ডুবোজ্বর
০১.
আমরা দশদিগন্ত খুলে খুলে খুঁজি। পাই না কিছুই, এমন কি জীবাশ্মও মেলে না। আমি তাকে কানে কানে বলি, যে আছে ত্বকের ভিতর খড়ের কমল-- য় হয় ক্রীতদাস নিঃশ্বাস। জানলাবতী ভাঙন আসে পথের ওপার হতে, গরাদে আছড়ে পড়ে পরাভয় নির্লোভ ইচ্ছেপাতের রূপ।
তুমি ওখানে যেতে পারো না।
কেনো?
কেনো না তোমার পায়ে দুখানি পা নেই।
আমি অপসৃয়মাণ...
যদি তিনি আমাদের দেশে আমাদের নৌকোয় পর্যাপ্ত আলো আঁধারিতে এসে শুয়ে শুয়ে বলে দিতো বিছানার অমতা! কোথাও কি ছিলাম, কোনো কালে? হ্যাঁ, গাছ আর মিনার উলম্ব আমাকে প্রদর্শন করে দিনরাত, আমি পদানত অভিমান।
০২.
রাত এখনো জ্বলছে দেখো! একজন নিজের আগুনে কেবলই পুড়ে যাচ্ছে ধীরে। ঘুম ছিঁড়ে যাক চোখের বারান্দায়, কান্তি এসে শুয়ে থাকুক, লক্ষ্মী বকুল। আহা বর্ষা নামুক, মেঘ নামুক বৃষ্টি হয়ে চোখের খাতায়।
ঠিকমতো বসন্তই এলো না! আবার বর্ষা।
বর্ষা কী?
বন্যার সুনিপুণ প্রতিশ্রুতি।
আর?
তোমাদের বিলাস।
আর?
কাদা...
করাতকলের নিচে থাকি, আমি কাঠফুল; দেখি প্রাকৃত রাত। আকাশে অন্তহীন নত্রাবলি, আমি তাকিয়ে থাকি।
সেই কবে! সতেরোবছর আগে রাতখোর হয়ে গেছি! রাতখোর নিজেই ক্যাকটাস, আপন কণ্টকে বিদীর্ণ সকাল। রাতের উপপাদ্য জানি খানিকটা। আপাতত আকাশে তারা নেই, তারা।
স্বাতী তুমি আর নাই তোমাদের দেশে-- পুরনো এক বটের ছায়ায় তোমাকে খুঁজে এসেছি, পাই নি; কোলাহল আর হট্টগোল ত্বকে মেখে ফিরেছি। ঘরে এসে স্নানঘরে দেখি সাবান নেই।
০৩.
বিস্মৃতির বনে ঘুরে এসে দেখি তুমিই পরিণত সুন্দর, সুন্দর তোমার কাছে জমা আছে আমার সকল অর। তুমি কে, কে তুমি? তোমাকে খুঁজি, তোমাকে খুঁজি...
তুমি কে?
চোখের ওপার।
ওপারে কী থাকে?
স্বপ্ন আর...
০৪.
জীবন সবসময়ই প্যারাডক্স। ভূমি আর বৃরে সমকোণ অসুখ। ছায়া আর শরীরের নিত্যতা নিয়ে পাতার মিনার ভেঙে ঝড়কে বলা-- একা হলে বনে এসে নলখাগড়ার বন।
ইতঃপূর্বে আমি জেনেছি স্যানিটারিয়াম শুয়ে আছে দুহাতের ইশারায়, তার জানলায় ওপারের হলুদ পাখিরা আরো হলুদ হয়ে গেলে আমি রঙতুলি ফেলে তার ভিতর শুতে যাই। আমাকে গ্রাস করে না অন্ধকার-- তরল হয়ে ঢুকে পড়ে চোখের গর্তে। চারদেয়ালের ডানায় সঞ্চার করি আমার রক্তের সবটুকু প্রাণ...
তবে কি মুক্তি?
হয়তো।
মুক্তি কী রূপ?
অলীক।
তুমি আমাকে খুঁজেছিলে।
ওবেলা বাহিরে ছিলাম; বাহিরে ঝড় ছিলো একা।
০৫.
