এক
এক একটা দিন আসে যখন মনটা কেমন বিষণ্ন হয়ে থাকে। আবহাওয়া যে মনের উপর প্রভাব ফেলে তা খুব বুঝতে পারি। আসলে সবখানেই এমন হয়। ছোটবেলায় বৃষ্টি এলে কি ভালো যে লাগতো। শুধু ভিজতে ইচ্ছে করতো।
মা বারণ করতেন। অথচ সেই বারণ শুনতে ইচ্ছা করতোনা......শুধু মনে হতো বৃষ্টিতে ভিজতেই হবে........একটু সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সাথে দৌড়।
বাসার সামনের রেললাইনে অনেক ট্রেন দাঁড়ানো থাকতো । ছাদের উপর থেকে নেমে আসা একটা নল দিয়ে গলগল করে পানি পড়তো.......
আমরা লাইন ধরে একে একে সেই পানির ধারায় ভিজতাম। ঝরনা দেখিনি তখনো............মনেহতো ঝর্নাধারায় ভিজে যেতাম.....হাসপাতালের মাঠে জমে থাকা পানিতে সবাই মিলে ফুটবল খেলা।
কখনো সবাই শুয়ে শুয়ে আকাশে থেকে পড়া বৃষ্টির পানি খাওয়া......
এবং অবশেষে বাসায় ফিরে মায়ের বকা।
সব নিমেষেই ভুলে যেতাম শুধু এই আনন্দর জন্যই.......
রাতে জ্বর এলে মা বকতেন।
অথচ ঘুমাবার আগে গল্প বলবার সময় নিজের ছোটবেলার কত গল্প যে করতেন। সেখানে বৃষ্টিতে ভেজার স্মৃতিও ছিলো।
বলতাম ,মা তুমিও তো বৃষ্টিতে ভিজেছো।
আমায় বারণ করো কেনো?
মা বলতেন তুই যা রোগা......শুধু জ্বর আর ঠান্ডা লাগাস।
সত্যিই তাই ছোটবেলায় আমার খুব জ্বর হতো। এখন ভাবি ভাগ্যিস আমর ঘন ঘন জ্বর হতো! মা পাশে বসে মাথায় জলপট্টি দিতেন আর কত গল্প করতেন। মায়ের গল্প জুড়ে ছোটবেলার শিউলী কুড়ানো দিন।
আর বেশীরভাগই ভাইবোনদের গল্প সব।
বলতাম," মা তুমি মামা খালাদেরই ভালোবাসো বেশী "। মা মানতেন । বলতেন," ওরা সবাই আমার বুকের এত কাছের ছিলো। সব আদর ওদেরকেই করে ফেলেছি। তোদের জন্য যা আছে তা ভাইবোনের মত নয়।
"
মায়ের এই সরলতা মন ছুঁয়ে গেছে। বুকে পিঠে বড় করা ভাইবোন গুলো মাকে সারাজীবন মায়ের মতই ভালোবেসেছে। মেজবু ওদের সবার কাছেই একটা উষ্ণতার জায়গা ছিলো.....
এখনো মা তেমনি আছেন.....স্নেহের উপমা।
ফোন করলেই হ্যালো মা বললেই আমাকে চিনে ফেলেন আজো। "তিন বোনের অন্য কেউ তো হতে পারি......কেমন করে চেনো মা "? মা হাসেন।
আমি এখন জানি মা কেমন করে পারেন।
আমার রাশীক রাইয়ানের নিঃশ্বাসের শব্দ ও তো আমি চিনি। এখনো রাতে ঘুম ভেঙে গেলে রাইয়ান একবার আস্তে করে মা ডাকলেই ঘুম ভেঙে ছুটে যাই।
এভাবেই আমাদের এক একটা বোধ কেমন স্থানান্তরিত হয় শুধু, মানুষে মানুষে। যতদুরে যেখানেই যেভাবে থাকিনা কেনো এভাবেই এক একটা মানুষ আমরা জন্ম জন্মান্তর ধরে প্রিয় অনুভব গুলো বুকে নিয়ে বেড়াই।
হয়তো জায়গাটা পালটে যায় শুধু।
এবং পরিবেশ।
দুই
কয়েকদিনআগে বরফ জমেছিলো যখন।
রাইয়ানের খুশির অন্ত ছিলোনা। ও খুব খুশি হয় এমন বরফ দেখলে............সকাল স্কুলে বাসে উঠিয়ে দিতে যাই যখন..........কত গল্প করে।
বলে শীতকালই ওর পছন্দ। বরফ এ খেলতে ওর খুব ভালো লাগে।
ওর পছন্দ বরফ নিয়ে খেলা...........
বাস না আসা পর্যন্ত সব ছেলেমেয়েরা খেলা করে।
রাইয়ান এর সবচেয়ে ভালো লাগে বরফে শুয়ে গড়াগড়ি করতে। বাটারফ্লাই বানাতে......মাঝে মাঝে ছুটির দিনে আমদের বলে চলো বাইরে যাই,স্নোবল ফাইট খেলি।
সুযোগ পেলেই আমাকে স্নোবল বানিয়ে মারে। বাবার সাথে শুয়ে থাকে বরফে।
রাস্তার বরফগুলোকে গাড়ি এসে একসাথে জমা করে পাহাড়ের মত ঢিবি বানিয়ে রাখে। ওখানে উঠে ওরা স্লাইড এর মত নামে......
আমি ওকে দেখি। ছোটবেলার বৃষ্টিভেজা দিনগুলো মনে হয়।
ওকে বারন করিনা। মনে হয় খেলুক। যা ওর ভালো লাগে করুক। প্রকৃতির সাথেই চেনাশোনা হয়ে বড় হোক। সবছেলেমেয়ে গুলো এমন আনন্দ করে।
ওদের আনন্দ চেয়ে চেয়ে দেখি। মাটিতে শুয়ে ওরা আকাশ থেকে পড়া বরফ খায়। অবাক হয়ে দেখি...আমরাও এভাবে কত বৃষ্টির পানি খেয়েছি!
আহারে," সেই যে আমার নানা রং এর দিন গুলি। "
দিনগুলো সোনার খাঁচায় থাকেনা। কারোই!
প্রায়ই রাতে রাইয়ান ঘুমানোর আগে ওর সাথে কত গল্প করি।
ছোটবেলার কথা । আমার মায়ের কথা। ভাইবোনদের কথা। ও শোনে। রুপকথার মত শোনে।
রাশীক ছোটবেলায় আমার গল্প শুনে একএকবার বলতো মাম্মা এই গল্পটা অনেকবার শুনেছি......এটা নিয়ে খুব মজাও হতো। ভাইবোনদের নিয়ে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো বলতে আমার কিযে ভালো লাগতো । এখনো লাগে।
মনে মনে ভাবি......আমার ছোটবেলায় এমন কত হয়েছে.....একই গল্প বারবার শুনে মাকে বললে , মা বলতেন ভাইবোনদের গল্প করতে তার সবচেয়ে ভালো লাগে....
রাশীক বড় হয়ে গেছে.......এখন আর মায়ের গল্প শোনে না।
রাইয়ানটাও গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়ে যাচ্ছে।
মনে ভাবি...........আমাদের জীবনটা ছোট জানতাম...........একেক সময় মনে হয় যতখানি জানতাম তারচেয়ে অনেক বেশীই ছোট এই জীবনটা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।