এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
হে মহাজীবন
- সুকান্ত ভট্টাচার্য
হে মহামানব, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন কঠোর গদ্য আনো
পদ্য-লালিত্য-ঝংকার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুরীকে আজ হানো।
প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা-
কবিতা তোমায় দিলেম আজকে ছুটি
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূণিমার চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি
বখতিয়ারের ঘোড়া
- আল মাহমুদ
মাঝে মাঝে হৃদয়ে যুদ্ধের জন্য হাহাকার ওঠে
মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদেই অন্তিম তৃপ্তি।
হৃদয়ে আজ শুধু যুদ্ধের দামামা বাজে
মনে হয় রক্তেই ফয়সালা, বারুদই শেষ বিচারক।
নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়
-হেলাল হাফিজ
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয়।
যদি কেও ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায়।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।
কুড়ি বছর পরে
- জীবনানন্দ দাস
আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি
আবার বছর কুড়ি পরে-
হয়তো ধানের ছরার পাশে
কার্তীকের মাসে-
তখন সন্ধার কাক ঘরে ফেরে-তখন হলুদ নদী
নরম নরম হয় শর কাশ হোগলায়-মাঠের ভিতরে।
জীবন গিয়াছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার-
তখন হটাৎ যদি পাই তোমারে মেঠো পথে আবার।
সোনালী সোনালী চিল - শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে-
কুড়ি বছর পরে সেই কুয়াশায় পাই যতি হটাৎ তোমারে।
লবণ
বই মেলায়, ক্যাফেটেরিয়ায়, পহেলা বৈশাখে, ভ্যালেন্টাইন উৎসবে
মেয়েটার চোখে পড়ার দু:সহ চেষ্টা ছাড়া ছেলেটা পুরোদস্তুর সাধারণ
মেয়েটা রুপে ও লাবণ্যে ফ্যাসনে ও বসনে আগাগোরা বিষেশণ।
এক ঝাক প্রজাপতি উচ্ছল তরুণের ভিড়ে ছেলেটা একেবারে অপাৎতেয়।
তবু অতি বড় সাহস করে একদিন বলেই ফেলল, আমার সাথে চা খাবে?
ছেলেটার দু:সাহসী অফারে অবাক মেয়েটা কি জানি মনে করে বলল, চল।
মেয়েটার মুখোমুখী বসা ছেলেটার বুক ধড়ফড়, আড়ষ্ট জিহবা,
চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, ওয়েটার আমাকে লবণ দাও।
মেয়েটা অবাক হয়ে বলল, তুমি চায়ে লবণ খাবে নাকি?
ছেলেটা বলল, হা, আমার জন্ম নোনা জলের সাগর পাড়ে
নোনা চায়ে চুমুক দিলে আমার চোখে ভেসে ওঠে আমার গ্রাম,
নোনা জলে ভেসে যাওয়া আমার বাবা মায়ের মুখ।
মেয়েটা অবাক হয়ে শুনল ছেলেটার কথা, তারপর বলল,
আমি কোনোদিন সাগোর দেখিনি, আমার বাড়ী পাহাড়ে,
ওখানে গা ছুয়ে উড়ে যায় কোমল মেঘ পাখির মত।
হাগর আর পাহাড়ের গল্প ক্রমেই নিবিড় হল দিনে দিনে।
তারপর বিয়ে সংসার এবং শেষে বুড়ো বুড়ী।
বুড়ো মরার আগে বুড়ীর হাতে একটা চিঠি দিয়ে বলল, মরার পর খুলবে।
বুড়ো মরার পর বুড়ী চিঠীটা খুলল, তাতে লেখা আছে,
লবণ দিয়ে চা আমি কখনোই খেতাম না, তোমার সামনে থতমত খেয়ে
চিনি বলতে লবণ বলে ফেলেছিলাম, আর বোকামী ঢাকতে অমন গল্প
ফেঁদেছিলাম।
তাই চল্লিশ বছর তোমার হাতে লবণ চা খেয়ে গেলাম।
তোমার হাতের লবণ চা খুব মিষ্টি।
বুড়ি প্রতিবেশীর বাড়ি বেরাতে গেলো একদিন। তাকে চা দেয়া হল।
বুড়ি বলল একটু লবণ দিন।
অবাক হয়ে প্রতিবেশী বলল, আপনি লবণ দিয়ে চা খাবেন নাকি?
বুড়ি বলল, হ্যা, লবণ চা খুব মিষ্টি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।