আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাক্সে লাশ নাই



এই পোষ্ট অন্যের পোষ্টে Click This Link করা আমার মন্তব্যের সংকলন। "বাক্সে লাশ নাই" বলে হাসিনা, সেলিম ও জলিলের সংসদে দেয়া বক্তব্য নিয়ে আমরা রাজনীতি তোলপাড় করার মাতাল প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি। এটা তাই নিয়ে। ওই পোষ্টে জাতীয়তাবাদী শুভকে আমার নতুন প্রজন্মের একজন মনে হয়েছে। ইতিহাসে পাঠের জন্য ওর আকুতি আমাকে নাড়া দিয়েছিল।

অনেক দেরী ওখানে প্রবেশ করায় ওখানে করা আমার মন্তব্য দুটো এখানে পাঠক সবার পড়বার জন্য আবার সংকলিত করে দিলাম। ______ শুভ, আপনার উদ্দেশ্য মনে হচ্ছে প্রত্যক্ষদর্শী ফ্যাক্টস সংগ্রহ। কারণ, আপনি হাসিনা, সেলিম, জলিলের সংসদে দেয়া বক্তব্য শুনে আরও অনেকের মত মন এলোমেলো করে ফেলেছেন মনে হচ্ছে। আমি বিএনপি, আওয়ামী লীগ কোনটাই করিনি কখনও। কিন্তু জিয়ার লাশ দেখতে গিয়েছিলাম; লাশ ঢাকায় আনার পর এখন যেটা প্রধানমন্ত্রীর অফিস, এর উঠার সিড়ির সামনে গাড়ি বারান্দা মতন জায়গায় সেখানে প্রথম লাশের বাক্স রাখা হয়েছিল এবং সে বাক্স পর্যন্ত জনগণের যাওয়ার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল।

আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র; আমার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মেননের ছাত্র সংগঠন করত। তাঁর একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ কথা ছিল আজও মনে হয়। ও বলত যেকানে দল বা নির্দলের গণজমায়েত বা পাবলিক জমায়েতে গেলে - জনগণের প্রতিক্রিয়া কাছ থেকে জানা বুঝার একটা সুযোগ পাওয়া যায়। ফলে সে আর আমি জিয়ার লাশ দেখতে গিয়েছিলাম। ঠিক একইভাবে এর দুসপ্তাহ আগে শেখ হাসিনা সভাপতি হয়ে ভারত থেকে দেশে প্রথম ফিরেছিলেন এক কালবৈশাখীর ঝড়ো বিকেলে, সেখানেও গিয়েছিলাম।

একইভাবে ২৪ মার্চ ১৯৮২ এরশাদের সামরিক ক্ষমতা দখলের দিন সকালে বঙ্গভবন, গুলিস্তানের আশেপাশে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমরা গিয়েছিলাম, জিয়ার লাশ যখন প্রথম ঢাকার পৌছায় তার পরে তবে জানাজার আগে। আমার যতটুকু মনে পরছে আমরা গিয়েছিলাম সন্ধ্যার দিকে, জানাজা পরদিন হয়। মোট কথা আমরা জানাজায় যোগ দিতে যাইনি, এখনকার প্রধানমন্ত্রীর অফিস আগেই যেখানে লাশ রাখা হয়েছিল - সেখানে গিয়ে দেখেছিলাম। ঐ অফিস তখন সংসদ সদস্য ও সংসদ সংশ্লিষ্ট সরকারী সামরিক বেসামরিক অফিসার - এদের বাসস্হান হিসাবে ব্যবহৃত হত।

পরে, সম্ভবত এরশাদের আমলের শেষের দিকে, পুরা বিল্ডিং সংস্কার করে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের আজকের রূপ দেয়া হয়। এরও আগে শেখের আমলে আবার ওটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম সংসদ ভবন। নতুন সংসদ ভবন ১৯৭৯ সালের নির্বাচনের পর নির্বাচিতদের নিয়ে প্রথম চালু হয়। তো আমারা পৌছাতে পৌছাতে কৌতুহলী মানুষের ভীর এত বেড়ে যায় যে লাশের বাক্স পর্যন্ত পৌছানোর জন্য এক লাইনে লাইন করে দেয়া হয়েছিল। আমরা লাইনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলাম ফার্মগেট থেকে।

