http://profiles.google.com/mshahriar
বইমেলায় ঘুরতে ঘুরতে একটা স্টলে এরিক মারিয়া রেমার্কের একটা বইয়ের অনুবাদ দেখলাম৷ নাম- দি স্পার্ক অব লাইফ৷
যদি বলি, এরিক মারিয়া রেমার্ক আমার হার্টথ্রব লেখক, তাহলে আসলে কিছুই বলা হয় না৷ আসলে কোনো ভাষাতেই রেমার্ক আমার কতোটা প্রিয় সেটা লিখে বা বলে বোঝানো যাবে না৷ তার এই বইটা আমি পড়িনি৷ বইটা দেখা মাত্রই কেনার জন্য লাফিয়ে উঠলাম৷ কিন্তু... কিন্তু... হায়... বইটার অনুবাদক কে?
অনুবাদকের জায়গায় নাম লেখা- জুলফিকার নিউটন৷ জুলফিকার নিউটনের অনুবাদ আমি পড়িনি৷ পড়ার কোনো ইচ্ছেও নেই৷ সে অন্যের লেখা নিজের নামে চালায়৷ এমনকি, অনুবাদটাও সে নিজে করে না, অন্যের অনুবাদ নিয়ে সেখানে নিজের নাম বসিয়ে দেয়৷ আর সবচেয়ে হাস্যকর, বাজারে প্রকাশিত অনুবাদ বই থেকেই সে এই কাজটা করে৷ কিম আশ্চর্যম!
জুলফিকার নিউটন কিভাবে বাজারে প্রকাশিত অন্যের অনুবাদ, এবং অন্যের মৌলিক রচণা (সেটাও আগেই প্রকাশিত) নিজের নামে চালিয়ে দেয়, সেটা নিয়ে রেজাউল করিম সুমন বিস্তারিত বলেছেন এই লিঙ্কে ৷ সেখান থেকে কিছু অংশ এখানে তুলে দেই:
এ বছরই প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত উপন্যাসের জুলফিকার নিউটন-কৃত বঙ্গানুবাদ। এসব বইয়ের কোনো কোনোটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। রোদেলা প্রকাশনীর মবি ডিক-এ তাঁর ভূমিকা পড়তে গিয়ে বুঝতে পারি যে, এরই অংশবিশেষ ব্যবহৃত হয়েছে শিল্পের নন্দনতত্ত্ব বইয়ের ফ্ল্যাপে। এই ভূমিকা থেকেই জানতে পারি :
‘জুলফিকার নিউটন একাধারে লেখক, গবেষক এবং অনুবাদক। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সাড়া জাগানো কিশোর উপন্যাস ‘ইলাডিং বিলাডিং’ এবং প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘শিল্পের নন্দনতত্ত্ব’।
তারপর থেকে তিনি নিরলসভাবে লিখে যেতে থাকেন যা আমাদের সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাকে সমৃদ্ধ করেছে। ’
শিল্পের নন্দনতত্ত্ব কি তাহলে এর আগেও প্রকাশিত হয়েছিল?
