সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...
লাউয়াছড়ার প্রাকৃতিক রুপ
............................
দিনদিন পৃথিবীতে মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে আর তার সাথে সাথে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ। মানুষের জীবনযাপন ক্রমশ হয়ে উঠছে নগর কেন্দ্রীক। কিন্তু যে হারে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে মানুষের চাহিদা বাড়ছে অরণ্যে ভ্রমণের জন্য। প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে আমাদের শষ্যশ্যামলা বাংলার শ্যামল প্রকৃতি। বৃদ্ধি পাচ্ছে শহরের ব্যস্ত জীবন কিন্তু শহরের ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে এখন ঘন ঘন মানুষ পেতে চায় শ্যামল অভয়ারণ্যের ছোঁয়া কিংবা একটু নিস্তব্ধতার একাকীত্ব।
আপনার এই চাহিদা পূরণ করতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন দেশের পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বন গবেষণা কেন্দ্র ‘লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক’। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কের জীবজন্তুর হুংকার, ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ, বানরের লাফালাফি, ঝাঁকবাঁধা হুলুকের কলকাকলী একটু সময়ের জন্য হলেও আপনার ব্যস্ত জীবনের কান্তি দূর করে মনের তৃপ্ততা এনে দিবে। প্রায় ১২ শত হেক্টর এলাকা জুড়ে লাউয়াছড়া পার্কের ভিতর আড়াই হাজার প্রজাতির পাখি, ১০ প্রজাতির সরিসৃপ, অর্ধশত প্রজাতির জীবজন্তু রয়েছে। এর ভিতরে রয়েছে কয়েকটি খাসিয়া পুঞ্জি, পার্কের পাহাড় বিস্তৃত লম্বা বৃ েখাসিয়ারা খাসিয়া পানের চাষ করে। পার্কের এক পাশে রয়েছে আনারসের বাগান, এক পাশে চায়ের বাগান আবার কোথায় রয়েছে লেবু বাগান।
জঙ্গলের ভিতর রয়েছে কয়েকটি পাহাড়ী ছড়া। পুরো ন্যাশনাল পার্কটি শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ পাকা মহাসড়ক ও সিলেট আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের রেললাইন দ্বারা ৩ খন্ডে বিভক্ত। কিন্তু রেললাইন ও পাকাসড়ক দ্বারা বিভক্ত হলেও পার্কের ভিতর তেমন কোন বাড়ী-ঘর না থাকায় ও ঘন জঙ্গলের কারণে একাকীত্বের তেমন কোন সমস্যা হয়না। লাউড়াছড়ায় এক ধরণের পোকা রয়েছে, যার শব্দ শোনার পর আপনার আচমকাই বা হঠাৎ করেই যেন আপনার ভালো লাগতে শুরু করবে। মনে হবে যেন আপনি অন্য কোন পৃথিবীতে পা দিয়েছেন।
এই পোকার শব্দকে ‘ফরেস্ট মিউজিক’ বলে অখ্যায়িত করেছেন পার্কের ট্যুরিস্টরা। লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কেই রয়েছে বিরল প্রজাতির একটি বৃ। যেই বৃটিকে নিয়ে নানা জনের রয়েছে না কৌতুহল। একসময় এই বৃরে গায়ে লেখা ছিল ‘কোরোফম’। দীর্ঘ দিন এই নাম থাকায় দেশবাসী এটিকে ‘কোরোফম’ বলেই জানেন।
মাস ছয় এক পূর্বে হঠাৎ করে এর গাত্র থেকে কোরোফম সাইন বোর্ডটি নামিয়ে এর গায়ে টাঙানো হয়েছিল ‘আফ্রিকান অক ট্রি’। বর্তমানে এই নেম পেটটিও নামিয়ে লেখা হয়েছে ‘একটি বিরল প্রজাতির বৃ’। লোকমুখে প্রচারিত রয়েছে এই বৃটি কোটি টাকা মূল্যের। এটি নাকি একবার বিমান আটকিয়েছিল। এটির পাতার গন্ধ শুকলে নাকি মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেত।
তবে বন বিভাগের কাছ থেকে এরকম কোন সত্যতাই পাওয়া যায়নি।
একটি সূত্রে জানা যায়, এ প্রজাতির বৃ বিরল। বাংলাদেশে এ প্রজাতি আর কোথাও নেই। যাই হোক নানাভাবে এর খবর দেশে ছড়িয়ে পড়ায় মানুষ এই বিরল প্রজাতির বৃটিকে প্রধান উদ্দেশ্য করে লাউয়াছড়ায় যায়। বৃটি পার্কের ফরেস্ট রেস্ট হাউজের পার্শে অবস্থিত।
বর্তমানে গাছটির চারপাশে কাটা তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
কোথায় লাউয়াছড়ার অবস্থান?
.......................................
ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে বাস কিংবা ট্রেনযোগে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছুবেন। শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ-কমলগঞ্জের রাস্তায় ৭ কি·মি· এগুোলেই লাউয়াছড়া পার্কের সীমানা। এটি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় মধ্যে পড়েছে। তবে বেশিভাগ অংশ পড়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায়।
শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ রোড থেকে বাসে জনপ্রতি ৬ টাকা, প্রাইভেট কার নিয়ে গেলে ৩শ থেকে ৫শ টাকা, মিশুক নিয়ে গিলে ১৫০ টাকায় ঘুরে আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন ?
