(আপাতত দুই শ্রেণির লোকের জন্য)
১ম শ্রেণিঃ ব্লগার রাজিব হায়দারকে মেরে ফেলা হল। কে বা কারা তাকে মেরে ফেলল আমাদের কাছে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে সর্বশেষ পাওয়া পুলিশ রিপোর্টে তাকে তার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লেখার জন্য বা তার নাস্তিকতার জন্য মেরে ফেলা হয়েছে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। যদি পাওয়া যেত তবে এই ঘটনা নিয়ে দেশ তোলপাড় হত। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলোর অন্তত ১৫ দিনের প্রধান শিরোনাম হত এটি।
তবে যে বা যারা মেরেছেন তারা মারার জন্য এমন একটা সময় বেছে নিয়েছেন যখন দেশ একটা কঠিনতম অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটাও একটা রাজনীতি এবং অবশ্যই নোংড়া। নোংড়ামির মাত্রা আরো বেড়ে গেছে যখন বিষয়গুলোর পক্ষে-বিপক্ষে ব্লগে, ফেইসবুকে, ওয়বসাইটে, মিডিয়াতে নতুন বানিয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই হল বর্তমানে আমদের সোনার বাংলা, স্বাধীন বাংলাদেশ।
এমতবস্থায় আমরা যে তাকে ২য় মুক্তিযুদ্ধের ১ম শহীদ ঘোষণা করে তার নামে শাহবাগে মুড়াল বানাতে চাই।
অনেক কবি তাকে নিয়ে কবিতা রচনা করলেন, গায়ক বানালেন গান, স্লোগান দাতারা স্লোগান বানালো। অনেক স্বনামধন্য জ্ঞানী, বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গরাও এই স্রোতের সাথে তাল মিলিয়েছেন। শাহবাগে জনসম্মুখে অপবিত্র জায়গায় হাজার হাজার নারী পুরুষ একসাথে ৪ তাকবিরের পরিবর্তে ৩ তাকবিরে জানাজা পড়ানো হল এসবের মানে কি, অর্থ কি? অতিরঞ্জিত কোন কিছুই ভালো না। উপরোক্ত নিম্নমানের কর্মকান্ডের কারণে আমাদের আন্দোলনের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
পর্যায়ক্রমে সকল যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আল-বদর, আল-সামস, পৃষ্ঠপোশকদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেন।
নতুবা তাদের ‘বেকসুর খালাস’ ঘোষণা দেন। অনুগ্রহপূর্বক দেশ ও গণমানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ফাঁসি বা মুক্তির মাঝখানে কোন সাজানো নাটক করবেন না।
এই মুহর্তে আমাদের ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ ব্লগার রাজিবের নাস্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আন্দোলন করছেন। অথচ তারা কিনা ঘটনা লাইম-লাইটে আসার আগ পর্যন্তও রাজিবের কু-কীর্তি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানের এই দেশে কেউ যদি ধর্মের উপর আঘাত সৃষ্টিকারী হয় তবে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আন্দোলন বাঞ্চনীয়।
তবে সে যত বড়ই কাফির আর মুরতাদই হোক না কেন তাকে মেরে ফেলাটা কখনই সমীচিন নয়। কোন ধর্মই আমাদের এই শিক্ষা দেয় না। আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে অথবা অন্য কোন পন্থা খুঁজতে হবে। আইন, বিচার নিজের হাতে তুলে নেয়ার ক্ষমতা আমাদের কেউ দেয়নি।
(অনুগ্রহপূর্বক হুজুগে বাঙ্গালী হবেন না।
)
২য় শ্রেণিঃ পৃথিবীর কোন ধর্মই মানুষ তথা জীব হত্যা সমর্থন করে না। আল্লাহ এবং তার প্রিয় রাসুলও আমাদের মানুষ হত্যার শিক্ষা দেননি। আমাদের এক শ্রেণির ধর্মান্ধ বলে রাজিবের মত নাস্তিকদের মেরে ফেলাই উচিত। ভাগ্যিস রাজিবকে অন্য কেউ মেরেছে নতুবা এ সকল ধর্মান্ধদের হাতেই তার মৃত্যু হত। যে মানুষটিকে আপনি মেরে ফেলতে চাচ্ছেন তাকে তো আপনি সৃষ্টি করেননি যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু তারই হাতে।
