আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বখাটেদের উৎপাতঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

বখাটেদের উৎপাতঃ বখাটে যুবকের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অপমান সইতে না পেরে রাজধানীর শ্যামলীতে আত্মাহুতি দিয়েছে নাসফিয়া আকন্দ পিংকি (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রী। ১৯/১/২০১০ইং মঙ্গলবার বিকালে শ্যামলীতে নিজ বাসার ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে পিংকি আত্মহত্যা করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মৃত্যুর আগে পিংকির লিখে রেখে যাওয়া চিরকুট উদ্ধার করেছে। চিরকুটে লেখা রয়েছে -"বাবা-মা আমাকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছে। আমি চাই না তাদের দুর্নাম হোক।

কিন্তু বখাটে মুরাদ আমার পেছনে যেভাবে লেগেছে তাতে সবাই আমাকেই খারাপ মেয়ে ভাববে। তাই আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আমার মৃত্যুর জন্য পরিবারের কেউ দায়ী নয়"। -খবর-কালের কন্ঠ । এবিষয়ে ব্লগার মৌনোতা ২০/১/২০১০ইং একটা পোস্ট দিয়েছিলেন, তারপরেও এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু লেখার প্রয়োজন মনে করেই এই লেখা।

মাত্র কিছুদিন পুর্বে বখাটে ছেলেদের উৎপাতে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় কলেজছাত্রী নজমুন নাহার বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে খবরে প্রকাশ। গত সপ্তাহে বিষপানের পর সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মেয়েটির ভাই বাদী হয়ে এলাকার তিন বখাটে ছেলেকে আসামী করে থানায় মামলা করেছে। এর আগে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়। উক্ত ঘটনার পর কর্তব্যে অবহেলার জন্য লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

নজমুনের বাবা একজন দরিদ্র মানুষ। একটি পড়ার বই ধার করে আনার জন্য নজমুন তার বড় বোনকে নিয়ে সন্ধ্যার পর এক প্রতিবেশী সহপাঠীর বাড়ি যায়। তখন একই গ্রামের ঝন্টু মৃধা ঐ বাড়ির উঠানে তাকে নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে। এ সময় প্রতিবেশীর দুই ছেলে ও স্ত্রীর হস্তক্ষেপে সে রক্ষা পায়। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে নজমুন পরদিন বিষপান করে আত্মহত্যা করে।

নজমুনের বড় বোন অভিযোগ করে যে, পাঁচ-ছয় মাস ধরে ঝন্টু নজমুনকে উত্যক্ত করছিল। সে ছাড়াও আর এক ছেলে সাজ্জাদ সিকদার নজমুনকে উত্যক্ত করতো। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ওয়ার্ড কম্যুনিটি পুলিশের সভাপতি এবং গ্রামের মাতব্বরদের জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। যেদিন নজমুনের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করা হয়েছিল, সেই দিনই তাকে দাফন করতে হলো। বিষপান করার আগে নজমুন ভাইকে মোবাইলে জানিয়েছিল যে সে ঝন্টুর উৎপাতে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

নজমুনের মত এমন আরো মেয়ের আত্মহত্যার কথা প্রায়ই কাগজে ছাপা হয়। তাদের মৃত্যুর কারণ একইরকম। পাড়ার ছেলেদের উৎপাতে উত্যক্ত হয়ে তারা লজ্জায়-অপমানে মৃত্যুর পথ বেছে নেয়। এদের প্রায় সবাই দরিদ্র পরিবারের এবং সামাজিকভাবে দুর্বল। তাদের যারা উত্যক্ত করে তারা ধনী ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত পরিবারের সন্তান।

বিত্তশালী পরিবারের সন্তান হওয়ার জন্য এদের অপরাধ ও অসামাজিক ব্যবহার সম্পর্কে জেনে গেলেও এলাকার মাতব্বর এমনকি থানার পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। অনেকসময় বিত্তশালী পরিবার প্রধান নিজ সন্তানকে রক্ষার জন্য অফার এবং উপঢৌকন দিয়েও কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে থাকে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল বলে মনে হয়। পুলিশ কর্তৃপক্ষ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের কাজকর্মে অবহেলার জন্য শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এটা প্রশংসনীয় কিন্তু আগে এমন তৎপরতা দেখানো হলে সিমী-পিংকি-নজমুনকে বাঁচানো যেত।

