আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাসিত জনগণ, নির্বাসিতের রাজনীতি

নির্বাসিত জনগণ, নির্বাসিতের রাজনীতি ফকির ইলিয়াস ========================================== সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বাড়িয়ে বাংলাদেশে আরও ৩০ ঘণ্টা হরতাল পালন করেছে ইসলামী কয়েকটি দল। কাঁচপুরে তারা যেভাবে পুলিশের ওপর হামলে পড়েছে, তা প্রমাণ করেছে তারা কতটা উগ্র মতবাদ পোষণ করেন। ইসলামী দলগুলোর এসব নেতা দাবি করছেন, সংবিধান থেকে নাকি আল্লাহর নাম মুছে দেয়া হয়েছে। এর জবাবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' থাকার পরও তারা কেন আল্লাহর নাম খুঁজে পেলেন না, এর জবাব তাদেরকেই দিতে হবে। বিষয়টি খুবই স্পষ্ট ইসুবিহীন হরতাল করে বিনা কারণেই একটি গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে।

জনগণের স্বার্থরক্ষার নাম করে তারা মূলত ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শাসন মেনে নিতে পারে না- এমন একটি গোষ্ঠী '৭১-এর সময় থেকেই সক্রিয় ছিল- এটা কে না জানে। জেনারেল জিয়া যদি সেই পরাজিত মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে আঁতাত না করতেন তবে তিনি ক্ষমতায় যেতে পারতেন না, টিকেও থাকতে পারতেন না। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের বিএনপিও একই কায়দায় ধর্মীয় মৌলবাদী উন্মাদনাকে উসকে দিচ্ছে। কারণ বিএনপি জানে অতীতের মতো জঙ্গিবাদী রাজনীতির ফসল তাদের ঘরেই উঠবে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেছিলেন। এক আড্ডায় তিনি বললেন, ওয়ান-ইলেভেন বেগম জিয়াকেও উপকৃত করেছে। তিনি তার মতামত জানিয়ে বলেন, ওয়ান-ইলেভেন হওয়ার ফলেই খালেদা জিয়া তার দুই সন্তান এবং তাদের পরিবারকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে পেরেছিলেন। তারেক রহমান নতুন 'বিদেশি লেবাস' লাগাতে পারছেন। এখন তারেক রহমানের সন্তানরাও বিদেশে লেখাপড়া করে অন্যদের সঙ্গে পাল্লা পুষিয়ে নিচ্ছে! আমার মনে হয়েছে, কথাটি তিনি মিথ্যে বলেননি।

কারণ বিএনপি সমর্থকরাও তো বলছেন, তারেক রহমান বাংলাদেশে 'ম্যান্ডেলা' কিংবা 'অং সান সু চি' হয়েই ফিরে আসবেন। কিন্তু যে প্রশ্নটি থেকেই যায় তা হচ্ছে, ম্যান্ডেলা কিংবা সু চি কি এমন দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ছিলেন? রাজনীতিকে ডিফিকাল্ট করতে চেয়েছিলেন জিয়া। আর তারেক রহমান নিজস্ব দুর্নীতি সিন্ডিকেট তৈরি করে অন্য রকম রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন নেপথ্যে। তার ফসল ছিল সেনা সমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন। তিনি গোটা দেশের মানুষকে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নির্বাসনে পাঠাতে চেয়েছিলেন।

খেলায় হেরে গিয়ে নিজেই নির্বাসিত হয়েছেন আপাতত। রাষ্ট্রের অবকাঠামোর মাঝে দুর্নীতি, দখলদারি, পেশিশক্তি প্রদর্শন যখন নিয়মিত চর্চা হয়ে পড়ে তখন যে কোন অপশক্তিই মাথা তোলার সুযোগ পায়। জঙ্গি বাংলাভাই, শায়খ রহমানরা তেমনি ছিল রাষ্ট্রের পালিত ফ্রাংকেনস্টাইন। ভাবতে অবাক লাগে, তারেক রহমানের মতো একজন আধুনিক তরুণ সেদিন রাষ্ট্রক্ষমতার নেপথ্য পরিচালক হওয়ার পরও কীভাবে তিনি এসব অপশক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। তার চোখের ওপর দিয়ে কীভাবে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, দেশজুড়ে বোমা হামলা করেছিল জঙ্গিরা।

