বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়
আশার শহর ,এই শহরের প্রতিটি মানুষের ভাষ্য এই শহরেই পৃথিবীর তাবৎ মানুষ খুঁজে পাবে তাদের এতদিনকার হারানো আশা । ফিরে পাবে ন্যায্য দাবী এক সবুজ পৃথিবীতে ঘর বাধঁবার । এই সপ্ন দেখছে নরওয়ের জেমস ক্লেয়ন একই সপ্ন দেখছে আফ্রিকার কালো মানুষ জেনায়ি । চীনের জিং ইয়াং অথবা ধুঁ ধুঁ পদ্মার বালুরাশিতে দাড়িয়ে থাকা কলিম । সকলের আশার আলো আর জলবায়ুর ন্যায্যতার দাবী নিয়ে এই মাসে ডেনমার্মের কোপেনহেগেনের বেলা সেন্টারে ৭ই ডিসেম্বর শুরু হয়েছিলো জাতিসংঘের ১৫ তম জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন সংক্ষেপে COP15।
এই সম্মেলন শেষ হবে আগামী ১৮ই ডিসেম্বর । আর মাত্র দুদিন বাকী এই আশার শহরে আশার আলোকে দেখার প্রতীক্ষায় ।
দুদিন পরেই ভাগ্য নির্ধারন হবে এই বসুন্ধরার । ঠিক করা হবে আমরা আসলে কি করতে যাচ্ছি ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য । এই ধরনী কি হবে মৃত্যুকূপ অথবা সবুজ শান্তির নীড় ? অনেক প্রশ্ন সবার মনে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে কিন্ত আশার আলো এখনও এই সম্মেলনে দেখা যায়নি ।
বরং ক্ষনে ক্ষনে চাপা আশংকা সম্মেলনের অশনি সংকেত এই যেন বেজে না উঠে ।
গত ১৪ই ডিসেম্বর সোমবার দুপুরের পর একযোগে সব আফ্রিকান দেশসমূহের প্রতিনিধিরা সম্মেলন ওয়াক আউট করে বেরিয়ে আসে । তাদের অভিযোগ ছিলো উন্নত বিশ্বের দেশসমূহ গোপনে যড়যন্ত্র করে কিয়োটো প্রটোকল এর সময়সীমা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে । কারন এই জলবায়ু বিষয়ক চুক্তিতে যেটা জাপানে স্বাক্ষরিত হয়েছিলো ১৯৯৭ সালে ,সেখানে উন্নত বিশ্বের দেশসমূহের জন্য নির্দিষ্ট মাত্রার কার্বনের বেশী নিঃসরনের কারনে জরিমানা কথার বলা হয়েছে কিন্ত উন্নয়নশীল দেশসমুহের ক্ষতিপূরন দাবীর কোন বাধ্য বাধকতা জারীর কথা বলা হয়নি ।
অবশ্য পরে উন্নত বিশ্বের দেশসমুহ তাদের কে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করলে তারা তাদের বয়কট প্রত্যাহার করে সম্মলনে ফিরে আসে ।
কিন্ত তারপরও কথা থেকে যায় , সম্মেলনের শুরুতে যেভাবে প্রতিদিন কোন কোন না ইস্যুতে একে একে নগ্নভাবে উন্নত বিশ্বের খোলস খুলে পড়ছে সকলের সামনে ফলে অবিশ্বাসের দেয়ালের ইটের গাঁথুনি প্রতিদিন বেড়েই চলেছে ।
সবশেষ সম্মেলনের যে আঘাত এসে পড়েছে তা হল গত ১৬ ডিসেম্বর ,জলবায়ু সম্মেলনের সভাপতি ডেনিশ পরিবেশ এবং জ্বালানী মন্ত্রী কোনি হেডেগার্ড পদত্যাগ করেন সভাপতির পদ থেকে এবং তার স্থলে এখন বাকী দিন দায়িত্ব পালন করবেন ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী নিজে ।
