কোন একদিন.. এদেশের আকাশে... কালেমার পতাকা দুলবে, সেদিন সবাই ... খোদায়ী বিধান পেয়ে দু:খ বেদনা ভুলবে..
ঢাকা শহরের দামী ফ্ল্যাটে স্বামী আর সন্তানকে নিয়ে থাকে মৌরী। আর সাথে থাকে তাদের ছোট্ট কাজের মেয়ে আশা। সাত বছর হলো মৌরির বিয়ে হয়েছে। স্বামী ব্যবসায়ী, আর সে গৃহিনী। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই একটা ছেলে সন্তান হলো তাদের।
ফুটফুটে শিশু। ছেলেটার নাম দিল তুর্জ। প্রথম সন্তানকে নিয়ে মৌরির তো বেজায় আনন্দ। সারাদিন ওকে নিয়েই ব্যস্ত। একফোঁটাও চোখের আড়াল হতে দেয়না তুর্জকে।
তুর্জের দাদীর কাছে দিয়েও সে একটুও আশ্বস্ত হতে পারেনা। প্রয়োজনীয় কাজগুলোও শর্টকাটে কোনরকম সারিয়ে ছুটে আসে ছেলের কাছে। কিন্তু তুর্জ নামটা যেমন একটু অ্যাডভাঞ্চারাস, তেমনি শিশুটার হাবভাবও। জন্মের পর থেকেই তার দুষ্টুমির শুরু। মায়ের কথা শুনতেই চায়না।
ঠিকমত খেতে চায়না, ঘুমাতে চায়না। ছোট্ট শিশু কিছু বলতেও পারেনা, সইতেও পারেনা। তবু ছোটবেলায়তো মায়ের কোলেই থাকত, জোর করে এক আধটু খাওয়ানো যেত, ঘুমপাড়ানো যেত। কিন্তু হাটতে শেখার পর থেকে ওর নাগালই পাওয়া যায়না। সারাদিন পুরো ফ্লাট জুড়ে দৌড়া দৌড়ি, এটাওটা ছুড়ে ফেলা, গ্লাস ভেঙে ফেলা চলতেই থাকে।
তুর্জের এখন ছয় বছর। ওকে দেখে রাখা আর বাসার টুকিটাকি কাজ করার জন্য একটা আট বছরের মেয়ে আশাকে রাখা হয়েছে। তুর্জের মা তুর্জকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকায় বাসার সব পরিশ্রম একা আশাকেই করতে হয়। আশা ছোট্ট হলেও কখনো কোন কাজে ফাঁকি দেয়না। এ বয়সে যার একটু খেলার কথা, পড়াশুনার কথা তার প্রতি বিন্দুমাত্র নজর না দিয়ে তাকে শুধু অমানুষিক খাটিয়েই যায় মৌরি।
আর তুর্জও আশাকে পেলেই চুল ধরে টানতে থাকে, লাথি দেয়। কিন্তু মৌরির এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা তো নেইই, আশার প্রতি তার নিজের অত্যাচারও মাঝে মাঝে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।
মৌরির ফ্লাটের প্রতিদিনকার ঘটনার একটা উদাহরন দেই। আশা হয়তো ঘর গুছাচ্ছে, আর ওদিকে তুর্জ ঘর আরো অগোছালো করছে। মৌরি হয়তো সন্তানকে থামাবার জন্যে আধোবুলি দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছে।
কিন্তু বাধা দিচ্ছে না। এর মধ্যেই হঠাৎ তুর্জ সোফার পাশের টেবিলে রাখা দামী ফুলদানিটা ভেঙে ফেলল। ফুলদানিটা মৌরির প্রচন্ড পছন্দের ছিল। তাই নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলনা। আশাকে ধরেই ধাম-ধাম পেটাতে শুরু করল।
ঘটনার আকস্মিকতায় আশা কিছুই না বুঝতে পেরে চিৎকার করে বলতে লাগল, "খালাম্মা, আমি কি করসি, আমি কি করসি?" মৌরি পেটানো না থামিয়েই বলল, "তুই এটা এখানে রেখেছিস কেন?" আশা মারের ব্যাথায় উহ-আহ শব্দ করতে করতেই জবাব দিল, "আম্নেই তো আমারে এইটা শুকেস থেইক্কা এইখানে রাখতে কইছেন। আমারে আর মাইরেননা, আমারে ছাইড়া দেন। " মৌরি আরো রেগে বলল, "আমি বললেই রাখতে হবে, গাধী,..... আজ তোর ভাত বন্ধ, ....তোর কারনেই আজ আমার পছন্দের ফুলদানিটা ভেঙে গেল। আমি তোর আগামী তিন মাসের বেতন থেকে এই টাকা উদ্ধার করবো, শয়তান কোথাকার। " আশা মারের হাত থেকে রক্ষা পেতে মৌরির শর্ত মেনে নিলেও মার থামল আরো দুমিনিট পর।
এদিকে মায়ের দেখাদেখি তুর্জও আশাকে দুইটা লাথি দিল।
এভাবে প্রায় প্রতিদিনই আশাকে সারা শরীরে ব্যাথা আর জখমের যন্ত্রনা নিয়ে কাজ করতে হয়। তার উপর প্রায়ই বেতনটাও হাতছাড়া হয়ে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।