আমার ভিতর তুমি থাকো আমি কোথায় রই, আমি না থাকিলে তোমার থাকার জায়গা কই?
তারা কয়েকজন মিলে এক দঙ্গল। উদভ্রান্ত, উশৃঙ্খল-কেমন যেন নেশা ধরা ঘোর লাগা প্রান। না, ঠিক প্রান বলা যায়না ওদের। অতি প্রাকৃত ক্লীব কোন। ওদের নিয়ন্ত্রনহীন চোখগুলো কি যেন খুঁজছিল হন্যে হয়ে।
ওদের আসক্ত মন বলছিল, “আজ মিলবে, আজ মিলবেই। ”
আকাশ তখন পরিষ্কার। বিশাল গম্ভুজ ঘিরে নীল রং একাকার হয়ে ছড়িয়ে আছে। বাড়ী ফেরতা সুর্য দেবতা ঈষৎ উঁকি মেরে দেখে নিচ্ছে শেষবারের মতো তার কর্মক্ষেত্রটাকে। আগামীকাল আসবার নিয়মে।
“কাল আবার আসবো”-গম্ভীর কণ্ঠে বলে ছেলেটি।
মেয়েটি কিছু বলেনা। শুধু চোখ তুলে তাকায় গভীর প্রত্যাশায়। তার ছোট্ট পা জোড়া তখনও জোয়ারের জলে ডুবে আছে। জলেরা কুলকুল শব্দে গড়াগড়ি খাচ্ছে তার নগ্ন পায়ে, শাড়ীর প্রান্তে।
তার আজ উঠতেই ইচ্ছে করছেনা। মন বলছে-“নিভে যাক সব আলো, আমি এই জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকবো অনন্ত রজনী। ”
“আবার আসবো কাল”-ছেলেটি পূনরাবৃত্তি করলো।
মেয়েটি এবার বাধ্য হয়েই হাত বাড়ালো। একটু যেন বিষন্ন তার মন।
গোধূলী বেলায় হেঁটে যাচ্ছিল তারা দু’জন আঠারো বাঁকীর তীর ঘেঁষে। জলের শব্দ শুনতে শুনতে হাঁটছিল তারা দু’টি প্রান গভীর ভালোবাসায়।
অতি প্রাকৃত ক্লীবগুলোর চোখ ক্রমশ প্রখর হয়ে উঠছিল আঁধার নামার সাথে সাথে। এমন প্রখরতা হিংস্র পশুকেও হার মানায়। মনে হয় যেন ঘন নিকষ অন্ধকারেও ওরা ঠিকই খুঁজে বের করতে পারবে যেকোন কিছু।
এমনকি নিভৃতে লুকিয়ে থাকা এক জোড়া ঘাস ফড়িং।
“গুরু তোমার সেই ফড়িং না”?
ওই এক কথাতেই দাঁড়িয়ে পড়ে পুরো দল। তাদের সার্চ লাইটের চোখগুলো দ্রুত আলো ফেলে সামনে। “গুরু” নামের জীবটি চোখ কচলে তাকায় একবার এবং আরো দু’বার। অতঃপর দলের সবার দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করে আচমকা।
অপার্থিব সেই হাসি কাঁপিয়ে তোলে আকাশ বাতাস। বিশ্ব চরাচর যেন নিমিষেই ধুলিস্মাৎ করবে এই অনাবিল সবুজ, যেখানে নির্বিঘ্নে আছে ঘাস ফড়িং।
নিকষ কালো রাত। অন্ধকারে ডুবে আছে চরাচর। আকাশের নীল ছাপিয়ে মেঘেরা ছুটে আসছে।
কালো পর্দায় শরীর ঢেকে যেন উৎসবে মেতেছে আঁধার। অপার্থিব উল্লাসে মত্ত এ কালো রাত। একটু আগে যেখানে জোয়ারের প্লাবন ছিল এখন সেখানে নদীর গভীরতা কমেছে কয়েক ফুট। একটু আগেই যেখানে বসেছিল দু’টি প্রান পাশাপাশি। সেখানেই আঠারো বাঁকীর আড়ং বসেছে।
যার প্রধান আকর্ষণ নিরাবরন একটি প্রান। আর অপরটি অদুরেই গাছের ঢালে ঝুলন্ত।
আগামী কাল আবার আসবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল তারা দু’টি প্রান। আগামীকাল আবার উঠবে বলে আজকের মতো ডুবে গিয়েছিল সূর্যটা-নাকি আঁধারকে প্রশ্রয় দিতে চেয়েছিল সে অথবা, আঁধারই তাকে গ্রাস করেছিল আক্রোশে। আর দলবদ্ধ নীল মেঘেরাতো ভীষণ কোমল তাই কালো মেঘেরা নিমিষেই ছাপিয়ে যায় তাদের...।
অসহায় প্রাণ দু'টির ভাবনা ছাড়া কিছুই করার ছিলনা। উপায় ছিল শুধুই প্রার্থনার। কিন্তু সেই প্রার্থনা হয়তো পৌঁছাতে পারেনি কালো মেঘের ভীড় ঠেলে শুন্যে-মহাশুন্যে।
প্রথমেই তারা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল ক্লীবগুলোকে। কিন্তু আকস্মিক আক্রমনে বিহ্বল হয়ে পড়ে ছেলেটি।
সংঘবদ্ধ চক্রে পড়ে ঘুরতে থাকে সে ক্রমাগত। তার দূর্বল প্রতিরোধ কোন ফল আনতে পারেনা বরং মুখ থুবড়ে পড়ে মুহুর্তে। তবুও প্রেমিকাকে সে লুকিয়ে ফেলতে চেয়েছিল বুকের পাঁজরে। কিন্তু পাজরটা ভেঙ্গে গেলে কী আর করতে পারে মানুষ?
“আমাকে বাঁচাও”-মেয়েটি চিৎকার করছিল প্রানপন।
আঠারো বাঁকীর ভাটির টানে ভেসে গিয়েছিল তার আবেদন।
নদী যেন পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল ওই বাস্তবতা থেকে।
পরদিন সূর্যটা আবার উঠেছিল। আলোতে ভরে যাচ্ছিল আঠারো বাঁকীর তীর পূনর্বার। আলোতে ভরে যাচ্ছিল দু’টি প্রানহীন দেহ-নগ্ন ও বিভসৎ। যাদের চোখে আলো ছিলনা, ছিল এক অলৌকিক ছায়া।
নিস্পলক সেই চোখে তারা দেখছিল বৃষ্টি, মুষলধারে বৃষ্টি। সূঁচের মতো তীক্ষ্ণ সেই বৃষ্টি আবার দেখছিল জোয়ারের আচড়ে পড়া মারমুখী আক্রোশের উন্মাদনা। দেখছিল আঠারো বাঁকীর বিশাল ওষ্ঠের গভীর চুম্বন-যে চুম্বন চুষে নিচ্ছিল গভীর আদরে তাদেরকেই-যেমন মা ক্যাঙ্গারু লুকিয়ে ফেলে তার ছোট্ট শাবক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।