আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সতর্কীকরণ কিছু কথা - ৩

কায়ছার

'সতর্কীকরণ কিছু কথা - ৩' এই পর্বে আমার নিজের একটা ছোট ঘটনা তুলে ধরছি। গতকাল শুক্রবার আমি আমার কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা করতে মিরপুর এলাকায় যায়। যেতে কোন অসুবিধা না হলেও ফেরার সময় তীব্র যানবাহন সঙ্কটে পড়ি। CNG কিংবা Taxicab কোনটাই পাওয়া যাচ্ছিল না। নিজেকে বেশ অসহায় মনে হচ্ছিল।

মনে মনে ভাবছিলাম মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত আর আমার দৌড় মনে হয় একটা ১৮.৫ ইঞ্চি বাক্স পর্যন্ত (মনিটর)। সফটওয়্যার আর হার্ডওয়্যারের বাইরে পৃথিবীর সাথে খুব বেশী অপরিচিত মনে হচ্ছিল নিজেকে। কাছের লোকজনের কাছে unsocial খেতাব পেয়েছি অনেক আগে, এখন আরো নতুন নতুন কত কিছু যোগ হবে কে জানে! মিরপুর থেকে আমার গন্তব্য রামপুরা বনশ্রীতে। যাহোক শেষ পর্যন্ত একটা CNG পাওয়া গেল দ্বিগুন ভাড়ায় তাও আমার বাসা পর্যস্ত আসবে না, রামপুরা ব্রিজে নামতে হবে। বাসা পর্যন্ত না আসার কারন ওদিকে রাস্তা ভাঙ্গাঁ, গাড়ীর ক্ষতি হবে! বনশ্রীতে স্বাভাবিক ভাবেই আমার বাড়ি ফেরার রাস্তা হল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে দিয়ে মহাখালী হয়ে গুলসান-১ হয়ে বাড্ডা দিয়ে রামপুরা আসা।

কিন্ত CNG ড্রাইভার মহাখালী রেলগেট আসতেই গুলসানের দিকে না এসে উল্টো পথে মহাখালী বাস টার্মিনালের দিকে যাওয়া শুরু করল। তাকে কারন জিগাসা করলাম। উত্তর পেলাম রাস্তা জাম আছে। এই দিক দিয়ে তাড়াতাড়ি হবে। আমি ভাবলাম হয়ত গুলসান লিঙ্ক রোড দিয়ে তারপর গুলসান-১ হয়ে যাবে, কিন্তু তাতে তেমন কোন লাভতো দেখছি না! এর পর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার পার হয়ে ভাঙ্গাচোরা একদম জনমানবহীন ঘুটঘুটে অন্ধকার একটা পথে সে CNG ঢুকিয়ে দিল।

আমি এর আগে এই দিকে কখোনই আসিনি, আসার কথাও না। আমি খেয়াল করলাম সে যে দিক দিয়ে যাচ্ছে সেটাকে পুরোপুরি রাস্তা বলা যাবে না, অন্ধকারে ঠিক মত না বুঝতে পারলেও এই টুকু বুঝতে পারছিলাম চারদিক একদম ফাঁকা আর শুধু বালি আর বালি। রাত ৯:৩০ মিনিটে ওই খানে আর কোন যানবাহন বা মানুষ কিছু দেখা যাচ্ছিল না। আমি সাহস করে ড্রাইভারকে জিগাসা করলাম এই দিক দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? উওর এলো তাড়াতাড়ি হবে, কোন অসুবিধা নেই স্যার। আমার একটু একটু ভয় শুরু হল।

আমি খেয়াল করলাম CNG এর পেছনের পুরোটাই লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো অনেকটা খাঁচার মত। কিছু দিন আগে সরকার আইন করে মলম পার্টির থেকে যাত্রীদের রক্ষা করার জন্য এই্ ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে অবাক হলাম কারন এটা আমি আগে অতটা খেয়াল করিনি, তা হলো দরজা বন্ধ করার হাতল ড্রাইভারের নিয়ন্ত্রনে। ড্রাইভার নিজ হাতে দরজা না খোলা পর্যন্ত কোন ভাবেই যাত্রীদের বের হবার কোন সুযোগ নেই। ওই মুহুর্তে আমার কাছে বুঝতে আর বাকি ছিল না যে হয়ত আমি একটা বিপদে পড়ে গেছি এবং আমার কিছুই করার নেই।

