উঁকি দাও ফুল!
ক. ইমাম বোখারীর হারানো হাদিস
মাছ ধরা হচ্ছিল ছোটমামার পুকুরে। পুকুরের এধার থেকে ওধার জাল টানা হচ্ছে, বিরাট সব রুই কাতলা কালিবাউশ লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাচ্ছে জালের বাইরে। যেগুলো আটকা পড়ছে, আকৃতি দেখে দেখে তার কোন কোনটিকে আবার ছেড়েও দেখা হচ্ছে। অবশিষ্ট পুঁটি আর ওই জাতীয় ক্ষুদে মাছগুলোকে জমানো হচ্ছে একটা হাঁড়িতে। মৎস্যকূলকে অস্থির করে তোলার জন্য কয়েকজন দাপাদাপিও জুড়ে দিয়েছে, জল ক্রমশঃ ঘোলা হয়ে অক্সিজেন শূন্য হয়ে পড়লে শ্বাস নিতে না পেরে বড় বড় মাছগুলো প্রায়ই লাফ দিয়ে পুকুরের পাড়ে ডাঙায় উঠে আসছে।
ছেলেপুলেরা হৈ হৈ করে দৌড়ে যাচ্ছে ওগুলোকে ধরতে। এক সময় সবচে' বড় মাছগুলোও ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে জালে ধরা দেবে কিংবা ডাঙায় খাবি খাবে।
আমি সাঁতার জানি না, পুকুরে নামার অনুমতিও পাই নাই। স্থুলাকৃতির কারণে দৌঁড়ানোরও তেমন সাধ্য ছিল না। মাছ ধরার উত্তেজনা তাই শুরুতে সংক্রমিত হলেও বেশ অনেকক্ষণ হলো আমার করার কিছুই নাই।
ধূমপানের আশায় ঝোপের আড়ালে যেতে গিয়ে দেখি পাশের এজমালি মসজিদের পুকুরটার এক কোনায় গোল টুপির মাথা দেখা যাচ্ছে। নানাবাড়ির হুজুর!
হুম। ধূমপানের নেশা ছুটে গেল। সালাম দিয়ে হুজুরের পাশে বসলাম। ফোকলা হাসি দিয়ে বুড়ো আমাকে স্বাগত জানালেন।
হুজুরও মাছ ধরছেন! আস্ত একটা বোলতার বাসা তার রসদ। বোলতার চাক থেকে শুককীটগুলো নিয়ে বঁরশির আগায় তা বিধিয়ে পানিতে ফেলার মুহূর্তের মধ্যে পটাপট কৈ মাছেরা গিলছে তা। ফাৎনায় কাঁপন মাত্র হুজুরের নিখুঁত আড়কাঠির টানে ডাঙায় উঠে আসছে রাঘব সাইজের একেকটা কৈ।
আমি কয়েকবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ফাৎনার ইশারা ঠিকমত বুঝতে না পারায় একটা কৈও কপালে জুটল না।
হুজুর এইবার রসিকতা করলেন, "তাইলে নাতি শহরে তুমি তেমন সুবিধা করতে পারতেছো না!" ইঙ্গিতটা পরিস্কার।
সংস্কারের অভাবে এজমালি পুকুরটা কচুরিপানায় ঢেকে আছে। ওই পাড়ে দেখা যায় বিধ্বস্ত ঘাট। হুজুর আমার হাত থেকে বড়শিটা আবার নিলেন, তার শিকার নৈপুণ্য অব্যাহত রইল। হঠাতই আমার মাথায় একটা বদবুদ্ধি খেললো, "হুজুর, ইমাম বুখারির হাদিস সংগ্রহের কাহিনী কৈছিলেন আপনে, ওই যে উটের মালিকের কাছ থেইকা হাদিস নেন নাই উনি...!"
হুজুরের মুখে তৃপ্তির হাসি ছড়িয়ে পড়ল, ভাবলেন শহরের মেয়েদের সাথে আমার সাফল্য-ব্যর্থতা বিষয়ক আলাপ ঘুরিয়ে দেয়ার জন্যই আমি এ প্রসঙ্গ তুলেছি।
বেচারা!