বিষয়টি যদিও কোনি ব্যক্ত করেন প্রেসের কাছে এইভাবে যে, আগামী ২দিন সম্মেলনে যেহেতু প্রায় ১১৯টি দেশের সরকার প্রধানগন অংশ নিবে তাই তার স্থলে ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করলে বিষয়টি আরো গ্রহনযোগ্যতা পাবে । কিন্ত এই পদত্যাগের পেছনের কারটি সম্পর্কে অনেকে ধারনা করছেন ,কিছুদিন আগে ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানে ডেনিশ প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু সম্মেলনের গোপন খসড়া ফাঁস হয় । এই খসড়াতে ধারনা করা হয় সকল উন্নত বিশ্বের নেতৃবৃন্দের সম্মতিতে ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী নিজে এটা তৈরী করেন কিন্ত এই সম্পূর্ন বিষয়টি তিনি সম্মেলনের সভাপতি কোনি হেডেগার্ডকে অবহিত করেননি ।
এবং ফলাফল স্বরুপ তার পদত্যাগের ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে গত কয়েকদিনে আশার আলো বলে আলোচিত হোপেনহেগেন ঘটে গেছে বেশ কটি বড় রকমের বিক্ষোভের ঘটনা ,গ্রেফতার হয়েছে কয়েকশ এমনকি শেষ পর্যন্ত ডেনিশ পুলিশকে ছুঁড়তে হয়েছে কাদাঁনে গ্যাস । এখন সকলের মনে একটি প্রশ্ন জেগে উঠছে আসলেই কি কোপেনহেগেন আশার আলো জ্বালিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হতে পারবে হোপেনহেগেন হিসেবে ? পারবে কি উন্নত বিশ্বের নেতৃবৃন্দের চেতনাকে জাগ্রত করতে ? পারবে কি জলবায়ুর ন্যায্য ক্ষতিপূরন আদায় এবং সর্বোপরি এই বিশ্বকে ধ্বংস এর হাত থেকে রক্ষা করতে ? আর মাত্র একদিন বাকী আগামী ১৮ ই ডিসেম্বর শেষ হতে যাচ্ছে সম্মেলন । ভবিষৎ এ আবার কবে এভাবে এত অধিকসংখ্যক সরকার প্রধানদের একই আলোচনার টেবিলে বসানোর সুযোগ ঘটবে এটা বলা অসম্ভব । তবে এই বিষয়ে সুনিশ্চিত যে এই সম্মেলন নিরাশার যদি পর্যবসিত হয় ।
তাহলে আমরা সবাই দায়ী থাকবো আগামী প্রজন্মের কাছে ।
পুনশ্চ: আগামী পর্বের আলোচনাতে চেষ্টা করবো বিদেশী সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া আমাদের নিজেদের কারনে আমরা যে পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করছি তার একটি সচিত্র প্রতিবেদন দেয়ার। আমাদের সরকার প্রধানদের চেষ্টার আন্তরিকতা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই । কিন্ত একটি বিষয়ে মনে রাখতে হবে সকলকে যে শুধুমাত্র বিরাট অংকের অর্থ সংগ্রহ করলেই আন্তরিকতা প্রকাশ হয়না । বরং এই অর্থের সঠিক প্রয়োগ যদি না ঘটে তাহলে এই অর্থই হয়ে দাড়াঁবে সকল অনর্থের মূল ।
আর এই অর্থ সংগ্রের চেয়ে আরো বড় দায়িত্ব এই সরকারের রয়েছে । দেশের অভ্যন্তরে যেভাবে দলীয় এবং বিভিন্ন দল ও অসৎ ব্যবসায়ীদের হাতে পরিবেশ এর বিপর্যয় ঘটছে সেটা বন্ধ না করতে পারলে দেশ খুব দ্রুত একটি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে । তাই জলবায়ু পরিবর্তনের উপর মূল ফোকাসের সাথে সাথে আমাদের নিজেদের কারনে যে দ্রুত পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে সেই বিষয়ের প্রতিও কঠোরভাবে দৃষ্টি ও ব্যবস্থা নিতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।