আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোদের গরব মোদের আশা আ -মরি বাংলাভাষা

সীমাহীন পথে ছুটে চলা নদীতে সাঁতার কাটি আমার অবারিত স্বপ্নের বৈতরনি নিয়ে .......... মাতৃভাষা প্রতিটি মানুষের কাছে ই মধুর । মাতৃভাষা মানুষের সত্তা ও অস্তিত্বের অপরিহার্য অবলম্বন । পৃথিবীতে মাতৃভাষা র সর্বপ্রথম জীবন উৎসর্গ করার দৃষ্টান্ত আমাদের ই রয়েছে বলেই ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জন্য এতোটা তাৎপর্যময় । একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের নতুন করে আত্মপরিচয় লাভ এর দিন বাংলা কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সেদিন তরুণেরা প্রান দিয়েছিল। সে-দাবির সাথে যুক্ত ছিল বাঙালিত্বের বোধ , গণতান্ত্রিক চেতনা , অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ ।

এই আদর্শের পথ ধরে ই স্বাধীনটা সংগ্রাম এবং সহস্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় একটা নতুন জাতি নতুন রাষ্ট্র - বাংলাদেশ মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেল ১৯৯৯ সাল এর ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো র " আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস " হিসেবে স্বীকৃতিতে । এই স্বীকৃতি বাঙালি জাতি কে গোটা বিশ্বের কাছে নতুন করে আরেকবার পরিচয় করাল । এবং আমাদের ভাষা আন্দোলন এর রক্তাক্ত ইতিহাসে আন্তর্জাতিক মর্যাদা ভূষিত হল। মাতৃভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার । একটি ভাষাভাষী র উপর অন্য এক ভাষা চাপিয়ে দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা ।

এই বিরল ঘটনা ঘটেছিল এই উপমহাদেশ এর একটি জাতি , যারা রাজনৈতিক ভাবে পরাধীন কিন্তু সহস্র বছরের সাংস্কৃতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে যাদের গর্ব অপরিসীম , সেই বাঙালি জাতির উপর । ইতিহাস থেকে জানতে পারি , ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্থান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাত্র একমাস আগে ভারত এর আলিগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন ভাইস- চ্যান্সেলর ডঃ জিয়া উদ্দিন আহমেদ প্রস্তাব করেন " ভারত এ যেমন হিন্দি রাষ্ট্র ভাষা হতে চলছে, পাকিস্তানে ও তেমনি উর্দু রাষ্ট্র ভাষা হওয়া উচিত " ডঃ জিয়া উদ্দিন আহমেদের বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ এর অধ্যাপক ডঃ মুহামদ শহীদুল্লাহ । তিনি বলেন " অধিকাংশ জনসংখ্যার ভাষা হিসেবে বাংলাই পাকিস্তান এর রাষ্ট্র ভাষা হওয়া উচিত , যদি দ্বিতীয় রাষ্ট্র ভাষা গ্রহন করার প্রয়োজন হয় , তখন উর্দু র কথা বিবেচনা করা যেতে পারে " কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের পক্ষে সুস্পষ্ট ভাবে বাংলাভাষা কে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি প্রথম উত্থাপন করে পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশ । ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বিতর্ক নিয়ে এই পুস্তিকাটি প্রকাশ করে তমদ্দুন মজলিস। ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি করাচিতে গণ পরিষদের অধিবেশনে প্রস্তাব আসে সদস্যগণ পরিষদে শুধু উর্দু বা ইংরেজিতে কথা বলতে পারবেন।

পূর্ববাংলার প্রতিনিধি ধিরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রস্তাব করেন, পরিষদে বাংলা ভাষাকে ও স্থান দিতে হবে। কিন্তু শাসক দলের বাংলা ভাষার বিপক্ষে অবস্থান এর কারনে সেদিন বাংলার পক্ষে সংশোধনী টি অগ্রাহ্য হয়ে যায় । প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠে সর্বস্তর এর বাঙালি । পাকিস্তানের গণপরিষদের মুদ্রা ও ডাকটিকেটে বাংলা ব্যবহার না করা, নৌ -বাহিনীর নিয়োগ পরীক্ষা থেকে বাংলা বাদ দেয়ার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে বাংলা কে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ও পূর্ব পাকিস্তান এর সরকারী ভাষা ঘোষণা করার দাবিতে ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়। ভোর থেকেই ছাত্র-জনতার বিক্ষুদ্ধ স্লগানে মুখর হয়ে উঠে ঢাকার রাজপথ।

