আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐতিহাসিক আশূরার প্রেক্ষাপট

হট নিউজ

আশূরা তথা দশই মুহাররমের এ দিনটি বিশ্ব মুসলিমের ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক জীবনে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিরাট বিরাট ও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে। দিনটি কেবল নৃশংস ও শোক বিধূর ঘটনা হিসাবেই স্মরণীয় নয়, এটি অন্যায়, অসত্য ও বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদের স্মৃতিমন্ডিত দিন। সত্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগের আহবান মিশ্রিত একটি দিন। এজিদের ক্ষমতায় বসাটা সম্পন্ন হয়েছিল নবুওয়তী আদর্শের শাসনব্যবস্থাকে বিকৃত করার মধ্য দিয়ে। এটাই যে ভবিষ্যতে গোটা ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থার কাঠামোকে ধ্বংস করে মুসলিম উম্মাহর জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে, বিনষ্ট করবে ইসলামের প্রাণসত্তাকে, হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) তাঁর দূরদৃষ্টিতে তাই গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।

ফলে তিনি ন্যায় এবং সত্যের উপর অটল থেকে জনগণকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তার অনুকূলে আনার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শত্রুপক্ষ তাঁকে সময় না দিয়ে আজকের এদিনে ইরাকের কারবালা ময়দানে নৃশংসভাবে শহীদ করে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ইমাম হোসাইন (রাঃ) যেই আশঙ্কায় তৎকালীন শাসক এজিদের বিরোধিতা করায় নৃশংসভাবে দুষ্কৃতকারীদের হাতে শাহাদাত বরণ করলেন, পরবর্তী পর্যায়ে তার আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হলো। জনগণের রায়ে খলীফা নির্বাচনের বদলে রাজতন্ত্র কায়েম হলো। কুরআনের নির্দেশ মোতাবেক পরামর্শভিত্তিক শাসনের বদলে স্বেচ্ছাচারী শাসন কায়েম হলো, রাষ্ট্রীয় কোষাগার বায়তুলমাল ব্যক্তিগত সম্পদের রূপ নিল।

তাকওয়া, সততা ও যোগ্যতা-দক্ষতার ভিত্তিতে শাসক নির্বাচিত না হয়ে রাজতান্ত্রিক নীতির ভিত্তিতে শাসনক্ষমতায় বসার রীতি চালু হলো। আল্লাহর বিধানভিত্তিক জনগণের মতামতের চাইতে শাসকের মতামতই চূড়ান্ত বিবেচিত হতে শুরু হলো, যা ইসলামী গণতন্ত্রের পরিপন্থী। শাসকদের আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা ভাব লোপ পেলো। বিচার বিভাগে নিরপেক্ষতার বদলে স্বজনপ্রীতি গোষ্ঠীপ্রীতি প্রশ্রয় পেলো। মোটকথা, আল্লাহর নির্দেশাবলীর ভিত্তিতে মহানবী (সাঃ) কর্তৃক খেলাফত পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত জনকল্যাণ রাষ্ট্র যাতে এভাবে রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার রূপ লাভ করতে না পারে, সেজন্যেই ছিল ইমাম হোসাইনের সংগ্রাম।

বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির এমন এক প্রেক্ষাপটে এবার আশূরা ও কারবালা দিবসটি পালিত হচ্ছে, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এ সময়কার ঘটনাবলীর মূল উৎসও এক এবং অভিন্ন অর্থাৎ ন্যায়নীতির স্বীকৃত মানদন্ডকে উপেক্ষা করে নিজেদের স্বৈরাচারী আধিপত্যবাদী ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রাধান্য দানের প্রবণতা। ফলে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেশে এখন এজিদের প্রেতাত্মাদের সাথে হোসাইনী আদর্শের অনুসারীদের চলছে বিরাট সংঘাত-সংঘর্ষ। এজিদের নীতি আদর্শের অনুসারীদের জুলুম-নিপীড়ন ও বর্বরতা চলছে হোসাইনের উত্তরসূরীদের উপর। কুরআনের নির্দেশ মাফিক ‘শূরা' তথা পরামর্শ ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা যাতে মুসলিম দেশসমূহে বহাল হতে না পারে, ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রের যাতে প্রতিষ্ঠা না ঘটে এজন্যে এজিদী-শক্তি সর্বত্র সক্রিয়।

তাই উল্লেখিত প্রতিটি ঘটনাসহ কারবালার ত্যাগদীপ্ত শাহাদাতের ঘটনার এদিনে বিশ্বের সকল মুসলমান হোসাইনী আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে বাতিল শক্তির সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্নভিন্ন করুক। এজন্যে তারা বজ্রকঠোর শপথ গ্রহণ ও এজিদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক, এটাই হচ্ছে আশূরা দিবসের ডাক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.