সিরিয়ার জিসর আল শুঘুর শহরে সেনারা নারীদের ওপর নারকীয় নির্যাতন চালাচ্ছে। কোন বিচার হবে না জেনে তারা যুবতী মেয়ে ও নারীদের ধরে আটকে রাখছে। তারপর তাদেরকে ধর্ষণ করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা ধর্ষণের পর ধর্ষিতার দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছে। অপহরণ করে নেয়া যুবতীদের সেনাদের সামনে বিবস্ত্র হয়ে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।
গত ২০শে জুন অনলাইন টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘স্টোরিজ অব ম্যাস রেপ: সিফটিং থ্রু রিউমার অ্যান্ড টাবু ইন সিরিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন সিরিয়া থেকে রানিয়া আবুজায়েদ ও খিরবেত আজজোউজ। এতে বলা হয়েছে, জিসর আল শুঘুর শহর থেকে যেসব মানুষ তুরস্ক সীমান্তের দিকে ছুটে গেছেন তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। এতে বলা হয়েছে, সেনারা ওই অঞ্চলের বেশ কিছু সুন্দরী যুবতীকে অপহরণ করেছে। তাদেরকে একটি চিনি শোধনাগারে আটকে ক্রীতদাসে পরিণত করা হয়েছে। সেনারা তাদেরকে ধর্ষণ করছে।
তাদেরকে বিবস্ত্র থাকতে বাধ্য করছে। সে অবস্থায় তাদেরকে বাধ্য করছে সেনাদের চা ও কফি সরবরাহ করতে। আবার বেশ কয়েকজন নারীকে সেনারা গণধর্ষণ শেষে তাদের দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। তাদের স্তন স্লাইস করে ফেলা হয়েছে। যারা এরকম নির্যাতিত হচ্ছেন তাদের নাম অনেকেই এখনও জানে না।
এমন ঘটনায় ওই রিপোর্টে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে কোন সমাজেই যৌন হয়রানি একটি জটিল সমস্যা। কিন্তু আরব অঞ্চল রক্ষণশীল। আরবসহ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে যেখানে পরিবারের মর্যাদা রক্ষা হয় নারীদের কৌমার্য্যে। সিরিয়ায় অবস্থানরতরা বলছেন, তারা শুনেছেন এভাবে যৌন হয়রানির শিকার নারীদের তুরস্কের একটি বিশেষ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে সরকারের কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি। কিন্তু এমন নির্যাতনের শিকার নারীদের কাছেও যেতে পারছেন না সাংবাদিকরা। এ বিষয়ে নির্যাতিতার বক্তব্য বা তার সাক্ষাৎকার নেয়ায় বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে তুরস্ক। তুরস্কের হাতাই প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছেন ৯৫০০ শরণার্থী। সেখানে মিডিয়ার প্রবেশ নিষেধ।
গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এমন এক শরণার্থীর আত্মীয় পরিচয়ে গত ১৬ই জুন সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই টাইম ম্যাগাজিনের ওই দুই সাংবাদিক ঢুকে পড়েন শরণার্থী শিবিরে। ছদ্মবেশ ধারণ করে তারা যখন শরণার্থী ক্যাম্পে প্রবেশ করেন তখন তাদের ঘিরে ধরে সিক্রেট পুলিশ। তারা তার আগেই হোটেলের চাবি, নোটবুক, বিজনেস কার্ডস, পাসপোর্ট সব ফেলে দেন- যাতে তাদেরকে কেউ সাংবাদিক বলে সন্দেহ করতে না পারে। এভাবে তারা যে ক্যাম্পে গিয়েছেন, সেখানে কেউ বলতে পারেন নি তাদের মধ্যে কোন নারী ধর্ষিত হয়েছেন। সেখান থেকে তারা রাতের পাহাড়ি কণ্টকময় পথ মাড়িয়ে ছুটে যান তুরস্কের কাছে সিরিয়া সীমান্তে।
সেখানে তখনও বেশকিছু মানুষ সীমান্ত পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায়। তাদের মধ্যে একজন আছেন জিসর আল শুঘরের দু’এক কিলোমিটারের মধ্যে গ্রাম আল সারমিনিয়ার। তার চার টিনেজ মেয়েকে সিরিয়ার সেনারা ধর্ষণ করেছে। ৩০ বছর বয়সী ফার্মাসিস্ট মোহাম্মাদ মেরোহি বলেছেন- হ্যাঁ, এ ঘটনা সত্য। তবে কোন পরিবারের মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে তা জানি না।
তিনি সীমান্ত এলাকায় আহত, অসুস্থ লোকজনকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি বললেন, আপনারা জানেন আমরা রক্ষণশীল সমাজের মানুষ। ওসব নিয়ে আমরা খোলামেলা কথা বলি না। তাছাড়া, ধর্ষিত মেয়েদের বিষয়ে কেউই আপনার সঙ্গে কথা বলবে না। সেখানেই একটি ক্যাম্পে অপেক্ষায় আছেন চার যুবক।
সেনারা ধর্ষণ করেছে এমন মেয়েদের তারা বিয়ে করতে চান। কিন্তু কেউই রক্ষণশীলতার জন্য দাবি করছে না যে, তাকে সেনারা ধর্ষণ করেছে। সিরিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম খাইবাট আল জোউজ-এর ৩৪ বছর বয়সী নারী এম মুস্তাফা। তিনি বলেছেন, আমরাও ধর্ষিত হওয়ার খবর শুনেছি। ওই অঞ্চলে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার জন্য তাঁবু ফেলেছে অনেক মানুষ।
সেখানে যেসব নারী রয়েছেন তাদের মধ্যে সারাক্ষণ একটিই ভয়- কখন যেন সেনারা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এম মুস্তাফা বলেছেন, এমন অসংখ্য ধর্ষণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। (মানবজমিন থেকে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।