৫২'র ভাষা শহীদদের পরিবারগুলো অনুযোগ করেছে, প্রতি বছর শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি এলেই তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। এরপর তাদের খোঁজ কেউ করে না।
এ সংবাদটি প্রকাশ করেছে বিডিনিউজ২৪.কম
গণমাধ্যমে বিকৃত উচ্চারণে বাংলা ব্যবহারে খেদ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে নজর দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে শুক্রবার এক আলোচনা সভায় ভাষা শহীদদের পরিবার তাদের অভিযোগ-অনুযোগের কথা তুলে ধরে। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান আমলে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। এতে নিহত হয় আব্দুস সালাম, আবুল বরকত, আব্দুল জাব্বার, রফিক উদ্দিন আহমেদ, শফিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন। '৫২'র ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসে।
২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে বাঙালি শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে দিনটিকে ১৯৯৯ সালে আস্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ।
আলোচনা অনুষ্ঠানে শহীদ জাব্বারের ছেলে নুরুল ইসলাম বাদল বলেন, "সরকার ভাষা শহীদদের পরিবারের কোনো খোঁজ রাখে না।
প্রতি বছর ২১ ফেব্র"য়ারি এলে এ ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু হয়। ফেব্র"য়ারি মাস গেলে আবার আগের অবস্থা। "
"একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই দেশের বিভিন্ন সংগঠন/সংস্থা শহীদ পরিবারকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায়। নানা অনুষ্ঠানে যেতে যেতে আমরা হয়রান হয়ে যাই। পরে আর আমাদের খবর কেউ রাখে না।
এমনকি ভাষার চেতনাও ভুলে যায়", খেদোক্তি করেন শহীদ রফিকের ভাই খোরশেদ আলম।
অনেক সমস্যায় জর্জরিত থাকার কথাও তুলে ধরেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা না মেলার অভিযোগও করেন তারা।
শহীদ বরকতের মামাতো ভাই এম আর এ তাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভাষা আন্দোলনের ৫৮ বছর পর এখনো এ দেশের গণমাধ্যমে বিকৃত উচ্চারণে বাংলা ভাষার ব্যবহার শুনতে হয়। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না।
এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষাও দিনদিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। "
"বাঙালি যদি হতে হয় তাহলে আমাদেরকে শুদ্ধ বাংলার চর্চা করতেই হবে। বিকৃত বাংলার বিরুদ্ধে '৫২ এর মতো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তা করতে না পারলে নিজেদের মনে-প্রাণে বাঙালি দাবি করতে পারবো না", বলেন শহীদ শফিউর রহমানের ছেলে শফিকুর রহমান।
শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সর্বত্র বাংলা প্রচলনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, "এটি না থাকার দায় সরকারের।
তাই সরকারের নীতি নির্ধারকদের ঠিক করতে হবে তারা কিভাবে এ দায় থেকে নিজেদের মুক্ত করবে। "
তবে বাংলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টিকে থাকতে ইংরেজির ওপরও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন শফিকুর।
অনুষ্ঠানে শহীদ জব্বারের পুত্রবধূ ফিরূজা খাতুন, নাতি ফারজুল ইসলাম, প্রনাতি আহনাব শাকিল; শহীদ আবুল বরকতের ভাতিজা আলাউদ্দিন বরকত লালা, আইন উদ্দিন বরকত টুটু এবং নাতি জাহাঙ্গীর কবির; শহীদ রফিকের ভাতিজা মো. আব্দুর রউফ; শহীদ শফিউরের মেয়ে শারমিন আদিবা রহমান এবং শহীদ সালামের ভাই আব্দুল করিমও উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মনজুরে এলাহীর সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রকীবউদ্দিন আহমেদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।