ভোরের তারা হয়ে একাকি পথ খুজি
হয়ে গেল বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। বেশ একটা সাজ সাজ রব পড়েছিল চারিদিকে। পত্র পত্রিকা ইন্টারনেটে খুব প্রচার অভিযান চলছিল। সংগ্রামী বিদেশী ভাই বোনেরা দেখি অনেক আন্দোলন করল কিন্তু ফলাফল কি? ঘোড়ার আন্ডা! কারন প্রচার পাওয়া ছাড়া এ সম্মেলন থেকে কোন আউটপুট কি এসেছে? মনে হয় উত্তরটি "না"।
যা বুঝলাম এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল টাকা পয়সা।
যেন অনেকটা আমাদের দেশের বিয়ে বাড়ীর গেট ধরার মত অবস্হা। আমরা গরীব দেশরা হলাম পাত্রী পক্ষ আর ধনী দেশগুলো হল পাত্র পক্ষ। এখন পাত্রী পক্ষের চেষ্টা ছিল যত বেশী আদায় করতে পারি আর পাত্র পক্ষের চেষ্টা ছিল যতটা কম দিয়ে পারা যায়। এই দর কষাকষিতে তাও যা কিছু লাভ হয় পাত্রী পক্ষের। মাগার এই সম্মেলন থেকে একটা ফুটি কড়িও আয় করতে পারে নাই গরীব দেশ গুলো।
খালি থালিটা নিয়া গেছিল আবার খালি হাতেই প্রত্যাবর্তন করিল। ধনীরা মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল।
টাকা পয়সার ব্যপার অস্বীকার করা যাবে না। কারন ক্ষতি যা হবার তা হয়েছে গরীব দেশ গুলোরই। বহু দিন থেকেই শুনে আসছি বাংলাদেশ সহ নিচু এলাকার দেশ সমূহ এবং দ্বীপ রাষ্ট্র গুলোর সিংহভাগ তলিয়ে যাবে।
পত্রিকার পাতায় ছবি দেখলাম অশ্রুসজল হিমালয় পর্বতের। বরফের রুপালি মুকুট পরা যে হিমালয় দেখার আমার ছোটবেলার স্বপ্ন। সেই হিমালয়ের বরফ সব গলে যাচ্ছে ফলে হ্রদ বিস্ফোরনের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে, নদী গুলোতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাইতো আমাদের মত দেশ গুলোতে ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সুনামির কারনও কিন্তু এটাই। এখন আমাদের তলিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যপার মাত্র।
আফসোস পিপড়ার মত মারা যাবে আমাদের দেশের ভুখা নাঙ্গা নিরপরাধ মানুষ গুলো।
আমরা অনেকেই এই ভেবে আশ্বস্ত হই "এত দিনতো আর আমরা বাচব না তাই আমাদের এসব দেখতে হবে না" কিংবা অনেকে ছেলেমানুষের মত মনে করেন "আমরা উচু কোন দেশে চলে যাব যেখানে পানি আমাদের ছুতে পারবে না"। কিন্তু তা কি সবার পক্ষে সম্ভব হবে আর ধনী দেশগুলোও কি মুখিয়ে আছে আমাদের নেবার জন্য, তার উপর আমরা হলাম সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীভুক্ত দেশ, পারলে এখনই ঘাড় ধরে বের করে দেয়। এমন কি পাশের দেশ ভারতইতো শুনতাম কয়েক দিন পর পর বাংলা ভাষাভাষীদের পুশব্যাক করত। আর যারা যেতে পারবে তারাও কি বাচবে? বায়ুমন্ডলের বিরাট ফাকা স্হান দিয়ে প্রবেশ করছে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি,মানুষ সৃষ্ট কার্বন ডাই অক্সাইড ঘিরে রেখেছে পুরো পৃথিবী তাইতো বিশাল এন্টার্টিকা মহাদেশের বরফ গলছে অত্যন্ত দ্রুত ।
ইতিমধ্যেই সাগর মহাসাগরের উচ্চতা অনেক বেড়েছে। দুই দিন আগে হোক আর পরে হোক নিস্তার পাবে না কেউই।
তবে ভাল লেগেছে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যাগ। তিনি উন্নত বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষন করতে এবং সবাইকে সচেতন করতে পানিতে দাড়িয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন, সর্বোপরি পানির নীচে মন্ত্রী পরিষদের সাথে আলোচনা করে আলোড়ন তুলেছেন। তার পথ অনুসরন করে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিমালয়ের চূড়ায় মন্ত্রী সভার বৈঠক করে আলোচনায় এসেছেন।
এই মানুষ গুলোর সাথে সুর মিলিয়ে আমিও বলতে চাই এই জলবায়ু সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিল সবাইকে সচেতন করা বিশেষ করে উন্নত বিশ্বকে। তাদের কাছ থেকে যদি এই প্রতিশ্রুতি আদায় করা যেত যে তারা কার্বনের ব্যবহার বহুলাংশে কমিয়ে দিবে অর্থাৎ কলকারখানা, গাড়ী উৎপাদন অনেকটাই কমিয়ে দিবে এবং পারমানবিক চুক্তির মত করে একেকটা দেশ এই ব্যপারে চুক্তিবদ্ধ হবে। যে শর্ত ভঙ্গ করবে তার জন্য থাকবে কঠোর শাস্তি। কিন্তু আমাদের দরিদ্র বিশ্বনেতারা এই ব্যপারে পুরোপুরি ফেল। তাদের প্রধানতম লক্ষ্য ছিল টাকা পয়সা আদায় করা।
আর ধনীরা জেনে গেছে গরীবগুলাকে টাকা পয়সা দিয়ে কোন লাভ নাই, এদের দূর্নিতীগ্রস্ত নেতারা সব টাকা পয়সা খেয়ে ফেলে। আর টাকা পয়সা দিয়ে কি নিজেদের আদৌ রক্ষা করা সম্ভব হতো? ধরলাম ধনীরা কিছু টাকা দিল তারপর কয়েকটা উচু বাধ নির্মান করে কি দেশ বাচানো সম্ভব হবে? বাধ কয়দিন এই বিশাল জলরাশির ধ্বংস ঠেকিয়ে রাখবে?
পত্রিকা খুললে আমি খুব আশা করতাম হয়তো এমন কোন নিউজ দেখব যে "সব গুলো দেশ গ্লোবাল ওয়ার্মিং মোকাবিলা করার জন্য একত্র হয়েছে। কার্বনডাই অক্সাইডের উৎপাদন কিভাবে বন্ধ করা যায় সেই ব্যপারে সবাই চুক্তিবদ্ধ হবে। কিন্তু না পত্রিকা গুলো সব সময়ই আমাকে হতাশ করে। পানির তলে ডুবে মরা ছাড়া আর মনে হয় কোন উপায় নাই!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।