আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাড়ী ওয়ালীর বিশদশ অথবা উদ্বাস্তুর বছর শুরু (দেরীতে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য দু:খিত)

যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।

ব্লগারদের সবাইকে ইংরেজী নব বর্ষের শুভেচ্ছা। উপযুক্ত সময়ের চাইতে অনেক দেরীতে শুভেচ্ছা জানাতে হল এ জন্য ক্ষমা চাইছি এক্কেবারে প্রথমেই। ইংরেজী নব বর্ষের প্রথম দিনটিকে আমরা মনে রাখি নানা কারণেই, যার অনেকটুকুই হয়ত একেবারে প্রয়োজন থেকে আবার একই সাথে আশাবাদ থেকেও।

এই আশাই তো মানুষকে চালিয়ে নিয়ে যায় পুরোটা বছর। হয়ত এ জন্যই আমরা বিদায়ও জানাই উৎসবের মধ্য দিয়ে। আগের পোষ্টেই লিখেছিলাম ২০০৯ আমার জন্য নানা ঘটনাপূর্ণ ও আকর্ষনীয় বছর হিসেবে কেটেছে। এর শেষ আনন্দটুকু দিল ঘনিষ্ট ব্লগার বন্ধুর আন্তরিক আপ্যায়ণ। দারুন একটা সন্ধ্যা কাটিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত হল; স্বাভাবিকভাবেই ক্রমান্বয়ে প্রয়োজনীয় যানবাহনও দুস্প্রাপ্য হয়ে উঠেছিল।

কেননা পুরো ঢাকা তখন ৩১ উদযাপণের জন্য গুলাশান বনানীমুখী। যানবাহন সমস্যার খানিকটা সমাধানও হল আরেকজন ব্লগারের নিখাদ আন্তরিকতায়, তিনি গাড়ী করে এগিয়ে দিয়ে গেলেন কিছুটা পথ। এদিকে বাসা থেকে মা বারবার ফোন করছেন বাসা ফেরো বাসায় ফেরো গেট বন্ধ হয়ে যাবে । ঢাকা শহরে যাদের নিজেদের বাড়ী নেই তাদের জন্য এটা এক ভয়াবহ সিনড্রোম। রাত ১১টার মধ্যে ফিরতে হবে, আপনাকে দাবী দেয়া যাবে না, দারোয়ানেরও ঘুমাতে হবে, বাসায় এত গেষ্ট কেন, তারা কতদিন থাকবে? ইত্যাদি ইত্যাদি।

৭৫ বছর ধরে আমার দাদাবাড়ী লালবাগে, এর আগে ১৫০ বছর বিক্রমপুর মানে ঐতহ্য সূত্রে খাঁটি ঢাকাইয়া বলে দাবী করি যেখানে সেখানে। কিন্তু বাস্তবতা হল এই মহানগরে আমি ভ্রাম্যমান, উদ্বাস্তু । শ্রেণীতে মধ্যবিত্ত। শিক্ষিত, সৎ চাকুরীজীবি মা বাবার কল্যাণে ঢাকায় জমিজমা কেনার সুযোগ হয়নি বললেই চলে, মায়ের শেষ টাকা দিয়ে এক টুকরো জমি তাও কয়েক ভাগে। বাড়ী বানানো বা কেনা তো দূর স্বপ্নের মত।

ফলে ভাড়া থাকি অন্যের বাড়ীতে, সেটা শৈশব থেকেই । যেমন দু বছর ধরে থাকছি দুয়ারী পাড়া ইষ্টার্ণ হাউজিং এ। গতরাতে বাসায় ফিরতে পারলাম ১২:২০ নাগাদ। এসে যথারীতি কলিং বেল চেপে, দরজা ধাক্কিয়ে দারোয়ানকে ডাকছি, দারোয়ান কিছুতেই দরজা খোলে না, তার ঘুমই ভাঙ্গেনা। আমাদের বুয়া আবার বাড়ীওয়ালীর বাসায় যেয়ে চাবী ভিক্ষা করছে।

