আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিপড়ার জীবন

এটম এজব এরব

এটম এজব এরব তিন পিপড়া দুইদিন ধরে খাওয়ার সন্ধানে এই এলাকায় চষে বেড়াচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন খাদ্যবস্তুর সন্ধান মিলেনি। বস্তুত এখানে মানববসতি একটু কম। তারা মানব বসতির সন্ধান করছে। শীত চলে এল বলে।

ঠান্ডার সময়ে তাদের সবার নিরাপদ প্রকৌষ্ঠে চলে চলে যেতে হবে। এইসময় টা তাদের যতটুকু সম্ভব রসদ সংগ্রহ করার।

বিরাট এক পাহাড়ের মত কি যেন ভেঙ্গে পড়ল হঠাৎ করে তাদের মাথার উপর। তিনজন তিনজনকে আকড়ে পড়ে রইল কিছুক্ষন। তাদের উপরে কি পড়েছে দেখার জন্য মুখ তুলতে দেখল অতিকায় নেটের মত ব্যাগ।

পাতলা হওয়ায় তাদের দেহে কোন ক্ষত হলনা। সাবধানে এটাকে ডিঙিয়ে বের হয়ে আসল। ব্যাগ দেখতে অনেকটা খামারের মত ভিতরে ঢুকে গেল। ভিতরে ঢুকতে তারা পেয়ে গেল প্রয়োজনীয় রসদ যা তারা খুজছিল গত দুইদিন ধরে। ছোট ছোট রসালো পাউরুটির টুকরা আর কত কত খাদ্যের ভান্ডার।



ইয়াহু বলে চিৎকার দিল এটম। তার সাথে তাল মিলালো এজব এবং এরব ও।

নয়ন জামাল আদর

তারা তিনজন নয়ন জামাল আদর এই পিপড়া বাহিনীকে ডিঙ্গিয়ে তারা প্যাকেট টি হাতড়াতে লাগল। তিনজনের বয়স ছয় থেকে আটের মধ্যে। তারা ও বলা যায় দুইদিন ধরে অভূক্ত।

তারা তিন টোকাই অনেক টা বন্ধুর মত ভাইয়ের মত একসাথে চলে। তাদের মা বাবা আছে কিনা জানা যায়নি। কেননা তাদের কখন ও দেখা যায়নি। ডাষ্টবিন থেকে কুড়িয়ে পাওয়া খাওয়ার তাদের প্রতিদিনের আহার। আর কখন ও কোন পথচারী দয়াপরাবশত যদি একটাকা দুইটাকা দেয় তা তারা সঞ্চয় করছে।

তিনজন স্বপ্ন দেখছে তারা একটা চায়ের দোকান দিবে এই এলাকায়। রাতের বেলায় তারা কাঠাল বাগানের বস্তির পাইপগুলিতে এসে ঘুমায়।

যখন যে কাজ পায় হাতের সামনে করতে লেগে যায়। তারা হাটতে পারে প্রচুর। কখন ও চলে যায় কমলাপুর রেলষ্টেশানে।

কার ও সূটকেস ব্যাগ ক্যারি করতে পারলে বিরাট লাভ। নয়ন একদিন পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত পেয়েছে। একটু বেশী টাকার সন্ধানে মাঝে মাঝে সন্ধা পর্যন্ত থাকে। মাঝে মাঝে ভাগ্য খারাপ থাকে। পাঁচ টাকা ও জোগাড় হতে চায়না।

তারপরে এখানে আসতে তারা পছন্দ করে গফ্ফার চাচার জন্য। চাচার ছোট ডাল ভাতের দোকান আছে। এখানে আসলে তাদের খাওয়ার বাধা থাকে। মাঝে মাঝে ছোট দুই একটুকরা মাছ ও চাচা পাতে দিয়ে দেয়।

আজকে আসার পর তাদের মন খারাপ হয়ে গেল।

দোকান বন্ধ করে চাচা কোথায় যেন গিয়েছে। পেটের ক্ষিধায় তিনজনে চোখে মুখে আঁধার দেখতে লাগল। হতাশ হয়ে ফুটপাতে বসে পড়ল তারা। ময়লা ব্যাগটা ঘেটে দেখছে কিছু পাওয়া যায় কিনা। পেল খুশী হয়ে উঠল তাদের অন্তর।

একটা পুরানো পাউরুটির প্যাকেট সম্ভবত গন্ধ হয়ে যাওয়াতে কেও ফেলে গিয়েছে। পুরানো বাসী কলা চারটা। ওগুলি নিয়ে খেতে শুরু করল ক্ষিধার পেটে।

তখন ই দেখা যায় গফ্ফার চাচাকে। চাচাকে দেখে তিনজনে চাঁদ হাতে পাওয়ার মত খুশী হয়ে যায়।



আয় আয় তোগ লাগি কখ্খন থেইকা বই রইছি। চাচা খুশীতে কলকল করে উঠে। ওইখানে মসজিদে ভাল খানা দিচ্ছে কার যেন মৃত্যূদিন। চল চল চাচা তাড়া দিতে থাকে। এমনকি আদর ও লাফ দিয়ে উঠে বসল।

তার মধ্যে এখন আর কোন ক্লান্তির লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা।
মাইকে মাইজভান্ডারীর গান হচ্ছে। একই সঙ্গে হামদ নাত চলছে।

মোহাম্মদের ই নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে
তাই তোর কন্ঠের ই গান এমন মধুর লাগে।
ওরে গোলাপ নিরিবিলি নবীর কদম ছুয়েছিলি
তাই বুঝি তোর খুশবু আজও আতরে জাগে ওরে।