নিজেকে সত্যি খুব অসহায় লাগছিল। সেই মুহুর্তটা ঠিক বোঝানোর মত না। এক সময় ড্রাইভার বলে বসল স্যার আপনে মাঝখানে বসেন ঠান্ডা কম লাগব। ভাবছিলাম একেই মনে হয় ১২ নম্বর সংকেত বলে যার মানে এখন আর কিছু করার নাই। কিছু করলেও যা, না করলেও তা।

আমি সময় গুনছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষন পর সে একটা সরু রাস্তায় উঠল এবং অল্প আরো কিছু রিক্সা-গাড়ী দেখতে পেলাম। ভাবলাম যাক বাবা এবারের মত বেচেঁ গেলাম। কিযে শান্তি লাগল তা বোঝাতে পারব না। কিন্তু তার পর ঘটল আরেক ঘটনা।

সে একটা বস্তির ভেতরে ঢুকে পড়ল। অত্যন্ত সরু এবং আকাবাকা রাস্তাঁ, কোন দিকে যে সে যাচ্ছে কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আমার কোন কথাও সে শুনছে না। প্রতিটি মুহুর্ত কাটছিল উৎকন্ঠায়, আমি ভালই বুঝতে পারছিলাম আমার কোন কথাই সে পাত্তা দিচ্ছে না। সে চালাচ্ছিলও বেশ ধীরে ধীরে।

এভাবে অনেক আকাবাকা পথ পাড় হয়ে অবশেষে মেইন রোডে আসাগেল। তখন কিছুটা স্বস্তি বোধ কাজ করছিল। তারপর ও ভাবছিলাম আমার বের হবার দরজা ড্রাইভারের নিয়ন্ত্রনে। সুতরাং আমি চাইলেই কিছু করতে পারব না, কারন he have the power of attorney! অবশেষে আমি রামপুরা ব্রীজে পৌছালাম। ড্রাইভার গেট খুলে দিল, আমি বের হয়ে আসলাম।

এক রকম মুক্তির স্বাদ আমার মধ্য কাজ করছিল। হয়ত CNG ড্রাইভারকে গনপিটুনি খাওয়াতে পারতাম। কিন্তু ওই মুহুর্তে আমার মাথায় কোন কিছু কাজ করেনি। আমি সবার দোয়ায় ভাল আছি, কোন ক্ষতি হয়নি আমার। তবে আমি নিশ্চিন্ত ড্রাইভারের উদ্দেশ্য ভাল ছিল না।

কারন মেইন রোড দিয়ে আসলে আরো অনেক আগেই চলে আসা যেত। রাস্তা ভাঙ্গা এই অজুহাতে সে বনশ্রী পর্যন্ত আসতে চাইল না, আমাকে রামপুরা ব্রীজে নামিয়ে দিল। অথচ সে হাজারও ভাঙ্গা অকল্পনীয় বাজে রাস্তা দিয়ে আরো ঘুরিয়ে পেচিয়ে দ্বিগুন সময় ব্যয় করে নিয়ে এসেছে। হয়ত তার সাথীরা সময় মত হাজির হতে পারিনি আর আমার কপাল তার থেকে বেশী ভাল ছিল, তাই তার চেষ্টা হয়েছে ব্যর্থ। হয়ত লেখাটা একটু বড় হয়ে যাচ্ছে, আমি পুরো ঘটনাটা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

CNG গুলোতে লোহার গ্রিল লাগানোর কথা বলে সরকার ভুল করেছে আমি তা বলছি না। হয়ত যাত্রীদের ভালর জন্যই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু চোরের দল এই সিদ্ধান্তের উল্টো ব্যবহার করবে, তা হয়ত কেউ আগে বুঝেনি। CNG গুলোতে লোহার গ্রিল যদি এমন হতো যে যাত্রীদের হাতে গেট খোলা এবং বন্ধ করার ব্যবস্থা থাকবে তাহলে হয়ত ভাল হতে পারত। কিন্তু হয়েছে উল্টো, ড্রাইভারের ইচ্ছায় আমাদের উঠতে হবে আবার নামতে হবে।

এতে আগের চেয়ে আরো বেশী বিপদে পড়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। আমি যানিনা আমার মত যাদের নিজেদের গাড়ী বা কোন ধরনের নিজস্ব যানবাহন নেই তাদের সমাধানের পথ কি? তবে এর কোন উত্তর আমার জানা নেই..................

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.