লাশের বাক্স খোলা ছিল না। নিক ক্যামেরাম্যান যেভাবে বলেছেন, "ব্রাশ ফায়ারে একটা চোখ সহ মূখের একাংশ উড়ে গিয়েছিল" - এরকমই একটা ব্যাখ্যা শুনেছিলাম। ওখানে তাই বাক্স খুলে কাউকে দেখতে দেয়া হয় নাই। তবে খালেদা বা পরিবারের লোকজনের সামনে খোলা হয়েছিল কিনা আমার জানা নাই। পরিবার, নিকট আত্মীয়স্বজনের লাশ দেখার বিষয় - এগুলো পাবলিকের সামনে বাক্স উন্মুক্তে এনে রাখার আগেই শেষ করা হয়েছিল।

আমি হাসিনা, সেলিম, জলিলের সংসদে দেয়া বক্তব্য শুনে অস্বস্তিবোধ করেছি। ১. আমাদের পল্টনের বক্তৃতায় যে পলিটিক্যাল গিমিকের ভাষা শুনে থাকি তা সংসদের বক্তৃতায় শুনব না - এটাই আশা করি। মাঠের বক্তৃতায় জনগণকে উত্তেজিত করতে, জমায়েত জমাতে অনেক পলিটিক্যাল গিমিকের ব্যবহার দরকার হতে পারে, কিন্তু সংসদে এটা চিন্তা করতে পারি না। সংসদ আইন প্রণয়নের রাষ্ট্রের সরকারী জায়গা, সরকারী পদপদবী ধারণ করে সবাই সেখানে আসে; ফলে সেটা শতভাগ অফিসিয়াল এবং এর রেকর্ড রাখাও হয়। ফলে অফিসিয়াল কাজকর্মের মর্যাদা রাখার একটা বিষয় সবাই খেয়াল রাখবে এটা আমরা আশা করি।

আমাদের স্বল্পআয়ের অভাবগ্রস্হ পরিবারগুলোতে দুই জা জায়ে, যে ঝগড়ার ভাষায় বিভিন্ন প্রসঙ্গে অমার্জিত অপরিশীলিত কথা বলতে দেখি এবং তা আমাদের দেখাশুনার অভিজ্ঞতা আছে - এগুলো সংসদের অফিসিয়াল কাজকর্মেও হতে দেখব এটা অপ্রত্যাশিত, অমার্জিত অপরাধ; বক্তার কী ধরণের টেষ্ট তাই কেবল ওখান থেকে বুঝা যায়; আমাদের রাজনীতি কী ধরণের ও কীভাবে নীচতা, তর্কে লিপ্ত হয় এটা তার একটা ব্যাপারও বটে। ২. জিয়াউর রহমান মারা গিয়েছেন। এটা একটা ফ্যাক্টস। যেকোন নৃশংসভাবে মৃত্যু সহমর্মিতা আশা করে। আমাদের ব্যক্তিগত চরম শত্রু, এমনকি দেশের শত্রুও হলেও তাঁর নৃশংসভাবে মৃত্যুতে উল্লাস প্রকাশ করা মানবিক বা স্বাভাবিক নয় বরং একটা সিরিয়াস রোগ, pathology এর বিষয়।

ফ্যাক্টস হলো, জিয়ার নৃশংসভাবে মৃত্যু ঘটেছে, এরপর আরো দুই জনের আর্মী অফিসারের সাথে তেরপলে জড়িয়ে একই খননে মাটিচাপা দেয়া হয়, কবর হয়েছে বলতে পারলাম না, দুঃখিত। এরপর কমপক্ষে আটচল্লিশ ঘন্টা পর লাশ খুঁজাখুজি করে বের করে তোলা হয় এবং ঢাকায় পাঠাতে কমপক্ষে আরও চব্বিশ ঘন্টা যায়। এই পুরো প্রক্রিয়ার পরে লাশ বিকৃত, গলিত হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। এরপর জিয়ার লাশ বাক্সে যদি কয়েকটা ছিন্নভিন্ন পোষাক, হাড়গোড় বা একটা চুল বা কিছুই না থেকে - তাও হতে পারে। কিন্তু এথেকে খুশির বিষয় বা ডিএনএ চ্যালেঞ্জের বিষয় বের করে আনা - একটা প্যাথোলজিক্যাল সমস্যা, মানসিক অসুস্হতা।