"দ্যাখো, কত নিখুঁত তাঁর হাদিস সংগ্রহের পদ্ধতি। উনি জীবনের বেশির ভাগটা সময় কাটাইছেন হাদিস খুঁজতে খুঁজতে। যেই শোনলেন, ওইখানে একজনের কাছে একটা হাদিস আছে, লগে লেগ সেইখানে ছুটলেন। আর ওইটা কি আমাগো মত দেশ? ওইটা হৈল মরুভূমি, পাহাড়। ডাকাইতের ডর।
কত কষ্ট করছেন উনি। আর এত কষ্ট কৈরা যার কাছে আসলেন, তার হাদিস-ই যে নিছেন, এমন কোন কথা নাই। দ্যাখলেন তার চরিত্র ভাল না, সনদ জঈফ, উনি ফিরা গেছেন হাদিস না নিয়াই। সেই জন্যই তো আম্রা নবীর কথাগুলা সহীহ জানতে পারছি। "
"কিন্তু হুজুর, ওই উটের বিষয়টা..."
"আরে কৈতে দাও না।
তরাইসা হৈলে তো চলবে না। হাদিস যোগাড় করতে গিয়া উনি যে বর্ণনা করতেছে, তার চরিত্র ভাল কি মন্দ, সত্য কথা বলে কিনা, কোন দলের সাথে আছে কিনা, সব বিচার করতেন। একবার শুনলেন যে, তমুক দেশে অমুক ব্যক্তির কাছে একটা হাদিস আছে। উনি তো ছুইটা গেলেন। খোঁজ খবর নিয়া সেই লোকের বাড়ির কাছে যায়া দেখেন যে, সেই লোক তার উটরে আটকাবার জন্য খাবারের লোভ দেখাইতেসে।
যেই না উট খাবার খাইতে আসলো, অমনি সে উটটারে ধইরা ফেললো। বুখারী তার কাছ থেইকা হাদিস না নিয়া ফেরত চইলা আসছেন। যেই লোক উটরে প্রতারণা করতে পারে, বুখারী তার কাছ থাইকা হাদিস নেন আই। তাইলে বোঝ, হাদিসের মর্ম কী!"
"কিন্তু হুজুর, এই যে বড়শিতে মাছ ধরতেছি আমরা, এইটা কি পাপ হৈতেছে না?"
"ক্যান? পাপ হৈব ক্যান? আল্লা কি মাছ ধর্তে না করছে? আল্লা বলছে হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য আমি ব্যবসা আর ... "
"না হুজুর, আমি বলতেছিলাম মাছে তো ভাবছে তারে খাবার দিছেন আপনে। যেই খাইল, ওরে টাইনা পাড়ে তুলছেন।
এইটা প্রতারণা না?"
হাল্কা ফাঁদের আভাস পাওয়া শুরু করলেন হুজুর। "হুম, কিন্তু আল্লা না করলে তো একটা কামরে হারাম-মকরুহ বলার উপায় নাই। "
"তাইলে তো প্রাণীরে লোভ দেখায়া ধরাটা হারাম-মকরুহ না। "
"না, তা না। '
"তাইলে তো হুজুর ইমাম বোখারি সর্বনাশ করছেন!"
"আবার বুখারি কি কর্ল?"
"না, উনি ওই যে উটওয়ালার কাছ থেইকা হাদিস নেন নাই, সেও তো আমাদের মাছ ধরার মত হালাল কাজই করতেছিল।
আমার তো এখন মনে হৈতেছে হুজুর, এই যে আজকে মুসলমানদের মাঝে এ্যাতো হানাহানি, এ্যাতো যুদ্ধ-- সব ওই একটা হাদিস বুখারির ভুলে আম্রা হারায়া ফেলার ফলে ঘটতেছে! ধরেন ওই হাদিসটা যদি আম্রা পাইতাম, তাইলে হয়তো দুনিয়ায় আর কোন বিবাদ থাকতো না। কাইজ্জা লাগলেই ওই হাদিসটা কৈতাম, আর সকলে হুঁশ ফিরা পাইত-- না একদিন আল্লার কাছে ফিরত যাওয়া লাগব, হিসাব দেওন লাগব। ফ্যানা ফাসাদ বন্ধ হৈয়া যাইত। "
"এহ হে” হাল্কা বিদ্রুপের একটা হাসি দিলেন হুজুর। "কত শত কুরআন-হাদিস আছে, কি লাভ হৈতেছে? মানুষের দিল তো পাথরের মত শক্ত হৈয়া গেছে।
আরেক্টা হাদিস শুনলেই মানুষ নাফরমানি ছাইড়া দিত! শোনো...'