দেখা যায় যে যখন অপরাধ সংঘটনের পর পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয় এবং এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয় তখনই পুলিশী তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। এমনটি হওয়া উচিত নয়, অপরাধ সংঘটনের আগেই পুলিশের প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মহল্লার/গ্রামের মাতব্বরদের তাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে অবহিত হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রেও গাফিলতি রয়েছে। একই কথা বলা যায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও কম্যুনিটি পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে। দেখেশুনে মনে হয় এদের অবহেলা-উপেক্ষাণ সুযোগ নিয়েই বখাটে ছেলেরা সাহসী হয়ে ওঠে এবং বেপরোয়াভাবে দুর্বল ও দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের পেছনে লাগে এবং উৎপাত শুরু করে।

অনেকসময় এরা ব্যর্থ মনোরথ হয়ে মেয়েদের মুখে এসিডও ছুঁড়ে মারে, যার ফলে মৃত্যু হয় অথবা তারা সারা জীবনের জন্য মুখশ্রী হারিয়ে এক অন্ধকারে নিপতিত হয়। এদের করুণ কাহিনী সম্বন্ধে অনেক লেখা হয়েছে এবং চেহারার বীভৎসতার চিত্র ছাপানো হয়েছে। এমন ঘটনা সারাদেশেই ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে। এর অকুস্থলে প্রায় সব ক্ষেত্রেই তারা, যা থেকে সেখানে দরিদ্রদের অসহায়ত্ব প্রমাণ পায় এবং কর্তৃপক্ষ যে তাদের পাশে দাঁড়ায় না সেই সত্যটি প্রমাণিত হয়। এদেশে দরিদ্র হওয়া অভিশাপের, দরিদ্র ঘরের মেয়ে হয়ে জন্মানো আরো বড় অভিশাপ।

সেই জন্যই বারবার তারাই নির্যাতন, উৎপীড়নের শিকার হয়। এমনকি যেসব এনজিও মেয়েদের নিয়ে কাজ করে তাদেরকে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের সাহায্য বা রক্ষায় এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। বড়জোর তারা ঘটনার পর কিছু তৎপরতা দেখায়। অথচ ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগে যদি কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ দেয়া হয় অথবা গ্রামের মাতব্বরদের সাহায্য চাওয়া হয় তাহলে জীবনের শুরুতেই প্রতিশ্রুতিশীল মেয়েদের মৃত্যুর পথ বেছে নিতে হয় না। নারীদের জন্য সমাজে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে এবং এই নিরাপত্তাহীনতার শিকার প্রধানতঃ দরিদ্র পরিবারের মেয়েরাই-এ বিষয়টি অনেকদিন আগেই স্পষ্ট হয়েছে।

সুতরাং এতদিনেও যে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া গেল না এটা শুধু সরকারের না, সামাজিকভাবে আমাদেরই ব্যর্থতা। এমন যখন হয় তখন সমাজের সুস্থতা এবং নৈতিকতার প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। এমন মূল্যবোধহীন সমাজ অনগ্রসরতারই পরিচায়ক। সমাজের অসুস্থতার অন্য পরিচয় ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানাদির বখাটে হয়ে যাওয়া এবং সামাজিক অধঃপতন। এদের পিতা-মাতার অগাধ সম্পদ ও সামাজিক প্রতিপত্তি তাদেরকে শুধু বখাটে না পাষণ্ড এবং চরম উচ্ছৃঙ্খল করে তোলে।

ভবিষ্যতে জীবিকা অর্জনের জন্য পরিশ্রম করতে হবে না জেনে এরা উচ্ছৃঙ্খলতা ও অপরাধের পথই বেছে নেয়। এই অপরাধের মধ্যে রয়েছে মাদকাসক্তি এবং সেই সম্পর্কিত নানা অপরাধ। সম্প্রতি মাদকদ্রব্য আমদানি ও উৎপাদনে তাদের জড়িত থাকার ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। এরা শহরের ধনী পরিবারের সন্তান এবং এদের জন্য পিতা-মাতা অকাতরে অর্থ ব্যয় করে থাকে। এরপরও তারা বিপথগামী হয় এবং তরুণশ্রেণীকে নিপথগামী হতে প্রলুব্ধ করে।

