আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে...
তারিখটা ১২ জানুয়ারি, বছর শুরু মাত্র। তবে বছর শেষেও বোধহয় এই দিনটিকে দেখা হবে আলাদাভাবে। এ দিনই জানা যায়, গুগলের মেইল সিস্টেমে অভাবনীয় এক আক্রমণের ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয়, সংঘবদ্ধ ওই আক্রমণে অনেক কম্পিউটার থেকে তথ্য চুরি হয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গুগল জানায়, জিমেইলে চীনের মানবাধিকার কর্মীদের একাউন্ট থেকে তথ্য চুরির লক্ষ্যেই এই হামলা।
তারা দাবি করে, স্বয়ং চীন সরকার হ্যাকিংয়ের এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এবং এই কারণে তারা আর চীনে কাজ করবে না। পরে গুগল এও জানায় যে, হ্যাকাররা দুটি ইমেইল একাউন্ট হ্যাক করে সফল হলেও সেখানে কারো সুনির্দিষ্ট পরিচিতি ছিল না।
অভাবনীয় এক স্নায়ুযুদ্ধ
গুগলের মেইল সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটার পর গুগল এবং খোদ চীন সরকারের মধ্যে অভাবনীয় এক স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। যে গুগল চীন সরকারের সব অন্যায্য দাবি মেনে সেন্সরশিপ বহাল রেখে চীনে পদার্পণ করেছিল, হ্যাকিংয়ের ঘটনার পর সেই গুগলই হঠাৎ করে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
বিদ্রোহই শুধু নয়, প্রয়োজনে চীন থেকে তল্পিতল্পাসহ বিদায় নেওয়ার হুমকিও দেয় বিশ্বের এক নম্বর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। গত বৃহস্পতিবার মাত্র জানা গেল, হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি ঘটেছে চীনের দুটি শীর্ষ প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- সাংহাই জিয়াওটং ইউনিভার্সিটি এবং লানজিয়াং ভোকেশনাল স্কুল থেকে।
হঠাৎ করিৎকর্মা চীন, ব্ল্যাক হকের দুর্দিন
গুগলের সঙ্গে টানাপড়েনের জের ধরে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে চীন সরকার। সপ্তাহদুয়েক আগে হ্যাকিং শেখার প্রতিষ্ঠান 'ব্ল্যাক হক সেফটি নেট' বন্ধ করে দেয় চীনা কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, ওই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ১২ হাজারের মতো।
এ থেকে উদ্যোক্তাদের আয় ছিল প্রায় ১০ লাখ ডলার। এর বাইরে বিনামূল্যের সদস্য রয়েছে প্রায় দেড় লাখ।
আক্রান্ত অস্ট্রেলিয়া
চীনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অস্ট্রেলিয়াও ইন্টারনেট ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে- সাধারণ জনগণ ছাড়াও বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ান হ্যাকাররা এটা মানতে পারছিল না। চলতি মাসের ৯ তারিখ তারা এর প্রতিবাদস্বরূপ আক্রমণ চালিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করে দেয়। প্রধান পোর্টাল তো ছিলই এর মধ্যে, সঙ্গে সংসদ, প্রধানমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রীর ওয়েবসাইটও।
হ্যাকাররা এক ইমেইল বার্তায় জানায়, সরকারের বোঝা উচিত যে ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করা উচিত নয়। এই আক্রমণের পরও অবশ্য অস্ট্রেলীয় সরকার পিছু হটেনি।
হ্যাকিংয়ে ট্রেন্ড বদল
মাইক্রোসফট বরাবরই হ্যাকারদের আক্রমণের জনপ্রিয় লক্ষ্যবস্তু। বর্তমানে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট- যেমন ফেসবুক, টুইটার- হ্যাকারদের আক্রমণের ধকল সামলাচ্ছে প্রায় নিয়মিত। গত বছর রুশ ও ইরানি হ্যাকারদের আক্রমণের ধকল সইতে না পেরে কয়েক দফায় বন্ধ ছিল টুইটার।
এদিকে উপায়ান্তর না দেখে ফেসবুক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ম্যাকাফির শরণাপন্ন হল গত মাসে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এখন বলছে, সামনে হ্যাকারদের চোখ পড়তে যাচ্ছে প্রধানত এডবি এবং গুগল ওএসের ওপর।
এফ-সিকিউরের ঝটিকা হামলা
গত বছরের সেপ্টেম্বরের ঘটনা। হ্যাকারদের ওয়েবসাইট pakbugs.com আকস্মিক এক হামলার শিকার হয়। হামলাকারী আর কেউ নয়, স্বয়ং এন্টিভাইরাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এফ-সিকিউর।
তারা নিবন্ধিত সদস্যদের তালিকা ছাড়াও ইমেইল-পাসওয়ার্ড ও অন্যান্য তথ্য কপি করে নেয়। এরপর সাইটটি চালু থাকলেও বেশ কয়েকদফা হামলার শিকার হয় বিভিন্ন মহল থেকে। একজন নিবন্ধিত সদস্য হিসেবে গত কয়েক মাসে দেখেছি, সামগ্রিকভাবে মেরুদণ্ডই আসলে ভেঙে গেছে তাদের।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সিস্টেম ও ওয়েবসাইটে বছরে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক সফল হামলা সত্ত্বেও আমি বলবো, হ্যাকারদের দুর্দিন চলছে ইদানিং। সুসংবাদ, নাকি দুঃসংবাদ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।