..............................
লাউয়াছড়ায় রয়েছে ১টি ফরেস্ট রেস্ট হাউজ, ফরেস্টের অনুমতি নিয়ে আপনি লাউয়াছড়া রেস্ট হাউজেই থাকতে পারেন। এছাড়াও শ্রীমঙ্গল হবিগঞ্জ রোডে রয়েছে এসি, নন এসি, ঠান্ডা গরম পানি, টিভি, ফোন ও গাড়ী পার্কিংএর সুবিধা সহ ‘টি টাউন রেস্টহাউজ’। হোটেল ইউনাইটেড, সবুজ বাংলা, মুক্ত, আল-রহমান, নীলিমা, মুন, সন্ধ্যা সহ ২৯টি হোটেল ও ২০/২৫টি সরকারী রেস্ট হাউজ। হোটেলগুলোতে থাকতে আপনার ব্যয় হবে ৪০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা
.............................
শ্রীমঙ্গলে খাওয়াদাওয়া জন্য মাছ, মাংস, সব্জি সবরকম আইটেমই পাওয়া যায়। তবে হিন্দু অধ্যুশিত এলাকা বলে শ্রীমঙ্গলের কোন হোটেলে গরুর মাংস রান্না হয়না। গরুর মাংস খেতে হলে আপনাকে রেস্ট হাউজের বাবুর্চিকে দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।
কি কি সাথে নিবেন?
..........................
শীতের সময় আসলে অবশ্যই শীতের কাপড় সঙ্গে আনতে হবে। স্টিল ক্যামেরা বা ম্যুভি ক্যামেরা থাকলে সাথে নিয়ে আসতে পারেন।
বাইনুকুলার থাকলে ভালো হয়। জঙ্গলের ভিতর প্রবেশের পূর্বে হালকা খাবার ও পানি নিয়ে যেতে পারেন। কারণ সেখানে কোন খাবার পাওয়া যায়না। বর্ষার সময় ছাতা নিতে হবে কারণ শ্রীমঙ্গলের হঠাৎ বৃষ্টির সমস্যা রয়েছে। শীত-গ্রীষ্ম উভয় সময়েই সম্ভব হলে শহর থেকে ১ জন গাইড নিতে পারেন।
কিকি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ?
................................................
লাউয়াছড়া পার্কে রয়েছে এক ধরণের চিনা জুক। যা ঘাসের সাথে মিশে থাকে এবং এর রঙও ঘাসের মতো সবুজ। আপনি ঘাসের উপর দিয়ে যদি হাঁটেন চিনা জুক কখন আপনাকে আকড়ে ধরবে আপনি টেরই পাবেন না। যদি দেখেন আপনার শরীরের কোথায় থেকে রক্ত পড়ছে তাহালে বুঝবেন চিনা জুক আপনাকে কামড় দিয়ে চলে গেছে।
তাছাড়াও আপনাকে সবসময় স্মরণ রাখতে হবে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কের জীববৈচিত্র্য রায় সরকার সকল প্রকার আহরণ নিষিদ্ধ করেছে।
পার্কে ভ্রমণকালে কোন গাছের পাতা ছেঁড়া বা কোন পশু-পাখি বা কীট-পতঙ্গকে ডিসটার্ব করা যাবে না। জঙ্গলের ভিতরে একা ভ্রমণ করতে অবশ্যই ভয় করবে। তবে কয়েকজন হলে ভালো হয়। নতুবা শ্রীমঙ্গল থেকে পরিচিত কাউকে নিয়ে যেতে পারেন। সবশেষে যদি সময় পান তাহলে দেখে আসতে পারেন মাগুরছড়া গ্যাসকূপ।
দেখতে পারেন ১৯৯৭ সালের কূপ বিস্ফোরনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া বৃ সেখানে এখানো কালের স্বাী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি লাউয়াছড়া ফরেস্ট মুখ থেকে ভানুগাছের দিকে পাকা সড়কে ২ কিলো অন্তরে রয়েছে।
কিভাবে ফিরবেন?
............................
শ্রীমঙ্গল থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে করে অথবা বাস যোগে চট্টগ্রাম-ঢাকা পৌঁছাতে হবে। চট্টগ্রামের জন্য রয়েছে প্রতি শুক্রবার ছাড়া দুপুর ১২টায় পাহাড়িকা, রাত সাড়ে ১১ টায় উদয়ন সহ দিনে-রাতে আরো দু’টি লোকাল ট্রেন। ঢাকার জন্য রয়েছে সকাল সাড়ে ১০টায় জয়ন্তিকা, ৫টায় পারাবত ও রাত ১২টায় উপবন সহ আরো দু’টি লোকাল ট্রেন।
ট্রেনে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা পৌছাতে ৫/৬ ঘন্টার সময় লাগবে। কিন্তু বাসে সময় লাগে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। আপনি যদি বাসে যেতে চান তাহলে সিলেট উত্তরবঙ্গ, সিলেট দণিবঙ্গ, সিলেট কলকাতা, সিলেট আগরতলা যাতায়াতকারী পরিবহণ-এ আসতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।