আপনি সেই দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেবার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। এটা কি নিজেকে খোদা দাবীর নামান্তর নয়? (নাউজুবিল্লাহ)।
বলি, রাজিবের নাস্তিকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেন, আইনের আওতায় এনে তার বিচার করতেন। সেখানে তার সর্বোচ্চ শাস্তিও হতে পারত। কি আর বলবেন, বলবেন তার নাস্তিকতা সম্পর্কে জানতাম না।
জেনেছি তার মৃত্যুর পর। এখন তাহলে ভবিষ্যতে কেউ জানি রাজিবের মত ধর্মের উপর আঘাত না করে সে জন্য আন্দোলন করেন।
আর আমরা যদি ধর্মান্ধ না হই তবে রাজিবের কলমের জবাব আমরাও কলম দিয়ে দেই। কলমের বদলে চাপাতি, কুড়াল, রামদা, বুলেট কেন? আপনি মেরে ফেলে একটা মানুষের শিক্ষা দিতে পারেন না। সে অধিকার আপনাকে দেয়া হয়নি।
একজন অন্য ধর্মের মানুষকে মুসলমান বানানোর চেয়ে একজন মুসলমানকে তার ইমান, আকিদার উপর অটুঁট রেখে আল্লাহর হুকুম, নবীর দেখানো পথে চলা এবং পরিপূণ ইসলামী জীবন যাপনে তাকে অভ্যস্ত করে তোলার চেষ্টাই উত্তম।
আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে এসেছিলেন। তার দেখানো পথই আমরা অবলম্বন করি একজন মুসলমান হিসেবে যেটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা তাকে দেখিনি অথচ তার মহব্বতে আশেক হয়ে তার প্রতি কটাক্ষকারীদের হত্যা করছি এবং করতে চাচ্ছি। অথচ তায়েফের ময়দানে তৎকালীন সময়ে কাফিররা তাকে যখন পাথর মেরে, আঘাত করে রক্তাক্ত করেছে তখন তিনি কিন্তু তাদের প্রতি প্রতিশোধ তো দূরের কথা বরং বদদোয়াও করেননি।
বরং তাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। এই ছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর মহানুভবতা। যার গায়ে মশা, মাছি বসা হারাম ছিল। যাকে না সৃষ্টি করলে এই সৃষ্টি জগৎ আল্লাহ সৃষ্টি করতেন না। আমারা তার উম্মত হিসেবে আমাদের মহানুভবতা কি হওয়া উচিত আর কি হয়েছে! কয়দিন নাস্তিকদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন?
নবীর প্রতি মহাব্বত তো প্রকাশ পাবে আপনার কাজে, কর্মে, আচার-আচরণে।
তার সুন্নতের অনুসরণ, অনুকরণের মধ্য দিয়ে। তার মহব্বতে মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে নয়। আবার এক শ্রেণির লোক আছেন যারা পৈতৃক সুত্রে ইসলাম ধর্ম পেয়েছেন। তাদের বলি আপনার ধর্ম কি আপনার নাকি আপনার বাবার? কোন আল্লাহার হুকুম আপনি মানেন না, নবীর অনুসরণের কোন চিহ্ন মাত্র আপনার মধ্যে নেই অথচ গায়ে মুসলমানের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ফাঁকা বুলি ছাড়েন, নীতিকথা বলেন। আপনার মহাব্বত, জ্ঞান, ধর্মীয় অনুভুতি বই-পুস্তক আর আপনার মাথার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
কাজে-কর্মে যার প্রতিফলনের লেশ মাত্রও নেই। এহেন মহাব্বত আর জ্ঞানের কোন মুল্য নেই। আপনি নিজের ক্ষতি করছেন, আরো দশ জনের ক্ষতি করছেন। এই ধর্মান্ধ কট্টোরতাই আপনার ধ্বংস ডেকে আনবে। এখনই ভদ্র আর ধার্মিকতার মুখোশ খুলে ফেলে তওবা করে সত্যিকারের ভদ্র আর ধার্মিক হন।
(অনুগ্রহপূর্বক হুজুগে ধর্মান্ধ হবেন না। )
পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই, আমার যাবতীয় ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন, সবাইকে সঠিক বুঝ দান করে হুজুগে বাঙ্গালী অথবা হুজুগে ধর্মান্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করুন এবং আপনার হুকুম এবং প্রিয় নবিজীর দেখানো পথ অবলম্বন করা সহজ করে দেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।