হামদ নাত শুনতে শুনতে তেহারী খেতে থাকে তারা। এত অমৃত স্বাদের খাওয়ার মনে হল জীবনে প্রথমবারের মত খেল। তৃতীয়বার নেওয়ার সময় চাচা নিষেধ করলেন আর খাইসনারে একসঙ্গে এত। এবার দিলে প্যাকেটে ভইরা রাখ । পরে খাবি।

মেইন বাবুর্চি ধমক দিতে নিছিল

পাশে আরেকজন ভদ্রচেহারার বলে অসুবিধা নাই যত খাইতে চায় খাওয়াও। নিষেধ কইরনা মিঞা। আর খাওয়ার আনামু।

তারা পেটভরে খেয়ে আর ও কতগুলি প্যাকেট করে নিয়ে আসল। পেটে।

খাওয়া শেষে আদর বমি শুরু করতে লাগল। খাওয়ার গুলি পচার শেষ পর্যায়ে চলে গিয়েছে সম্ভবত। তারা সবসময় বাঁসী পচা ফেলে দেওয়া খাওয়ার খেয়ে অভ্যস্ত। কখন কিছু হয়না। আজকে অনেকক্ষন ধরে খালি পেটে হাটা ক্লান্ত অভূক্ত শরীরে খাওয়াটা সুস্থির হতে পারেনি।

কিছুক্ষনের মধ্যে আদর পুরা নেতিয়ে পড়ল বমির প্রকোপে ক্লান্তিতে। মনে হয় জ্বর আইতেছে আদরের। চিন্তিত হয়ে বলে নয়ন।

পরের দিন বেলা দশটায় আদর মারা গেল বিনা চিকিৎসায় বিনা ঔষধে। এই পৃথিবী গরীব দেশের তাতে কিছু আসে যায়নি।

গরীব দেশের মানচিত্র থেকে একটা মুখ বিনা বাধায় মুছে গেল ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ভারে পিষ্ট দেশটি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। শুধু নয়ন জামাল চিৎকার করে আহাজারি করে কাদল কতক্ষন। এই দেহ সৎকার করতে কাওকে আসতে দেখা গেলনা। সন্ধা পর্যন্ত দুইজন বন্ধুর মৃতদেহ নিয়ে বসেছিল। সন্ধার দিকে পেটের টানে ক্ষিধার যন্ত্রনায় একসময়ে উঠে বসল।

হাটতে হাটতে কমলাপুর ষ্টেশনের দিকে রওয়ানা শুরু করল।

একই সময়ে এটম এরব এজব খুশীতে চিৎকার দিয়ে কয়েক খন্ড চিনির টুকরা পাওয়াতে। মোটামুটি শীতের দুইমাসের রসদ তাদের সংগ্রহ হয়ে গেল তারা খুশীতে চিৎকার দিয়ে উঠল। সব রসদ তারা কাঁধে করে পিঁপড়ে দের নিজস্ব বাসস্থান অভিমূখে রওয়ানা করল। রাস্তায় আসতে আসতে দলের মিছিল থেকে এটম একসময়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল পিষ্ট হয়ে অতি তুচ্ছ পিপড়াটি মৃত্যূবরন করল।

জানা যায়নি তার সঙ্গীদের গোচরে কি এসেছে তার মৃত্যূ। বিনা আড়ম্বরে পৃথিবী থেকে চলে গেল দুটি প্রান। একটি পিপড়া এটম অন্যটি তুচ্ছ এক মানুষ এক টোকাই যার ও কোন বংশ পরিচয় নাই।

জীবন কখন ও কার জন্য থেমে থাকেনা। গতিময় জীবন চলতে থাকে একই নিয়মে।

একই চক্রে কোন পরিবর্তন ছাড়া। নয়ন জামাল আগের মত কাজ করে মাঝে মাঝে ভিক্ষা করে খায়। কখন ও বা কার ও মুট বহন করে। যখন যে কাজ তাদের সামনে আসে। তাদের দলে নুতুন আরেকটি ছেলে জুটেছে নাম কামাল।



সামনে এক বিয়ে বাড়ীতে প্রচুর বাদ্য বাজনা শুনা যাচ্ছে।

অনেক খানাপিনা আছে কামাল বলে উত্তেজনার গলায়। চল ওখানে যাই।

তারা রওয়ানা করল বিয়ের বাড়ীর খাওয়ার খেতে।

একই রাস্তায় তাদের পাশ দিয়ে একই সারিতে চলছে এরব এজব সেই পিপড়ার দল ও।

তারা ও সন্ধান পেয়েছে এই বিশাল খাদ্যভান্ডারের। এই ক্ষুদ্র পিপড়াগুলি নয়নদের নজরে ই পড়লনা। একইসঙ্গে তারা খেয়ে নিল বিয়ে বাড়ীর টেবিলের উচ্ছিষ্ট খাওয়ার গুলি থেকে। একইভাবে নয়নরা বিনা বাধায় নির্বিঘ্নে বিয়ে বাড়ীর খাওয়ার পেটভরে খেয়ে তাদের আস্তানার দিকে রওয়ানা করল।

আসতে আসতে তারা আকাশের দিকে তাকায়।

আল্লাহর আজব দুনিয়া। সবকিছু বড় সুন্দর করে আল্লাহ বানাইছে তারা ভাবে শুধু আমাগোরে ছাড়া। তারা শুনেছে সাত আসমানের ওই আড়ালে নাকি আল্লাহ পাক থাকে । বড় আশায় আশায় তারা তাকায় কোনদিন আল্লাহ পাকের মুখ দেখার ভাগ্য হইব তাগো। ।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।