল্প কিছু কথায়।

কিন্তু লিখতে বসে দেখলাম অল্প কথায় সবার কাহিনী বলা যাচ্ছেনা। অগত্যা,কাহিনীর কলেবর বেড়ে গেল (যাকগে-আমাকে তো আর কাগজ-কালি কিনতে হচ্ছেনা)। কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো অন্য জায়গায়। খেয়াল করলাম যে কিছু কিছু ব্লগার আমার লেখালেখিকে তাদের নিয়মিত পড়ার তালিকায় রেখেছেন, এবং তারা আমাকে আরো উৎসাহ দিচ্ছেন আরো লেখার জন্য,এবং আরো দ্রুত লেখার জন্য। আমি এসেছিলাম মৃদুমন্দ পায়চারী করার গতিতে, তারা চাইলেন আমি যেন একই সাথে দ্রুত গতির স্প্রিন্টার এবং দীর্ঘ সময়ের ম্যারাথন রানার হই।

এ আমি কিসের মধ্যে পড়লাম? এনারা প্রথমে দিলেন উৎসাহ,পরে মৃদু অনুরোধ, তারপর দাবী,এবং এমনকি দু একজন আন্দোলন করবারও হুমকি দিয়েছিলেন। লেখা চাই,আরো লেখা চাই,আরো দ্রুত লেখা চাই। আমি ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। বেশী বেশী টাইপ করার দরুন হাতের আঙ্গুলে ব্যথা করা শুরু করলো। যাই হোক-একদিন শেষ হোল সব কিছু।

শেষ পর্বটি লিখে ফেললাম। তারপর গোটা সিরিজটির দিকে তাকিয়ে তো আমার চোখ চড়কগাছ। এতগুলো পর্ব লিখে ফেলেছি আমি! কখন করলাম এত কিছু? আমি যে আলসে মানুষ,বাথরুমে টয়লেট পেপারের রোল বদলাতেই সাতদিন লাগে আমার। সেই আমি কিভাবে এতগুলো পর্ব লিখে ফেললাম? এটা নিশ্চয়ই কোন ষড়যন্ত্র, কেউ আমাকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নিয়েছে। কারা সেই দুর্বৃত্ত? কারা আমার অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে আমাকে দিয়ে লিখিয়েছে এই সব? এরা হচ্ছেন মেহরাব শাহরিয়ার, ফারহান দাউদ, মুকুল, রাশেদ, বিবর্তনবাদী, অ্যামাটার, নরাধম, মোস্তফা মনির সৌরভ, ভাইটামিন বদি, মেন্টাল, লাল দরজা, রাগ ইমন, অলৌকিক হাসান, খোলাচিঠি, আলী, সাধারণ, বিহংগ, ৃৃমম, রাতুল, পজিটিভ, শফিউল আলম ইমন, মিরাজ, ফাহমিদুল হক, হাসিব,আবদুর রাজ্জাক শিপন, অমিত, আদনান, কালবেলা, না বলা কথা, নাদান, জ্বিনের বাদশা এবং আরো অনেক ব্লগার।

এদের কাউকেই চিনিনা আমি, অথচ তাদের ভালবাসা, উৎসাহ আর সমর্থন না থাকলে এই বইটিই লেখা হোত না। এদের মত এত ভালবাসাময় মানুষ সমাজের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যাকগে-লেখা যখন শেষ হোল, তখন দেখা দিল অন্য সমস্যা। বেশ কয়েকজনে আমার কানে একটি বই ছাপানোর কুমন্ত্রনা দেওয়া শুরু করলো। তার মধ্যে বন্ধু সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার আর বন্ধুপত্নী নাজিয়া অন্যতম।

কিন্তু সবচেয়ে বড় ক্ষ্যাপা হোল বন্ধু ইয়ারুল কবীর। তারই শ্রম,উৎসাহ আর অর্থানূকুল্যে ছাপা হোল বইটি। এদের কাউকেই ধন্যবাদ দেবার সাহস নেই আমার। ঈশ্বর যে কেন আমাকে এতো শুভাকাঙ্খী দিয়েছেন এই জীবনে,সেটি আজও আমার কাছে একটি রহস্য হিসেবেই রয়ে গেল। সেইসব আপনজনদের কথাই বলতে চেয়েছি এই বইটিতে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।