লাশ বা টুকরা কিছু অংশ - যাই থাক বাক্সটা এর প্রতীক মাত্র। শেখ হাসিনার "বাক্সে কিছু নাই" বলার মানে কী? তিনি নিশ্চয় জিয়া মরেনই নাই এটা বলছেন না। তবু তিনি যা বলতে চাচ্ছেন ওর সবটাই ইঙ্গিতে। সম্ভবত বলতে চাচ্ছেন জিয়া এতই খারাপ মানুষ ছিলেন যে তাঁর নৃশংস মৃত্যু হয়েছে এবং লাশটাও ঠিকঠাক মত হয়ে এককাট্টা পাওয়া যায় নাই - এরকম কিছু একটা। কেউ খারাপ মানুষ হলেই তাঁর মরার পর লাশ পাওয়া নিয়ে সমস্যা হবে - এরকম কোন কো-রিলেশন নাই আমরা সবাই বুঝি; তবে আমরা এটাও বুঝি এর অর্থ কী।

পরিবারে স্বল্পআয়ের বৌ-জা'য়ের সংসারে ছোটখাট মালামাল নিয়ে রেষারেষি থাকে, তাতে খোটা দেয়া, খামোখা নিচা দেখানোর জন্য জা'য়েরা পরস্পরকে এমন কাজ করে থাকে। এতে বৌ-জা'য়ের মনের ঝাল মিটে হয়ত, এর বাইরে অমানবিকতার চাষাবাদ, নিজের কুটিল নিচা মনের প্রকাশ ঘটানো ছাড়া কোন লাভালাভ হয় না। তবে নিঃসন্দেহে এধরণের কটু কথা ঘটনার এক অমানবিক উপস্হাপন। কারও মৃত্যুর পর স্বজনরা তাঁর লাশ পায়নি এটা শুনলে আমরা সহমর্মী হয়ে উঠি - এটা সমাজের রেওয়াজ; তবে আমরা আলগা করে মানবিকতা চর্চা জারী করতে চাই এজন্য সহমর্মী হয়ে উঠি তা নয়। বরং আমরা নিজেকে ঐ স্বজনের জায়গায়, কী খোদ ঐ লাশের জায়গায় বসাই - এর পর ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠি; তাই সহমর্মীতা, একাত্মতা চলে আসে মনে - এজন্য অপর এর বিষয়ে এই ইন্দ্রিয়-অনুভুতিটাকে ঘুরিয়ে মানবিকতা বলছি।

যে অপরে বিশ্বাস করে না সে সমাজের জন্য বিপদজনক - সবছাপিয়ে বরং খোটা দেবার জন্য এই সুন্দর সুযোগ, এটাই কেবল যখন মাথায় আসে সেটা আমাদের রাজনীতি, সমাজ সবার জন্যই বিপর্যয়কর। শত্রুর সঙ্গে শত্রুতা তাঁর মৃত্যু-লাশ হবার পরই খতম। এরপর ঐ লাশের বিকৃতি নিয়ে - তা সে এরপর তাকে আবার খুচিয়ে খুচিয়ে মারার মত কাজ করে কাউকে যদি মনের শান্তি পেতে হয় - খোটা দিবার হাতিয়ার বানাতে হয় তবে বুঝতে হবে সেটা তখন একটা গভীর প্যাথোলজিক্যাল সমস্যা, মনের অসুখ। সমাজ সংস্কৃতির জন্য এএক মারাত্মক ক্ষতিকর অসুস্হতা। শুভের পোষ্টের আলোচনায় একটা জিনিষ সবাই মিস করছেন।

খেয়াল করেছেন নিশ্চয় লাশ দেখতে যেতে যাদেরকে পেয়েছি, বলেছি - "কৌতুহলী জনগণ", এরা প্রায় ৯৫ ভাগ সাধারণ মানুষ, কোন দলীয় পরিচয় নয়। কারণ, এর বিগত ৪৮ ঘন্টা দেশ সেনাবাহিনী দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ফেনীর শুভপুর ব্রীজের দুপারে পরস্পরের প্রতি অস্ত্র তাক করে বসেছিল। ফলে জনগণের মধ্যে একটা গভীর উৎকন্ঠা কাজ করছিল। খবর সংগ্রহ, কোথায় কী ঘটছে জানা - মানুষ নিজের জান, পরিবার, সমাজ রাষ্ট্র নিয়ে এক বিরাট উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাচ্ছিল সবাই। এই ফ্যাক্টরটা সবাইকে গোনায় ধরতে বলব।