হ্যাঁ দাদা, একদিন সবকিছু শেষ হয়ে যায়। কারো কাছে থাকা মানে থাকা নয়। নিজের কাছে তো আর থাকে না। স্মৃতি সে এক ভয়াল করাতকল, অবিরাম কাঠের গুড়ি হয়ে ফালি ফালি রাত্রির নিঃশ্বাস আর পুষ্পের অভিসম্পাত হয়ে থাকি।
আর রক্তের একটা স্রোত কোথাও কি চেরি হয়ে ফোটে অথবা কারো ঝাপিতে রক্তিম চন্দ্রমল্লিকা? কী আসে যায়?
আপনার কি সেই লেখকের কথা মনে আছে, অন্ধকার জেলখানায় বসে কেবল লিখতো আর লিখতো?
কে?
নাম ভুলে গেছি।
কেনো?
আমরা সবকিছু ভুলে যাই।
তারমানে?
আমরা কিছুই ভুলি না।
এইসব কী কথা?
আমরা বহন করি ধোঁয়া আর কুয়াশার শব।
প্রকৃত অর্থে একদিন সবকিছুই শেষ হয়ে যায়।
চিহ্ন ও চিৎকার ঢাকা পড়ে ধূলি আর প্রতিধ্বনিতে।
০৬.
কবি অমিত চক্রবর্তী। যিনি ভালোবেসে আমার নাম রেখেছেন-- কবিষাদ; কবি আর বিষাদ।
কবি, আমার চোখের ভিতর বিষাদ আছে বলেই আমিও সুন্দরচোখ আর ছায়ার রেখায় জেগে দেখি এখনো অনেক রাত্রি বাকি জাগরণের।
০৭.
দুদিক থেকে টানছে হাওয়া
কোথায় আমার হারিয়ে পাওয়া
ইদানীং বড়বেশি কান্তি লাগে।
আগে অনেক হাঁটতে পারতাম-- পথ সব রাখালের মতো ধূলি ধূলি চোখে বাঁশির সুর হয়ে যেতো, সুর হয়ে যেতো...
০৮.
এই থানে ছুঁয়ে গেলে চন্দনরাত-- বর্ষা আনে না আর বাদলপ্রপাত। এতো শব্দ! হা ভগবান, কেনো তুমি এতো শব্দের উৎস হলে? তুমি তো ভগ-বান।
আমি নৈঃশব্দ্য, মৃত্যুসহচর। তোমার কাঠগোলাপের চারা তছনছ করি। ঢেঁকিকলে চালগুঁড়ো করে রুটি বানাই।
নৈঃশব্দ্য মানে একটি হাওয়াচুর চেরাইকল।
০৯.
উত্থিত আঙুল ফাগুনের গন্ধের ভিতর ঘুমিয়ে পড়েছিলো। জেগে দেখে সে একটা গাছ হয়ে গেছে।
গাছে কোনো ডালপালা নাই, শুধু পাতা আছে।
১০.
আমার বন্ধু জোনাক উড়ে উড়ে চলে যায়।
ভরা পড়ে থাকে তার টাকিলার গ্লাস, কায়রোর আতর, বেনামি পর্দা, জার্নি বাই কার, কুটুকুটু খেলা এইসব। সে উড়ে যায়, উড়ে গিয়ে লুকোয় একটা কামিনীর ঝাড়ে, তুমুল অন্ধকারে। সেখানে তার সাথে একটি অর্ধসত্য সাপ দেখা করে।
সাপটির চিবুকের নিচে কাটাদাগ আছে।
১১.
আমার চিবুকের নিচে একটা কাটাদাগ আছে।
এটা হতে পারে আমাকে সনাক্ত করার চিহ্ন। আর শাদা আর কালোকেও আমি রঙ মনে করি। সুতরাং রঙধনুতে নয়টি রঙ।
১২.
বাদামের ঘ্রাণ আসে। বাদামের বাড়িতে দুটো ঘর।
তোমরা যারা এইভাবে থাকো তোমাদের সিঁথিপথে রামধনু নেই। বাজারি রঙ আছে।
রামধুনতে নয়টা রঙ।
১৩.
একদিন প্রিয়নদ এসে তোর সবকিছু কেড়ে নেবে, বয়ে যাবে অমৃত প্লাবন। রথের মেলায় ঝুমঝুমি কিনে হারানোর বেদনা মনে পড়ে যাবে, তুই ক্রন্দনের অন্যনাম হয়ে আমাদের গ্রামে জলপ্রকাশ এবং পলি ও পঙ্কিলতার কালে নিভৃত চাষাবাস।
আর এইখানে আমি অপুষ্পক সন্ন্যাস চোখে নিয়ে ঘুরি।
-----------------------------------------------------------------------------
কবি অমিত চক্রবর্তী:
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।