I am active.
নদী
উঁচু পর্বত বা মালভূমি থেকে বৃষ্টি, প্রস্রবণ, হিমবাহ বা বরফগলা পানিতে সৃষ্টি কোনো পানিধারা যখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূমির ঢাল বরাবর প্রবাহিত হয়ে সমভূমি বা নিম্নভূমির উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে অবশেষে কোনো বিশাল জলাশয় বা হ্রদ অথবা সমুদ্রে গিয়ে পতিত হয় তখন তাকে নদী বলা হয়।
উপনদী
পর্বত বা হ্রদ হতে যেসব ছোট নদী উৎপন্ন হয়ে কোনো বড় নদীতে গিয়ে পতিত হয়, তাকে সেই বড় নদীর উপনদী বলে। অর্থাৎ যে ক্ষুদ্র জলধারা নদীর সাথে মিলিত হয় তাকে উপনদী বলে।
শাখা নদী
মূলনদী থেকে যে নদী বের হয়ে হ্রদ বা সমুদ্রে পতিত হয় তাকে শাখা নদী বলে।
নদীর উৎপত্তি ও উৎস
প্রস্রবণ বা জলাভূমি এবং হিমবাহের প্রান্তসীমা থেকে পানির স্রোতধারা বেরিয়ে ভূমির ঢাল বা নিম্নগামিত অনুসারে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়ে ছোট বড় অসংখ্য নদীর উৎপত্তি হয়।
* ভূ-পৃষ্ঠে বৃষ্টি পড়ে বা তুষার গলা পানি জমে ভূ-পৃষ্ঠ হতে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়ে নদীর সৃষ্টি হয়।
* পৃথিবীর অধিকাংশ নদীই পার্বত্য অঞ্চল হতে উৎপত্তি লাভ করেছে।
* নদীর যেখান থেকে সৃষ্টি হয় তাকে নদীর উৎস (Source) বলে।
* নদী যে অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করে তাকে নদীর উৎস অঞ্চল (Source Aria) বলে।
* পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া হ্রদ, মালভূমি, হিমবাহ প্রভৃতি থেকেও নদীর উৎপত্তি হয়।
নদীর শ্রেণীবিভাগ ও ক্রমবিকাশ
১. নদী-স্রোতের স্থায়িত্বের উপর ভিত্তি করে নদীকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়।
(ক) স্থায়ী নদী (খ) সাময়িক নদী।
২. নদীপ্রবাহের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে নদীকে সাতভাগে বিভক্ত করা হয়, যথা-
১. প্রাথমিক ভূমিরূপ নদী ২. পরবর্তী নদী ৩. বিপরীতমুখী নদী ৪. পূর্বস্থ নদী ৫. আরোপিত নদী ৬. পুনর্ভবা নদী ৭. অসংগত নদী।
৩. লিঙ্গভিত্তিক নদী দুই ভাগে বিভক্ত। যথা- ১. নদ ২. নদী
- লিঙ্গ ভিত্তিকভাবে বিশ্বের অধিকাংশ জলধারাই নদী নামে আখ্যায়িত।
কেবলমাত্র সিন্ধু, দামোদর, বলেশ্বর, কপোতাক্ষ, রাইন, ব্রহ্মপুত্রসহ কয়েকটি জলধারা নদ হিসেবে অভিহিত হয়।
- যে সব নদীর প্রাথমিক ভূমিরূপ নদীর দিকে প্রবাহিত হয় তাদের পুনর্ভবা নদী বলে।
- নদীর মস্তকের দিকে ক্ষয় হয়ে যে নদী সৃষ্টি হয় তাকে অসংগত নদী বলে।
- নদী যখন ভূ-ত্বকের উপরের শিলাস্তর অপসারিত করে নিচের ভিন্ন ধরনের শিলাস্তরের উপর গিয়ে তদবস্থায়ই হাজির হয় তখন তাকে আরোপিত নদী বলে।
- ভূ-আন্দোলনের ফলে কোনো নদীর গতিপথে ভাঁজযুক্ত অঞ্চল বা চ্যুতিযুক্ত অঞ্চলের সৃষ্টি হবার পরও যদি ঐ নদী খাত রচনা করে প্রবাহিত হতে পারে তাকে পূর্বাস্থ বা পূর্বগামী নদী বলে।