এই উৎকন্ঠা, উদ্বেগই পরে জিয়ার প্রতি সহানুভুতি হিসাবে হাজির হয়ে যায়। কারণ শেষ বিচারে মানুষ স্হিতিশীলতার পক্ষে চলে যায়, যারা অশান্তি সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়। বিশেষত অশান্তির শেষে সফল ও সামাজিক অর্থে ভাল ফলাফল দেখা না যায়। এই প্রসঙ্গ এখানেই শেষ করে দ্বিতীয় প্রসঙ্গে যাচ্ছি। __ শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণে "পাকিস্তান জিন্দাবাদ" বলা প্রসঙ্গটা শুভের পোষ্টে নিক লুৎফুল কাদের তুলেছিলেন, তাকে বলেছিলাম: মুজিব ৭মার্চের ভাষণের শেষে "পাকিস্তান জিন্দাবাদ" বলেছিলেন - এনিয়ে অনেকে শেখ মুজিবকে গায়ে কালি লাগিয়ে দেবার চেষ্টা করেন।

আমরা অনেকে অনেক জেনুইন কারণে শেখ মুজিবকে অপছন্দ করি হয়ত কিন্তু নিচা দেখানোর চেষ্টা বিশেষত "পাকিস্তান জিন্দাবাদ" স্মরণ করিয়ে দিয়ে - এটা বেকুবি; সেইসাথে এটা এক মারাত্মক অন্যায়, অবিবেচক ইতিহাস পাঠ। বই উল্টো করে ধরে পড়া শুরু করার মতই এক সমস্যা। অনেকে মনে করেন শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাইনি এটা তার অকাট্য প্রমাণ। এটাও ১০০ ভাগ ভুল পাঠ। আমাদের মনে রাখতে হবে, ১. শেখ মুজিব তখন ফ্রেবুয়ারীর শেষ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সাথে নিয়মিত ফরমাল আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।

২. শেখ মুজিব লীগাল ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে অনুষ্টিত ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে আহুত নির্বাচনে আইনীভাবে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা ও বাই ডিফল্ট প্রধানমন্ত্রী, যাকে বলে Priminister Elect তিনি। নির্বাচনের সরকারী ফলাফল ঘোষণা হয়ে গেছে, কেবল শপথ নেবার অভিষেক, আনুষ্ঠানিকতা বাকি। ৩. আমরা সেই ১৯৬৯ থেকেই আন্দোলন আইনী পথে অর্থাৎ মাস-মুভমেন্ট, সশস্ত্র আন্দোলনের পথে নয় - এই লাইনে আগাচ্ছিলাম; মাঝের নির্বাচন ওটাও সেই গণআন্দোলনের অংশ। এটাই, শেখ মুজিব যে আইনী বৈধতায় বাংলার একছত্র, অবিস্মাদিত নির্বাচিত প্রতিনিধি - তা আইনী প্রমাণ করে রাখা গেছিল। ফলে এই আইনী লাইনের গণঅভ্যূত্থান, আন্দোলনের সুযোগের সর্বশেষ ধাপের পৌছানোর আগে, আলোচনা তিনি চান না অথবা তিনি পাকিস্তাই মানেন না - এটা তিনি বলতে - মুখে কখনই ফরমালি বলতে পারেন না।

এটা আত্মঘাতি হত। ৪. সব খেলার একটা নিয়ম থাকে। আইনী লাইনের গণঅভ্যূত্থান, আন্দোলনের খেলার নিয়ম হলো, যদিও সব পক্ষ, জনগণ সবাই জানে পাকিস্তান আর নাই - কিন্তু এটা শেষ হবে কী করে এটা গুরুত্ত্বপূর্ণ প্রশ্ন। শেখ মুজিব "পাকিস্তান মানেন না" একথা তিনি নিজে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করলেও আইনী কারণ, খেলার নিয়মের কারণে, বলা যাবে না; এটা বলা মানে আত্মঘাতি; কারণ এটা বলার পরদিন তিনি আবার ঐ রাষ্ট্রের প্রধানের সাথে কোন আলাপ আলোচনায় যেতে পারেন না। আলোচনার জন্য ভাব ধরা সমস্ত খোলা পথ শেখ মুজিবই বন্ধ করে দিলেন এই অজুহাত, দায় সবই তাঁর উপর আসবে; শেখ মুজিব মানে আমরা সবাই, যার আঙ্গুলের ডগায় জনগণের ইচ্ছার সম্মিলিত প্রকাশ ঘটে গেছে।