মবি ডিক-এর অনুবাদ প্রসঙ্গে কবীর চৌধুরী লিখেছেন :
‘জুলফিকার নিউটনের মেলভিলের ‘মবি ডিক’ উপন্যাসের অনুবাদ সাবলীল উপভোগ্য, উচ্চ প্রশংসার দাবিদার। … হারমান মেলভিলের চিরায়ত উপন্যাস ‘মবি ডিকে’র জুলফিকার নিউটনকৃত সাবলীল বাংলা অনুবাদ পাঠক মহলে সমাদৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস। অনুবাদ তাঁর পূর্ব প্রতিষ্ঠাকে অধিকতর সংহত ও উজ্জ্বল করবে। ’
প্রবীণ বহুপ্রজ অনুবাদকের এই শুভকামনা সত্ত্বেও অমনটা ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই! ২০০৫ সালে কলকাতার প্যাপিরাস থেকে মুদ্রিত গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য অনূদিত মবি ডিক হাতে নিলেই আরো একবার চমকে উঠতে হবে সবাইকে।
ওই অনুবাদটি প্রথম ছাপা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। চার দশক পরে মবি ডিক-এর হুবহু একই অনুবাদ করেছেন জুলফিকার নিউটন! অবশ্য যথারীতি পালটেও নিয়েছেন দু-চারটা শব্দ।
মবি ডিক-এর সঙ্গে ওই একই প্রকাশনী থেকেই বেরিয়েছে জুলফিকার নিউটনের আরেকটি অনুবাদ — ‘স্ত্যাঁদাল’-এর উপন্যাস দি রেড এন্ড দি ব্ল্যাক। ওই ফরাসি লেখক অবশ্য ‘স্তাঁদাল’ হিসেবেই আমাদের কাছে সুপরিচিত। মূল ফরাসি উচ্চারণের আরো কাছাকাছি যেতে চাইলে সম্ভবত লেখা উচিত ‘স্তঁদাল’।
সে যাই হোক, এ বইয়ের ভূমিকাও কবীর চৌধুরীর লেখা। এর শেষ অনুচ্ছেদে তিনি লিখেছেন : ‘স্ত্যাঁদালের কালজয়ী উপন্যাস ‘দি রেড এ্যান্ড দি ব্ল্যাক’-এর অনুবাদ জুলফিকার নিউটনের সাহিত্যিক খ্যাতিকে বিশ্লেতিত [?] করবে। অবশ্য বয়সে প্রৌঢ় হয়েও তিনি ইতিমধ্যে আমাদেও সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। স্ত্যাঁদালের কালজয়ী উপন্যাসটি প্রকাশের দায়িত্ব গ্রহণ করে রোদেলা প্রকাশনীর কর্ণধার রিয়াজ খান যে সাহস ও দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ’
এই উপন্যাসটি ইতিপূর্বে কি বাংলায় অনূদিত হয়েছিল? ভূমিকা-লেখক সে-প্রসঙ্গে কিছু জানাননি।
২০০০ সালে সাহিত্য অকাদেমি (কলকাতা) থেকে প্রকাশিত লাল এবং কালো বাংলাদেশেও পাওয়া যায়। মূল ফরাসি থেকে উপন্যাসটি অনুবাদ করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরাসি সাহিত্যের অধ্যাপক পূর্ণিমা রায়। সে-বইটির আদ্যোপান্ত জুলফিকার নিউটনের অনুবাদ হিসেবে ছেপে প্রকাশক মহোদয় সত্যিই ‘সাহস’-এর পরিচয় দিয়েছেন! না, ‘আদ্যোপান্ত’ বলাটা অবশ্য ঠিক হলো না। কারণ বইয়ের শুরুতে ‘প্রকাশকের বিজ্ঞপ্তি’, সবশেষে ‘স্তাঁদালের পাদটীকা’ এবং দুই খণ্ডের সূচনায় ও প্রায় সব পরিচ্ছেদের শিরোনামের নিচে উদ্ধৃত মহান লেখকদের বাণীগুলিকে নিউটন বিনা নোটিসে ছাঁটাই করে দিয়েছেন। বইয়ের ফর্মা-সংখ্যা কমাতে গিয়ে মূল উপন্যাসের অঙ্গহানি করা যেতে পারে বই-কী! সে-কারণেই বাদ পড়েছে বাংলাভাষী পাঠকের সুবিধার্থে সংযোজিত আঠারো পৃষ্ঠার ‘সংক্ষিপ্ত শব্দকোষ’ও।
রেমার্কের বইটা কেনার জন্য মনের মধ্যে আকুলি বিকুলি করছিলো৷ মনে হচ্ছিলো, কি হবে? রেমার্কের বই পড়ার স্বার্থে না হয় এই চোরটার বই কিনি৷ অনেকক্ষণ স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবলাম৷ শেষ পর্যন্ত, নাহ, কেনা হলো না!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।