আজ যারা এই তারেক রহমানকে রাষ্ট্রের প্রধান প্রতিভূ বানানোর জন্য মরিয়া রয়েছেন তাদের প্রশ্ন করতে চাই, তারা কী ভেবেছেন, জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার নেপথ্য সংগঠক এই শক্তিধররা ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের পরিণতি কী হবে? বাংলাদেশে আইওয়াশ করে রাজনীতি দীর্ঘদিন করা যায় না। এই দেশে সামরিক শাসকরা তাৎক্ষণিক বাহবা পেলেও দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারেনি। দেশের মানুষ দরিদ্র হলেও অন্তত ৫ বছর পর ক্ষমতায় ব্যালট যে তাদের হাতে আসে তা তারা জানেন এবং বোঝেন। আর এই বোধদয় থেকেই তারা বন্যা, খরা, মঙ্গার তীব্র প্রতিকূলতা পেরিয়ে খন্ডন করেন সাময়িক নির্বাসনকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে 'হরতাল' নামের বন্দিত্ব যেভাবে মানুষকে ঘিরে ধরেছে তা প্রমাণ করছে অনেক দূরে জৌলুসি নির্বাসনে থেকে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাদের মতলব হচ্ছে একটি পরাজিত শক্তিকেই জেতানো।

আর বাংলাদেশে যদি এই মৌলবাদী শক্তি জিতে যায় তবে পরিণতি কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ভূখন্ডে মানুষ বেড়েই চলেছে। জনসংখ্যা রোধের কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেই। জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রামীণ পর্যায়ে যে পর্যাপ্ত মাঠকর্মী থাকা দরকার তা নেই। গত দশকে বাংলাদেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সাফল্য দেখাতে পারলেও চলমান সময়ে তা একেবারেই ভেঙে পড়েছে।

২০১৫ সালে ঢাকা মহানগরী তার জনসংখ্যা ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। প্লট কিংবা ফ্ল্যাট ব্যবসার নামে ঠগ-মুনাফাখোর একটি শ্রেণী হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা। দেশের বুর্জোয়াতান্ত্রিক লুটেরা রাজনীতির শাখা-প্রশাখা খুব পরিকল্পিতভাবে দেশের মানুষকে কয়েদি করে রেখেছেন; বলা যায় স্বদেশেই মানুষ আজ নির্বাসিত। এর কোন শেষ নেই। লিখে কিংবা বলেও শেষ করা যাবে না এসব কথা।

১৫ কোটি মানুষের দেশে দুর্যোগ, দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। চট্টগ্রামের মীরসরাইতে কোমলমতি ৪৪ জন স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে গোটা দেশ। দেশ-বিদেশের বাঙালি সমাজ এই বেদনাবিধুর ঘটনায় শোকাহত। খবরে জানা গেছে, এই দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকের ড্রাইভার মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন।

চলন্ত গাড়িতে ড্রাইভিং আসনে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলা নিষিদ্ধ হচ্ছে গোটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশেও তা কার্যকর হওয়া দরকার। দেশ বাঁচাতে হলে, সমাজ বাঁচাতে হলে মানুষকে সচেতন হতে হবে। কিন্তু রাজনীতিক এই দেশের মানুষকে যেভাবে নির্বাসিত রাখতে চাইছে সেই জিম্মিদশা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে মানুষকেই নিজ প্রচেষ্টায়। ========================================= দৈনিক সংবাদ / ঢাকা / ২২ জুলাই ২০১১ শুক্রবার ছবি- সিসিলি ব্যাকস্ট্রম ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।