তাঁকে গ্রেফতার, এমনকী ফাঁসিতে লটকে দেবার আইনী সুযোগ ইয়াহিয়ার হাতে আমরা তুলে দিতে পারি না। ৫. এইজন্য বেষ্ট পথ হলো ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। ঐ ঘোষণা একদিকে স্বাধীনতার ডাক, আলাদা হবার ডাক - যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়া, প্রতিরোধ গড়ার ডাক - সবই আছে। আবার আইনী দিক থেকে দেখলে শেষে "পাকিস্তান জিন্দাবাদ" বলার কারণে এই বক্তৃতা লিগালী কাভার্ড; তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগে উপস্হিত পাকিস্তান আইনে গ্রেফতার, ফাঁসী দেবার - এসব প্রক্রিয়ার কোন সুযোগ নাই। আবার ইতিহাসে প্রমাণ হয়ে থাকল আলাপ আলোচনার পথে সমাধানের পথ exhaust করার শেষ পর্যন্ত সুযোগ তিনি রেখেছিলেন।

এএক দূর্দান্ত দূরদর্শী ঐতিহাসিক ভাষণ। ৬. এক কথায় ৭ই মার্চের ভাষণ ঐসময়েরই উপস্হিত রিয়েলিটিরই প্রতিচ্ছবি। ২৫ মার্চের রাতে নির্মম আক্রমণের পর ঐ লীগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (LFO) - এই আইনী খেলার নিয়ম ভাঙ্গার দায়দায়িত্ত্ব ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর কাঁধে বর্তায়। আইনী খেলার নিয়মের পরিসমাপ্তি ছিল ওটা। ভগ্ন দূর্দশাগ্রস্হ নিপীড়ক পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি আমাদেরও কোন আইনী, রাজনৈতিক দায় থাকল না।

সত্যিকার অর্থেই আমরা তখন সেদিন থেকে মুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। যদিও এর জন্য আমাদের অপরিসীম মূল্য চুকাতে হয়েছিল। অসংখ্য সাধারণ মানুষ, পিলখানার বিডিআর, সেনা ইপিআর ইউনিট, পুলিশ ব্যারাকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অত্যাচার নৃশংসতা, নির্মমতা, হত্যায় আমাদের মানুষকে বলি হয়ে গিয়ে সে মূল্য চুকাতে হয়েছিল। ৭. গণ-আন্দোলন সংগ্রামের বিপরীতে সশস্ত্র আন্দোলনের পথে আগানোর পথ সম্পূর্ণ ভিন্ন - যে খেলার যে নিয়ম। এই পথে হাতে অস্ত্র তুলে নেবার সময় থেকেই ঘোষণা দিয়ে বলা যায় এবং বলা উচিতও যে উপস্হিত রাষ্ট্র, সরকার সেনাবাহিনী আমি মানি না।

অর্থাৎ এখানে রাষ্ট্র ভাঙ্গার ঘোষণা আগে দিয়েই আন্দোলন শুরু করা সম্ভব এবং তাই করা হয়। ৮. আন্দোলনের যে দুই পথের কথা বললাম - এটা ভাবা বেকুবি হবে যদি ভাবি কোন পথ বেশি ভাল। এটা ভাল মন্দের প্রশ্ন নয়; স্রেফ বাস্তবতা বিবেচনা ও আন্দোলনের কৌশল বা ষ্ট্রাটেজির প্রশ্ন। উপস্হিত বাস্তবতায় কোন পথে ফল বেশী, লক্ষ্যে পৌছানো সহজ, সম্ভব - তার সুচারু বিবেচনা কৌশল। তবে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ কিছু ভুল ত্রুটি, বড় বড় খামতি সেখানে অবশ্যই সাথে আছে, তা থাকা সত্ত্বেও এর একটা ইউনিক বৈশিষ্ট হলো, এখানে দুই পথকেই পরিমিত পরিমাণে ও সঠিক সময়ে ব্যবহার করে সফলতায় নেয়া গিয়েছিল।

শেষ কথা বাংলাদেশ ইজ এ রিয়েলিটি। ইতিহাসে পাঠে অবিচার মানে নিজের সাথে অবিচার, বিপথগামী হওয়া; যার পরিণতি নিজের ভুলে আজ এবং আগামীতে নিজের জন্য গর্ত খুড়ে রাখা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.