শোনা আর হলো না। "হুজুর এই নাখোদারে কি বয়ান দেন! জোহরের ওক্ত হৈসে, খালি কি অজু করবেন আর আজান দিয়া শুকনা শুকনা নামাজটা পইড়া লইবেন? একটু দোয়া দরুদ পৈড়েন। এই চল্ চল্ বাড়ি চল্..."
আমাকে তাড়া দিয়ে তুলে নিল এক কনিষ্ঠ মাতুল। হুজুরের কাছ থেকে অবাক হয়ে ফিরতে ফিরতে আমি ভাবলাম, এটা তো আগে কখনো দেখি নাই! হুজুরের সাথে এই রকম রূঢ় আচরণ ভাবাই যায় না। আড় চোখে ফিরে দেখি হুজুর ফের মন দিয়েছেন ফাৎনা আর সুতোয়, তার নিবিষ্ট দৃষ্টি কচুরি ভরা পুকুরটার দিকে।
আমাদের মাছ ধরার পালা শেষ! হাল্কা অস্বস্তিটাকে চাপা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
খ. ঝিঙে ফুল
নানাবাড়ির হুজুর নিয়ে কি একটা ভূমিকা দরকার? তিনি নোয়াখালির কোন এক চরের মানুষ। নানাবাড়ির মসজিদের মুয়াজ্জিন এবং ইমামের দায়িত্ব পালন করতে সেই তরুণ বয়েস থেকে নানাবাড়িতেই রয়ে গেছেন। নানাকে আমার সামান্য মনে আছে, তাকেও দেখতাম তবিয়ত রেখে হুজুরের সাথে কথা বলতে। বাবাও দেখতাম হুজুরকে দেখলেই দাঁড়িয়ে যেতেন।
ফলে হুজুরকে শ্রদ্ধা করতে হয়, তার সন্মানটাই আলাদা, সেইটা তো আমি ছোটবেলা থেকেই জানি।
অতিলৌকিক জগতের সাথে চিরকালের গ্রাম-সমাজের যোগাযোগ-মাধ্যমের দায়িত্বটা পালন করতেন এই ধর্মনেতারা। মায়ের কাছে গল্প শুনেছি, তার ছেলেবেলায় একবার আশ্বিন মাসে একটা ফজলি আম গাছে একটা মাত্র আম ধরলো। গ্রামের মানুষ বললো,এইটা জ্বীনের কীর্তি। লোভ দেখায় কোন একটা অমঙ্গল করতে চায়।
কেউ কেউ বলল আল্লার নেয়ামতও তো হৈতে পারে!
সেই আমকে নিয়ে কী করা হবে, সেইটা নিয়ে একটা মহা আলোড়ন! শেষে মিলাদ দিয়ে মহা একটা ভোজের আয়োজন করা হল, তারপর সেই আমটা পরিবেশিত হলে হুজুরের পাতে। নানান দোয়া-দরুদ শেষে হুজুর মুগ্ধ গ্রামবাসীর সামনে ওটা খেয়ে ফেললেন। ওটা যদি আল্লার নেয়ামত হয়, তার কল্যাণ থেকে গ্রাম আর বঞ্চিত হলো না। আর ওটা যদি জ্বীনের কীর্তি হয়, হুজুরের ক্ষতি করে, এমন সাধ্য কি তাদের আছে!
এই রকম এক দিব্যজ্যোতি হুজুরের সাথে এই আচরণটা খুব মর্মান্তিক। আমার ছেলেবেলার একটা বড় অংশ এই হুজুর আর তাকে কেন্দ্র করে গল্পগুলোর মাঝে আবর্তিত।
চাকরি আর পড়াশোনা সূত্রে বাবা কয়েক বছর দেশের বাইরে ছিলেন। সেই পুরো পাঁচ বছর আমরা ছিলাম নানাবাড়িতে। বড় বোনের খুব ন্যাওটা আমি। আর সব মামাতো বোনের সাথে তার ছুটি হবে আজানের সময়, ধর্মশিক্ষার আসর। আমি নিতান্তই বালক বলে ওইখানে ভর্তি হই নাই তখনো।
ক্রমাগত ঘ্যান ঘ্যান থেকে বাঁচতে মা একটা দারুণ মতলব শিখিয়ে দিলেন। হুজুরকে যেয়ে বল, 'ঝিঙা ফুল ফুটছে। আজান দেন হুজুর!'
