আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের নিঝুম দ্বীপ : পর্যটকদের আকর্ষণ : চিত্রা হরিণ, সমুদ্র বালুচর, নকশিকাঁথার মাঠ



সমুদ্রকোলে অস্তগামী সূর্য। কেওড়া বন থেকে দলবেঁধে ঘাসবনে ছুটে আসছে মায়াবী চিত্রা হরিণ। দূর বালুচরে চিক চিক খেলা করছে মিষ্টি সূর্যরশ্মি। কেওড়া-গেওয়া বনের কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া সরু খালের পাড়ে সবুজের আচ্ছাদিত নকশিকাঁথার মাঠ। ওপরে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির ওড়াওড়ি।

বনে পাখির কিচিরমিচির। শীতের বিকালে প্রকৃতির এমন অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে কার না মন চায়। সাগরবক্ষের নৈসর্গিক সৌন্দর্যময় অভয়ারণ্য নিঝুম দ্বীপে শীত মৌসুমজুড়ে প্রকৃতির এমন মায়াবীরূপ এখন প্রতিদিনই উপভোগ করা যায়। বঙ্গোপসাগরের কোলে উত্তর ও পশ্চিমে মেঘনার শাখা নদী, আর দক্ষিণ এবং পূর্বে সৈকত ও সমুদ্র বালুচরবেষ্টিত ছোট্ট সবুজ ভূখণ্ড নিঝুম দ্বীপ—এখন পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান। নোয়াখালীর দক্ষিণে মূল হাতিয়া পেরিয়ে এ দ্বীপে পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয় প্রমত্তা মেঘনা।

শীতে নদী শান্ত থাকে বলে প্রকৃতিকে ভিন্ন স্বাদে উপভোগ করতে ভ্রমণপিয়াসীরা ছুটে যায় নিঝুম দ্বীপে। সকাল বিকালে নকশিকাঁথার মাঠে বসে দলবেঁধে হরিণের ছুটে চলা এবং জোয়ারের সময় খালের পাড়ে জলপানের দৃশ্য উপভোগ করতে হলে নিঝুম দ্বীপ ছাড়া আর কোথায়ইবা যাবেন। ৪০ হাজারের বেশি হরিণের ছুটোছুটিতে এ দ্বীপের অরণ্য যেন সব সময়ই জেগে থাকে। জানা যায়, আইলার আঘাতে অনেক হরিণ মারা গেছে। আর বন্য কুকুর তো সব সময়ই হরিণ হত্যা করে চলেছে।

তবুও হরিণের দলবেঁধে চলা দেখলে কেউ ধারণাই করতে পারবেন না মরে গেছে এ বনের অনেক হরিণ। তবে আইলা যে নিঝুম দ্বীপের একমাত্র সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তা সবারই চোখে পড়বে। কিন্তু যারা বনবাদাড় মাড়িয়ে পায়ে হেঁটে সৈকত আর সমুদ্র বালুচর দেখতে আগ্রহী তাদের জন্য আরও আকর্ষণীয় এখন নিঝুম দ্বীপ। শীতের সময় শরীরকে একবার চাঙ্গা করে নিতে হলে এখন ঘুরে আসতেই হয় বঙ্গোপসাগরের চোখসদৃশ এ দ্বীপে। তবে যাওয়ার আগে জেনে নেয়া উচিত কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন।

নিঝুম দ্বীপে যেতে হলে হাতিয়ায় সরাসরি যাওয়া যায় লঞ্চযোগে। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি হাতিয়ায় লঞ্চ রয়েছে। এগুলো পৌঁছে সাধারণত সকাল বেলা। বিশ্রাম করে দুপুরের পর জাহাজমারা হয়ে নদী পেরিয়ে নিঝুম দ্বীপ পৌঁছাতে সময় লাগে দেড়ঘণ্টা। মোক্তারিয়া ঘাটের অপরপাড়ে নিঝুম দ্বীপের যে ঘাট, তার ডানপাশেই নকশিকাঁথার মাঠ।

এ মাঠে বসেই হরিণ দেখা যায়। বন্দরটিলায় রয়েছে পর্যটন কমপ্লেক্স। আগে বুকিং দিয়ে গেলে নিঝুম দ্বীপে রাত কাটানো নিরাপদ। অন্যথায় থাকার জায়গা নিয়ে বিপাকে পড়তে হতে পারে। তবে পর্যটন কমপ্লেক্সটি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়।

এটা জেলা পরিষদ নির্মিত সাইক্লোন শেল্টার। লিজ নিয়ে এটি পরিচালনা করছে একটি বেসরকারি কোম্পানি। সকালে রিকশা অথবা পায়ে হেঁটে যাওয়া যায় নামারবাজারে। সেখানে একই সঙ্গে দেখা যায় সৈকত সূর্যাস্ত এবং বিস্তীর্ণ বালুচর। নামারবাজার অবকাশ কেন্দ্রে আপনি রাত কাটাতে পারেন।

আর ফিরতে চাইলে সন্ধ্যার এক ঘণ্টা আগেই আবার বন্দরটিলায় ফিরতে হবে। না হয় বনের মেঠোপথে রাত হয়ে যাবে। পায়ে হাঁটলে প্রায় ৫ কিলোমিটারের এ পথ। বন্দরটিলার দক্ষিণে পূর্বদিকে যতদূর হাঁটা যায় বালুচরে। মনে হবে দূরদূরান্ত পর্যন্ত সব বালুচর।

সমুদ্রের দেখা নেই। নৌকা নিয়ে বেড়ানো যায় নিঝুম দ্বীপের কোলঘেঁষে। হাতিয়া থেকে সড়কপথে নোয়াখালী হয়ে বাস বা ট্রেনযোগে ফেরা যায়। নিঝুম দ্বীপে সড়কপথে গেলে প্রথমদিন নোয়াখালী পৌঁছে রাত কাটালে ভালো। নোয়াখালী শহরে নানা গেস্ট হাউস এবং হোটেল ছাড়াও রয়েছে ‘নাইস’-এর মতো অভিজাত মোটেলও।

এখান থেকে সড়কপথে হাতিয়া চেয়ারম্যানঘাট হয়ে সি-ট্রাকে হাতিয়া অথবা স্পিডবোট নিয়ে সরাসরি যাওয়া যায় নিঝুম দ্বীপ। তবে প্রকৃতির অপরূপ আর রহস্যঘেরা দ্বীপটিকে উপভোগ করতে হলে হাতিয়া হয়ে যাতায়াত করা নির্ঝঞ্ঝাট বলে অভিজ্ঞরা জানালেন। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.