আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিপড়ার প্রতি ভালবাসা

আমার এক বন্ধু শাহজাহান। সে খুব জ্ঞানী। অনেক বই পড়ে। অত্যধিক নম্র ও বিনয়ী। ওর একটা বাইসাইকেল আছে।

একদিন সকালের নাস্তা সেরে ব্যক্তিগত কাজে বাইসাইকেল নিয়ে বের হলো। সাইকেলের স্বাভাবিক গতিতে চলছে ও। সাইকেল চালাচ্ছে তো চালাচ্ছে....। পথটা বিভিন্ন ধরনের গাছে ঢাকা। রাস্তার পাশে ঘাস গুলো সবুজ কার্পেটের মত বিছানো।

শাহজাহান কিন্তু, মাথা নিচু করে ধীরে ধীরেই যাচ্ছে। হঠাৎ করে সে সাইকেলে কড়া ব্রেক করে দাড়িয়ে গেল। তারপর বাইসাইকেলটা কাধে উঠালো। এবার সে পা টিপে টিপে, এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে পা ফেলে রাস্তার বেশ কিছুটা অংশ পার হলো। এখন সাইকেলটা কাধ থেকে নামিয়ে আবার সেটাতে চড়ে চলা শুরু করলো।

ঘটনাটা পাশে থেকে তার অফিসের এক কেরানী প্রত্যক্ষ করেছে। ভাবলো, শাহজাহান তো একটু বিজ্ঞানী টাইপের মানুষ। আজ হয়ত একটু বেশী পড়াশুনা করেছে, গভীর মনোযোগ দিয়ে হয়ত ভাবছে, তাই মাথায় একটু আধটু গোলমাল লেগেছে। তাছাড়া এই সুন্দর পাকা রাস্তার উপর বাইসাইকেল কাধে নিয়ে হাটবে কোন পাগলে? যাক, দুইদিন পরের ঘটনা। শাহজাহান তার চাকুরী বেতনাদি সংক্রান্ত জটিলতায় অফিসে গেলে ঐ কেরানী জিজ্ঞেস করলো, কি শাহজাহান সাহেব এখন ভাল আছেন তো? জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনাদের দোয়ায় – বলে উত্তর দিলো সে।

অফিসে আরো কয়েকজন লোক এক সাথে কাজ করছিল, কেউ অন্যখান থেকেও এসেছিল এমন ৭/৮ জনের উপস্থিতিতে কেরানী সবাইকে কৌশলে তার প্রতি আকৃষ্ট করলো এবং একটু কৌতুকের ছলে বলল- আচ্ছা শাহজাহান সাহেব, সেদিন আপনাকে শুকনো পাকা রাস্তায় দেখলাম আপনী বাইসাইকেল কাধে নিয়ে সাকো পারাপারের প্রাকটিস করলেন। সবাই শাহজানকে চিনে তাই একটু স্বত:স্ফূর্ত ভংঙ্গিতে সবাই তাকালো। শাহজাহান সবার দিকে মুখ তুলে স্বাভাবিকভাবে ঘটনাটা বলল- হ্যা, কেরানী সাহেব ঠিকই দেখেছেন আমি শুকনো পাকা রাস্তায় বাইসাইকেল কাধে নিয়ে সাকো পারাপারের প্রাকটিস করছিলাম। আসলে বিষয়টি ছিল একটি অতি মানবীয় ঘটনা। আমি যখন বাইসাইকেলে যাচ্ছিলাম, তখন দেখলাম রাস্তার ওপারের ঘাসের ভিতর থেকে সারি বেধে লাইন দিয়ে অজস্র ছোট ছোট পিপড়া রাস্তা পার হয়ে এপারের ঘাসের ভিতর যাচ্ছে।

ওদের লাইনটা বেশ চওড়া ছিল, আকা-বাকা ছিল। আমি বাইসাইকেল চালিয়ে গেলে অনেক পিপড়া আমার সাইকেলের চাকার নিচে পড়ে পিষ্ট হতো। তাই কড়া ব্রেক করে দাড়িয়ে গেলাম এবং ওভাবে কাধে করে সাইকেলটা পার করলাম। তখন ঐ অফিসের সবাই দাড়িয়ে শাহজানকে সম্মান জানালো আর বলল যে লোকটা এত ক্ষুদ্র প্রাণীর প্রতি এত মহানুভবতা দেখাতে পারে সে আসলেই অনেক বড় মাপের মানুষ। এরপর থেকে চাকুরীগত ক্লারিক্যাল কাজে শাহজাহানের কোন জটিলতা হয়নি।

কেরানীরা চাকুরীগত পত্রাদি তার রুমে গিয়ে পৌছে দিয়েছে, সময় মত সব কার্যক্রম নিয়েছে। শাহজানকে তারা বলে যে মানুষটি একটা ক্ষুদ্র প্রানীর প্রতি মহানুভবতা দেখাতে পারে আর আমরা আল্লাহর সৃষ্টির সেরাজীব মানুষের প্রতি দয়া দেখাবনা, মানব সেবাই তো প্রকৃত ধর্ম। (বাস্তব ঘটনার আলোকে লিখিত) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।