মার বুদ্ধিমত বেলা থাকতে থাকতেই মসজিদের রোয়াকে যেয়ে আব্দার করতাম, 'হুজুর ঝিঙার ফুল ফুটছে। ' হুজুর হাসি দিয়ে বলতেন, 'আচ্ছা তোদের ছুটি!'
অকৃতজ্ঞ বোনেরা কিন্তু কোন কোন দিন অচিরেই আমাকে ভুলে সমবয়েসীদের জগতে ডুবে যেত। অথচ সন্ধ্যার আজানের বেশ খানিকটা তখনো বাকি।
ধইঞ্চার কাঠি নিয়ে পুকুর পাড়ে একা একা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা ছাড়া করার মত আর কিছুই থাকত না।
হুজুর দেখতে পেলে বড়দের আড্ডার মাঝে আমাকে তুলে নিতেন। হাতে ধরে মসজিদের দেয়ালে বসিয়ে পাশে বসে সুর করে পড়তেন:
" 'ফজর পড়িয়া ফরিদ ভাবে মনে মনে
রুটি পানি খাব আমি জোহরেরও পানে,
জোহর পরিয়া ফরিদ ভাবে মনে মনে
রুটি পানি খাব আমি আসরেরও পানে...'
এইভাবে বারো বছর পার হয়। শেখ ফরিদ রুটি পানি স্পর্শ করে নাই। কিন্তু তার মা বললেন, "ফরিদ, তুমি তো নফসের সাথে প্রতারণা করছো।
তোমার বারো বছর বৃথাই গেল। যাও আবার জঙ্গলে, আবার নতুন কৈরা সাধনা শুরু কর!..."
সেই বয়ান শুনতে শুনতে আজানের সময় হতো। মাথার ভেতর অরণ্যবাসী শেখ ফরিদ, তার কঠোর মা আর রুটি-পানির জগতের ঘোরটাকে নিয়ে এক দৌড়ে আমি ভেতর বাড়িতে, এখন মা আমার!
গ. নফসের ফাঁদ
রাতের বেলা ছোট নানার বাসায় দাওয়াত। আমাদের খাওয়া শেষ। বাইরের ঘরে চৌকির ওপর হুজুরের খাওয়ার বন্দোবস্ত।
আমি তার পাশে যেয়ে বসলাম। আমাকে দেখে বুড়ো খুব খুশি, বলে, "শুনলাম তুমি নাকি লেলিন মিয়ার বৈ পড়!"
"জ্বি, হুজুর, লেনিন?" আমি চমকে যাবার ভান করি।
"ওই হৈল একটা। সে নাকি মানুষরে না খাইয়া থাকতে দেবে না?"
আমি হাসি। হুজুর বলেন, “শোন, আল্লার যা কিছু সৃষ্টি, সব কিছুর একটা মাজেজা আছে।
ক্ষুধা কি আল্লা এম্নি এম্নি বানাইছে? একদম না। আল্লা যখন আদমরে বানাইল, 'তারে কৈল, কও তুমি কে, আমি কে?'
"আদম কৈল, ‘তুমি তুমি, আমি আমি!"