এসব করতে গিয়ে এরা শক্তি প্রয়োগ করতেও ইতস্তত করে না। এরা মেয়েদের উত্যক্ত করে না বটে কিন্তু অর্থ-বিত্ত এবং গ্লামার ব্যবহার করে মেয়েদের পাপের পথে টেনে আনে। এটাও এক ধরনের বখাটে পণ্য যার মূলে রয়েছে পিতা-মাতার সম্পদ ও প্রভাব। তারা জানে যে, বিপদে পড়লে বাবা-মা এগিয়ে আসবে রক্ষা করতে। প্রশাসন সবসময়ই এদেশে বিত্তবানদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এসেছে এবং তাদেরকে প্রটেকশন দিয়েছে।

আইন যেন তাদের জন্যই, এমনও মনে হয়েছে। শহর এবং গ্রাম যেখানকার কথাই বলা হোক হঠাৎ করে বড়লোক অথবা বনেদী বিত্তবান পরিবার, সব ক্ষেত্রেই পরিবারের ছেলে সন্তানরা সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে না এবং বিপথগামী হয়ে পড়ছে। এদের মধ্যে মাদকাসক্তি বাড়ছে এবং ক্রমেই তারা অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ছে। সামাজিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের এটি এক কলঙ্কিত পরিচয়। যারা সমাজে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখে তাদের পক্ষ থেকেই এমন অসামাজিক কাণ্ডকারখানা খুবই হতাশাব্যঞ্জক।

বিত্তবান ও শক্তিশালীরা যদি নিজ সন্তানদেরই ভালো ভাবে মানুষ করতে না পারে তাহলে তারা দেশের জন্য কি অবদান রাখতে সক্ষম হবে? গ্রামে হোক অথবা শহর, বিত্তবান ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানেরা এখন অনেকক্ষেত্রেই সমাজের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। একথার মধ্যে অতিকথন থাকতে পারে। কিন্তু সমস্যাটিকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। যারা সমাজকে নেতৃত্ব দেবে, দুঃস্থ ও দরিদ্রদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে তারাই যখন উৎপীড়ক ও নিপীড়ক হয়ে যায় তখন শুধু নিন্দার বিষয় হয় না, দুশ্চিন্তারও কারণ হয়ে যায়। উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা সমাজের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন করে তোলে।

এদের যেন সুমতি হয় তার জন্য বাবা-মাকে যেমন ভূমিকা পালন করতে হবে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকেও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এইসব প্রতিষ্ঠান হতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্রীড়া ও বিনোদন সংস্থা এবং সরকারের প্রচারণা বিভাগ। সরকারের অধীনে যুব অধিদপ্তর আছে, কিন্তু এই সংস্থা যুবকদের নৈতিক উন্নতির জন্য কোনো কর্মসূচী হাতে নেয় না। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনেও যুবকদের চারিত্রিক উন্নয়নের জন্য নিয়মিত কোনো বিভাগ নেই। তারা কোনো উচ্ছৃঙ্খলতার ঘটনা ঘটে গেলে সেই সংবাদ দিয়ে থাকে।

অবশ্য এটাও এক ধরনের ভূমিকা পালন কেননা এতে করে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। যুব শক্তিকে জাতি গঠনের জন্য সংগঠিত করতে হবে। তারা যেন বিপথগামী না হয় তার জন্য সব রকমের পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তারা যে সমাজ বিচ্ছিন্ন নয়, এই সমাজেরই অংশ তা জানিয়ে দিলে তারা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হবে না।

বখাটে যুবকদের অপরাধ আইনের দৃষ্টিতে দেখলে যথেষ্ট হবে না। এটা যে সামাজিক ব্যাধি তার উপলব্ধি করে সরকারের , সামাজিক সংগঠনের এবং স্ব স্ব ব্যাক্তির দ্বায়িত্বশীল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.