বিচিত্র নদীতত্ত্ব
* নদীর নামে দেশ- কঙ্গো, নাইজার ও জর্ডান।
* পঞ্চনদের দেশ বলা হয়- পাঞ্চাব কে।
* চীনের দুঃখ বলা হয়- হোয়াংহো নদীকে।
* নদীবিহীন দেশ – সৌদি আরব।
* River of life বা জীবনের নদী বলা হয়- কাবাকাম খালকে।
* নীল নদের দেশ বলা হয়- মিসরকে।
* কোনো মাছ নেই এমন নদী- জর্ডান নদী।
* নদীমাতৃক দেশ বলা হয়- বাংলাদেশকে।
* চীনের নীল নদ বলা হয়- ইয়াং সিকিয়াং নদীকে।
* ৪৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নীল, টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস, সিন্ধু এবং হোয়াংহো নদীর তীরে ৪টি মানব সভ্যতা গড়ে ওঠে।
নদী ও তার অন্য নাম
* বহ্মপুত্র নদের তিব্বতীয় নাম- সানপো।
* টাইগ্রিস নদীর পূর্বনাম- দজলা।
* ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব নাম- ফোরাত।
* আন্তর্জাতিক নদী বলা হয়- দানিয়ুবকে।
* টেইম নদীর পূর্বনাম ছিল- টেমেসিস (Tamesis)।
এটি ল্যাটিন শব্দ যা টেম (Thame) ও আইসিস (Isis) শব্দ।
* হোয়াংহো নদীর উপনাম- পর্বতনদীরদেশ।
রেকর্ডস
* বিশ্বের দীর্ঘতম নদী- নীলনদ (এককভাবে)।
* বিশ্বের প্রশস্ততম নদী- আমাজান (দক্ষিণ আমেরিকা)।
* বিশ্বের দীর্ঘতম নদী অববাহিকা- আমাজান অববাহিকা (দক্ষিণ আমেরিকা)।
* বিশ্বের দীর্ঘতম নদী- যৌথভাবে মিসিসিপি ও মিসৌরি।
* বিশ্বের ক্ষুদ্রতম নদী- দি-রিভার (যুক্তরাষ্ট্র)।
* সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হয়- আমাজান নদী দিয়ে।
* বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পলি সম্বলিত নদী- হোয়াংহো।
বিশ্বের দীর্ঘতম ১০টি নদী
১. নীল নদ (৬৬৯০ কি.মি.), ২. আমাজান (৬২৯৬ কি.মি.), ৩. মিসিসিপি মিসৌরি (৬২৭০ কি.মি.), ৪. ইয়াংসিকিয়াং (৫৭৯৫ কি.মি.), ৫. হোয়াংহো (৫৪৬৪ কি.মি.), ৬. কঙ্গো (৪৩৭১ কি.মি.), ৭. আমুর (৪৩৫২ কি.মি.), ৮. লেনা (৪২৬৪ কি.মি.) ৯. নাইজার (৪১৮৪ কি.মি.), ১০. মেচেং (৪১৮০ কি.মি.)।
নদী সংশ্লিষ্ট পরিভাষা
* নদী উপত্যকা : উৎস হতে মোহনা পর্যন্ত যে খাতের মধ্যদিয়ে নদী প্রবাহিত হয় সেই খাতকে নদী উপত্যকা (River channel) বলে।
* নদীতট : নদী উপত্যকার উভয় পাড়কে নদীতট বলে।
* নদী সঙ্গম : দুই বা ততোধিক নদীর মিলিত স্থানকে নদী সঙ্গম বলে। যেমন- পদ্মা ও যমুনা গোয়ালন্দের এবং এর বিভিন্ন শাখা ও উপনদীসমূহকে একত্রে নদী বলা হয়।
* নদী সোপান : সমভূমি প্রবাহে তথা মধ্যগতীতে ক্ষয়কার্যের ফলে নদীর উপত্যকায় সিঁড়ির মত ধাপে ধাপে পর্যায়িত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
তাকে নদী সোপান বলে।
* নদীগর্ভ : নদী উপত্যকার তলদেশকে নদীগর্ভ বা নদীতল (River bed) বলে।
বিশ্বের উল্লেযোগ্য ১০টি নদ-নদী
১. নীল নদ