"আল্লা কৈল, "নাফরমান!" তারপর দিল আদমের পেটে ক্ষিদা। "
"ক্ষিদার জ্বালায় অতিষ্ট হয়া আদম বলে, "মাবুদ, আমি তোমার বান্দা, তুমি আমার প্রভু। "
"কাজেই ক্ষিদা যদি না থাকে, বান্দা কি মাবুদরে মানবে? না, মানবে না। তাই আল্লা মানুষরে একদম না খাওয়াইয়া রাখে না, আবার সমানও কৈরা দেয় না।
"
ক্ষুধার এমন ধর্ম-দার্শনিক তাৎপর্য হজম করতে কিছু সময় লাগলো। কিন্তু জবাব দেয়ার চাইতে হুজুরের কথা শোনাটা বেশিরভাগ সময়েই লাভজনক। আমি মূলত শ্রোতাই রইলাম। আর সকালে আমার শঠতার কাছে পরাজিত হুজুর বহুগুণে তার প্রতিশোধ নিতে থাকলেন। "শুধু কি আল্লার প্রতি শুকর থাকার জন্যই নফস? না।
নফস আছে বৈলাই আমাদের এত রকম পরীক্ষা। আর সবশেষে হাসরের ময়দানে তার হিসাব দিয়া বান্দা যাবে বেস্ত নাইলে দোজখ। এই যে সমাজ টিইকা আছে, এইটা তো আমরা নফসরে দমন করি বৈলা, আবার তারে একদম না খাওয়াইয়াও রাখা যাইব না..."
হঠাতই আরেক ভাই এসে বলল, “হুজুর তত্ত্ব কথা তো অনেক হৈসে। ভিতর-বাড়িতে মেয়েছেলেরা অতিষ্ঠ। ওরা এ্যাখন একটু রঙঢঙ করবে, আর মসজিদটারে তো একদম ফাঁকা রাইখা দিছেন।
'
হুজুরের মাথা প্রায় বাসনের ওপর মিশে গেল। আমি আর হুজুর দু’জনেই স্তব্ধ। ধনুকের মত বাঁকা হয়ে প্রায় হুজুর খাওয়া শেষ করলেন, তারপর প্লাস্টিকের জুতোটা পায়ে গলালেন তিনি। মসজিদের পুকুরটাকে নানাবাড়িতে বলে সদর পুকুর, মসজিদ এলাকাটা সদর। হুজুর ধীরে সুস্থে ছোটনানার ঘর থেকে নামলেন, উঠোনের দরজা পেরুলেন, তারপর সদরের দিকে যাত্রা।
আমি তার ঠিক পেছনে। কোন শব্দ নাই। ভেঙে পুকুরের ওপর ঝুঁকে পড়া ঘাটলায় উনি চুপচাপ বসে রইলেন। আমিও হুজুরের পাশেই বসলাম। বৃদ্ধ এই মানুষটির ব্যাথা এবং নীরবতা সহ্যাতীত লাগছিল আমার কাছে।
পুকুরে কচুরি পানার ফাঁকে চাঁদের প্রতিফলন আর চারপাশে আগুনের কনার মত জোনাকিদের ভীড় সেই রাতটাতে আরও রহস্যময়, আরও থমথমে, আরও আধিভৌতিক একটা ঘোর নিয়ে এসেছিল। প্রাণপনে একটা কিছু বলে আমি এই শব্দহীনতা ভাঙতে চাইলাম।
"হুজুর, আপনের মনে আছে, আমাদের দুই ভাইরে ওই পাঁচিলে তুইলা আপনে শেখ ফরিদের পুঁথি পড়তেন?"
"তোমার মনে আছে!" বলে হুজুর নিজেই শুরু করলেন আরও একবার,
"'এশা পড়িয়া ফরিদ ভাবে মনে মনে,
রুটি পানি খাব আমি ফজরেরও পানে...'
"তোমার মনে আছে? শেখ ফরিদ নফসরে ফাঁকি দিতে চাইছিল। নফস হৈল ক্ষুধা! হা হা হা। তার মা তা করতে দেয় নাই।
বলছে, না, ফাঁকি দিও না ফরিদ, নফসরে তুমি জয় কর, নফসরে ফাঁকি দিও না,.... হা হা হা"
কে জানে, হয়তো বহু বছরের মাঝে ওই তার একমাত্র স্মৃতিচারণের উপলক্ষ্য। শুধু কি স্মৃতির আনন্দ মানুষকে এমন শিশুর মত প্রাণবন্ত অট্টহাসির রসদ জোগাতে পারে!
জানি না। শুধু মনে আছে নিশুতি রাতের মৌনতা ভেঙে নানাবাড়ির হুজুরের হাসি ছড়িয়ে গিয়েছিল দিকবিদিক।
০১ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার), ২০০৯ ১০:৫৪ পুর্বাহ্ন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।