দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
রিক্সাটা অন্ধকার মত একটা যায়গায় থামিয়ে রিক্সাঅলা বলল,
'আর পারলাম না'
এই বলে তরিঘরি করে দেয়ালটা ঘেঁসে বসে পরল সে।
'আপনে একটু দাড়ান আমি পেশাবটা কইরা লই। '
আমি থতমত খেয়ে যাই,
ঠিক আছে আমি যাইগা।
এই বলে পকেট হাতরে খুজে পাই তিনটা দশ টাকার নোট বাদ বাকী সব পাঁচশো।
ভাড়া হইল চল্লিশ টাকা।
দাড়িয়ে থেকে এই দৃশ্য দেখার চে পেছনের দোকানে ফ্লেক্সি লোড করতে গেলাম। আজকাল ফ্লেক্সি অলা পোলাটা দশটা না বাজতেই দোকানের ঝাপ ফেলে দেয়! ফিরে এসে আবার রিক্সায় উঠি, গলির শেষ মাথায় ছয় তলা সাদা বিল্ডিংটার পাঁচ তলায় আমার এপার্টমেন্ট। শীতের রাত, দারোয়ান ছেলেটা তারাতারি তালা লাগিয়ে শুয়ে পড়েছে। আমি গেটে দুইটা থাপ্পর দিলাম।
গ্যারাজের কোনায় রফিকের ঘরে বাতি জ্বলে। রফিক চাবি হাতে চোখ ডলতে ডলতে গেইট খুলে দেয়।
... সিড়ির সামনে পাপশটায় একটা কুকুরের বাচ্চা শুয়ে থাকত প্রতিদিন। আমি সিড়িতে পা রাখলেই আমার পিছু নিয়ে পাঁচ তলায় উঠে আসত। সারাটা রাত আমার এপার্টমেন্টের দরজার সামনেই শুয়ে থাকত।
দিনে যখন আমি বেরিয়ে যাই গলির মাথা পর্যন্ত আমার পিছু পিছু আসে। আমি রিক্সায় ওঠার আগে বলি, হইছে এইবার বাড়ী যাও। কি বুঝত কে জানে, উল্টা দিকে ঘুরে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিত রোলার।
মাস ছয়েক আগে রাতে বাড়ী ফিরেছি, সিড়ি ভাংতে শুনি একটা বাচ্চা কুকুরের কাঁই কুই। বিল্ডিং এর দারোয়ান দু'জন আর তাদের সাথে এক ড্রাইভার তিন জন মিলে কুকুরের বাচ্চা একটাকে এনে সিড়ির ঘরের কোনায় রেখেছে।
ক'দিন পর দেখি কুকুরের গলায় একটা চামড়ার বেল্ট লাগিয়ে দিয়েছে ওরা সাথে একটা ঝুমঝুমি বেধে দিয়েছে। রফিক কে জিজ্ঞেস করি, এইটার নাম কি রফিক! রফিক বলে, নাম রাখছি স্যার 'রোলার'। আমি বলি, বাহ্ সুন্দর নাম। হ্যালো রোলার! রোলার আমার দিকে তাকায়। কুকুরের বাচ্চা বরাবরই দেখতে আমার ভীষন আদর লাগে!
এবার ঢাকায় যখন কইষা শীত পরতে ছিল মাঝে মাঝে রাতে এসে দেখতাম আমি ফেরার আগেই রোলার আমার দরজার সামনের পাপশটায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে রয়েছে! আমি আস্তে আস্তে দরজায় চাবি গলিয়ে টুক করে দরজাটা খুলতে খুলতে রোলার কে ফিস ফিস করে বলি, এক্সকিউজমি রোলার।
একটু সাইড দিবা বাবা! রোলার ঘুম জড়ানো চোখে শরীরটা একটু সরিয়ে আমাকে ভেতরে ঢুকার যায়গা করে আবার ঘুমিয়ে যায়। ঘরের ভেতর একা আমি রাত জাগি। আমার দরজায় ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে একটি শিশু কুকুর।
অটোয়ায় ফোন করি। তখন কানাডায় সকাল দশটা ছোট মেয়েটা ফোন ধরে,
ববা তুমি কি কর!
টিভি দেখি।
মা কোথায় বাবা?
মা কাজে।
আপা?
আপা ঘুমায়।
শনিবার সকাল সকাল। বাচ্চা দুইটাকে বাড়ীতে একা রেখে জীবন যুদ্ধে বেরিয়ে পরেছে মীরা। বড় মেয়েটা ওর রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছে।
ছোট মেয়েটা একা একা নীচে সোফায় শুয়ে শুয়ে টিভি'র দিকে তাকিয়ে আছে নিশ্চই।
বাবা, কিছু খাইছ?
হ্যা, দুদু দিয়ে ছিল মা।
বাবা, গায়ে জামা পড়েছ?
না, কাথা গায়ে দিয়েছি।
লাইনটা কেটে যায়। আমার ফোনে আর কোন ব্যালেন্স নাই! ঢাকায় শহরে গভীর রাত।
মনটা খারাপ হয়ে গেল খু্ব। কে জানে ঘরের দরজাটা ঠিক মত লাগানো আছে কিনা!
অস্থির লাগতে থাকে, ভীষন একা বোধ করতে থাকি। ঢাকা শহরে এবার ভীষন শীত পড়েছে। ঘরের দরজাটা খুলে এক টুকরা কাপড় রোলারের গায়ে চাপিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে ফিরে আসি। ...
আজ ক'দিন ধরেই আসতে যেতে রোলারকে আর দেখি না।
এই ক'মাসেই রোলার কেমন বড় হয়ে উঠছিল। আমার এক হাতে স্টারের একটা কাচ্চি বিরিয়ানীর প্যাকেট আরেক হাতে পানি, রুটি আর কলা। সিড়ি দিয়ে ঊঠতে উঠতে রফিক কে জিজ্ঞেস করি,
রফিক কুত্তাটা কইরে, কয় দিন ধইরা দেখি না?
কুত্তাটা ত স্যার হেই দিন গাড়ীর তলে পরছিল।
মানে!
কুত্তাটারে একটা গাড়ী হেইদিন চাপা দিয়া মাইরা হালাইসে স্যার।
পাঁচ তলার সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে উঠতে মনে হচ্ছিল রোলারের কথা।
দরজায় এসে কিচ্ছুক্ষন দাড়িয়ে রইলাম।
একাকী এই শহরে তবুও দরজায়
কেউ ত এক জন,
অন্তত আমার জন্য অপেক্ষয় থাকত!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।