১১ মার্চ ধর্মঘট চলা কালে পুলিশ এর লাঠির আঘাতে আহত শওকত আলিকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু সেখ মুজিবুর রহমান । ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের সমাবেশে বক্তৃতা রত পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। এই সমাবেশে তাকে নাগরিক সম্বর্ধনা দেওয়া হয় এবং এই সমাবেশে তিনি ঘোষণা করেন " Urdu,only Urdu shall be the state language of Pakistan " পাকিস্তান এর প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ২৬ জানুয়ারি ১৯৫২ পল্টনের জনসভায় ৪ বছর পূর্বেকার জিন্নাহর ঘোষণার পুনরাবৃতি করলেন , কেবল উর্দু ই হবে পাকিস্তান এর রাষ্ট্রভাষা " এভাবে স্তিমিত হয়ে যাওয়া ভাষা আন্দলনের পুনরায় জাগরন উঠে। রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ ৪ ফেব্রুয়ারি কে প্রতিবাদ দিবস ঘোষণা করে ৪ ফেব্রুয়ারি র প্রতিবাদ দিবসে নবাবপুর রোডে শোভাযাত্রা ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ দিবসে ছাত্র-জনতার জনসভার একটা অংশ ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ দিবসে নবাবপুর রোড এ ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ দিবসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে আজিমপুর থেকে আসা ইডেন কলেজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাষা সংগ্রামী ছাত্র -ছাত্রীদের ১৪৪ ধারা ভাঙার প্রস্তুতি মাতৃভাষা জন্য প্রথম শহিদ রফিক উদ্দিন আহমেদ এ ভাবেই কপালে গুলি খেয়ে পরে ছিলেন হত্যা কাণ্ডের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া য় এই পোস্টার আঁকেন শিল্পী মুর্তজা বশির ১৯৫২ সাল এর ২১ ফেব্রুয়ারি নির্মম হত্যা কান্ডের প্রতিবাদে ওই দিন রাতেই গ্রেফতারী পরোয়ানা নিয়ে চট্টগ্রাম এ বসে কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী ১৭ পৃষ্ঠার দীর্ঘ একুশের প্রথম কবিতা রচনা করেন । কবির হস্তাক্ষর ২১ শে ফেব্রুয়ারি তে শহীদের স্মরণে ২২ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ কলা ভবন এর ছাদে কালো পতাকা উত্তেলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় ছাত্রছাত্রী দের জমায়েত ।

২১শে ফেব্রুয়ারি শাহীদদের স্মরনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এর ছাত্র ছাত্রী রা যেখানে একুশের প্রথম শহীদ শাহাদাত বরন করেছিলেন সে স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয় ১৯৫২ এর ৫ ই মার্চ কে প্রথমে শহিদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল , সেদিন আজিমপুর কবরস্থান এ আগত মানুষের ঢল ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হাসান হাফিজুর রাহমান সম্পাদিত ভাষা আন্দলন এর প্রথম সংকলন ভাষা আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী কয়েকটি পত্রিকা ১৯৫৩ সালে২১শে ফেব্রুয়ারি প্রভাত ফেরি গেন্ডারিয়া থেকে আগত একদল ছাত্রীর প্রভাতফেরীর সঙ্গীত ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ ইডেন কলেজ এর ছাত্রী দের নিজস্ব শহীদ মিনার পুরাতন কলা ভবন ১৯৫৪ সালে শহিদ দিবসে আতাউর রাহমান খান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান , খালি পায়ে শোভা যাত্রায় ১৯৫৪ সাল এর ২১শে ফেব্রুয়ারি , আমানুল হক, ডঃ আলাউদ্দিন আল আজাদ , জহির রায়হান , মুর্তজা বশীর ১৯৫৪ সালে রচিত আব্দুল লতিফের জনপ্রিয় গান । ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলা সাহিত্য সম্মেলন হয়, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র ছাত্রী রা সমাবেশ করে , ভাষা র দাবি তে ১৯৫৬ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্মিত শহীদ মিনার , ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এ শহিদ বরকত এর মা , বোন ও ভগ্নিপতি ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান এর প্রথম শাসনতন্ত্র গৃহীত হলে উর্দু ও বাংলা কে পাকিস্তান এর রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয় । ভাষা শহীদ আব্দুল জাব্বার ভাষা শহীদ রফিকুদ্দিন আহমেদ ভাষা শহীদ কিশোর বরকত ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম ভাষা শহীদ সফিউর রাহমান এই সব পুণ্যবান দের রক্ত বৃথা যায় নি , উনাদের আত্মত্যাগ এ আমরা ফিরে পেয়েছি আমাদের , প্রানের ভাষা। । এবং পরবর্তী ধারায় স্বাধীনতা ।

আমার ভাই এর রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি , আমি কি ভুলিতে পারি ...। পোস্ট এর ইতিকথা এই তথ্য গুল আমি আমার ছেলে মেয়ে কে ২১ শে ফেব্রুয়ারি ,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস , এবং আমাদের জাতিয় শোক দিবস সম্পর্কে ধারনা দেবার জন্য , সংগ্রহ করি । আমি বর্ণনা করার সময় দেখলাম গল্পের চাইতে , ছবি বেশি কার্যকর , তাই একটা পোস্ট দিয়ে ফেললাম ......। । ঃ ছবি সংগ্রহ - গুগুল মামা এবং একুশ : ভাষা আন্দোলনের সচিত্র ইতিহাস (১৯৪৭-১৯৫৬) সি এম তারেক রেজা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.