দৈর্ঘ্য : ৬৬৯০ কিমি, উৎপত্তি : ভিক্টোরিয়া হ্রদ, পতিতস্থল : ভূ-মধ্যসাগর, প্রবাহিত : উগান্ডা, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, সুদান ও মিসরের মধ্য দিয়ে, শহর-বন্দর : কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া, খার্তুম, আলবারা (সুদান), কাম্পালা, বৈশিষ্ট্য : বিশ্বের দীর্ঘতম নদী (এককভাবে)।
২. আমাজান
দৈর্ঘ্য : ৬২৯৬ কি.মি., উৎপত্তি : আন্দিজ পর্বতমালা, পতিতস্থল : আটলান্টিক মহাসাগর, প্রবাহিত : দক্ষিণ আমেরিকা, শহর-বন্দর : মাকাপা, উপনদী সংখ্যা : ২০০, দীর্ঘতম উপনদী : মেডইবার।
৩. ইয়াংসিকিয়াং
দৈর্ঘ্য : ৫৭৯৫ কি.মি., উৎপত্তি : তিব্বতের মালভূমি, পতিতস্থল : পূর্বচীন সাগর, প্রবাহিত : চীনের মধ্য দিয়ে, শহর-বন্দর : তিব্বত, ইয়ান্নান, হুনান, জিয়াংসি, সাংহাই, নানাজং, বৈশিষ্ট্য : বিশ্বের তৃতীয় ও এশিয়ার দীর্ঘতম নদী।
৪. মিসিসিপি মিসৌরি
দৈর্ঘ্য : ৬২৭০ কি.মি., উৎপত্তি : মিনসোটর বা মিটিটর হ্রদ (কানাডা), পতিতস্থল : মেক্সিকো উপসাগর, প্রবাহিত : কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে, শহর-বন্দর : উইনিপেগ (কানাডা), নিনোপলিস (যুক্তরাষ্ট্র), বৈশিষ্ট্য : মূলত পরস্পর সংযুক্ত নদী।
৫. হোয়াংহো
দৈর্ঘ্য : ৫৪৬৪ কি.মি., উৎপত্তি : কুনলুন পর্বত, পতিতস্থল : পীত সাগর, প্রবাহিত : চীনের ভেতর দিয়ে, শহর-বন্দর : লানযে, বাত্তথৌ, যেমষ্ঠে, জিনোন, বৈশিষ্ট্য : এশিয়ার ২য় বৃহত্তম নদী, অন্যনাম : পীতনদী।
৬. দানিয়ুর
দৈর্ঘ্য : ২৮৪২ কিমি, উৎপত্তি : ব্লাক ফারেস্ট (জার্মানি) থেকে নির্গত ব্রেগে ও ব্রিগাগ নামের ২টি জলধারা থেকে, পতিতস্থল : কৃষ্ণসাগর, প্রবাহিত : জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী, স্লোভাকিয়া ও রোমানীয়া, শহর-বন্দর : ভিয়েনা, বুদাপেস্ট, বুখারেস্ট, বৈশিষ্ট্য : আন্তর্জাতিক নদী।
৭. ভলগা :
দৈর্ঘ্য : ৩৬৯০ কি.মি., উৎপত্তি : রাশিয়ার ভলদাহ পাহাড়, পতিতস্থল : কাস্পিয়ান সাগর, প্রবাহিত : রাশিয়ার মধ্য দিয়ে, শহর-বন্দর : ভলগাগ্রাড, টিভার, ইরোস্লোভাকিয়া, ইভানোভিল, পিলিটক, বৈশিষ্ট্য : ইউরোপের দীর্ঘতম নদী।
৮. ইউফ্রেটিস
দৈর্ঘ্য : ২৭৯৯ কি.মি., উৎপত্তি : আর্মেনিয়ার চৈবভূমি, পতিতস্থল : পারস্য উপসাগর, প্রবাহিত : ইরাক, তুরস্ক, সিরিয়া, শহর-বন্দর : মালাটিয়া, নাসিরিয়া, আদ-দিওয়ানিয়া, কারবালা, পূর্বনাম : ফোরাত, উপনদী : কারা-সু, মুরাদ সু।
৯. টাইগ্রিস
দৈর্ঘ্য : ১৮৯৯ কি.মি., উৎপত্তি : আর্মেনিয়ার উচ্চভূমি, পতিতস্থল : পারস্য উপসাগর, প্রবাহিত : তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া, শহর-বন্দর : বাগদাদ, মাশুল, পূর্বনাম : দজলা।
১০. মারে ডালিং
দৈর্ঘ্য : ৩৭১৮ কি.মি., উৎপত্তি : কোসিয়াস্ক পর্বত, (অস্ট্রেলিয়া), পতিতস্থল : এন কাউন্টার উপসাগর, প্রবাহিত : অস্ট্রেলিয়ার মধ্য দিয়ে, শহর-বন্দর : বুরকি, ডুবু, কোরার, বৈশিষ্ট্য : ওশেনিয়ার দীর্ঘতম নদী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।