কিন্তু তার শত অনুনয় বিনয়েও ড. করা বাড়ীওয়ালী দরজা খোলেন না, ধমক দেন; এদিকে বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে তার ডা: কন্যা এবং আমাকে নামধাম দেরীর কারণ ইত্যাদির কৈফিয়ত দিতে বলছেন। দুই বছর ধরে এই বাসায় আছি, ফলে নতুন করে পরিচয় দেবার কিছু নেই তবুও আমি তাকে আমি শান্ত স্বরে বিস্তারিত বললাম এবং জানালাম নিচের দরজার চাবি পাঠিয়ে দিতে। এরপর আধঘন্টা পেরিয়ে গেছে আমি সর্বমোট এক ঘন্টা খোলা আকাশের নিচে, কারো কোন বিকার নেই। মা এবং বুয়া সিঁড়ির কলাপসিবল গেটের কাছে অসহায়ের মত বসে রয়েছেন। আমি মূল গেটের বাইরে কুয়াশা আর ঠান্ডায় কাঁপছি।

এই সময়টাতেই মা আর থাকতে না পেরে বললেন বোনের বাসায় চলে যেতে। এই উপায়হীনতা আমার মধ্যে কি জানি ঘটিয়ে দিল। মূল দরজার দেয়ালটা ২৫ ফুট বা এর কাছাকাছি উঁচু ;উপরের মূল দালানের সাথে একটা মানুষ গড়িয়ে যাবার ফাঁক। কিভাবে জানি আমি সেই দেয়ালটা টপকে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। এরপর কলাপসিবল গেটের কাছে যেয়ে দেখি মা বুয়া অসহায়ের মত বসে রয়েছেন।

আমি বুয়াকে বললাম বাসা থেকে হাতুড়ী নিয়ে আসতে। আমি দৃঢ় সংকল্প করেছিলাম, আজকে আমি বাসায় ঢুকেই ছাড়বো। আমার হাতুড়ী আনতে বলার কথা শুনেই বাড়ীওয়ালী বুঝতে পারল যে খেলা তার হাতের বাইরে চলে গেছে। ঠিক তখনি অর্থাৎ আবেদন নিবেদনের দেঢ় ঘন্টা পর তিনি ফোন দিয়ে দারোয়ানকে জাগালেন!!! আশ্চর্য্য যে কিনা আমার দরজার আঘাতের শব্দে জেগে ওঠেনি। !!! পুরো বিষয়টা যে বাড়ীওয়ালীর সাজানো তা পরিষ্কার হয়ে গেল চোখের সামনেই।

আমি সকালে উঠে রাতের সেই কাপড়েই নতুন বাড়ী খুঁজতে বের হলাম এবং এখন অনন্ত ১০টা নতুন বাড়ীতে ওঠার সম্ভাবনা নিশ্চিত করে বাসায় ফিরলাম। টাকা দিয়েই যখন বাড়ীতে থাকি সেটা টাকার নতুন অপশনই বা হোক না কেন? বাড়ীওয়ালী বা ওয়ালাদের এই যে খাঁচার মালিকের মত আচরণ সেটাকে দেখে বাবা মা আর এই নষ্ট অর্থনীতিকে দোষ দিলাম শুধু। বারবার মনে হল কেন আমার বাবা মারা ঘুষ খায়নি, আর নিজেদের/আমাদের জন্য একটা বাড়ী বানিয়ে যায়নি, আর তাদের অধস্তন রা কিভাবে একের পর এক বাড়ীর মালিক সেজে বসে আছে। আমার যেভাবেই হোক খুব খুব ধনী হয়ে বাড়ীর মালিক হতে ইচ্ছে করছে....উদ্বাস্তুরা সততার দোষে এই নতুন অসততার স্বপ্ন দেখে বছর শুরু করলে.....রাষ্ট্র তাদের দোষ দিতে পারে কতটুকু?


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।