আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রানি ভানুসিংহীর ব্লগ

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে...

১ আমার ফুলবাগানের ফুলগুলিকে আমার ফুলবাগানের ফুলগুলিকে বাঁধব না আজ তোড়ায়- রঙ-বেরঙের সুতোগুলো থাক্‌, থাক্‌ পড়ে ওই জরির ঝালর। । শুনে ঘরের লোকে বলে, ‘যদি না বাঁধো জড়িয়ে জড়িয়ে ওদের ধরব কী করে- ফুলদানিতে সাজাব কোন্‌ উপায়ে?’ আমি বলি, ‘আজকে ওরা ছুটি-পাওয়া নটী, ওদের উচ্চহাসি অসংযত, ওদের এলোমেলো হেলাদোলা বকুলবনে অপরাহ্নে, চৈত্রমাসের পড়ন্ত রৌদ্রে। আজ দেখো ওদের যেমন-তেমন খেলা, শোনো ওদের যখন-তখন কলধ্বনি, তাই নিয়ে খুশি থাকো। ’ বন্ধু বললো, ‘এলাম তোমার ঘরে ভরা পেয়ালার তৃষ্ণা নিয়ে।

তুমি খেপার মতো বললে, আজকের মতো ভেঙে ফেলেছি ছন্দের সেই পুরোনো পেয়ালাখানা! আতিথ্যের ত্রুটি ঘটাও কেন?’ আমি বলি, ‘চলো-না ঝর্নাতলায়, ধারা সেখানে ছুটছে আপন খেয়ালে- কোথাও মোটা, কোথাও সরু। কোথাও পড়ছে শিখর থেকে শিখরে, কোথাও লুকোলো গুহার মধ্যে। তার মাঝে মাঝে মোটা পাথর পথ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বর্বরের মতো, মাঝে মাঝে গাছের শিকড় কাঙালের মতো ছড়িয়েছে আঙুলগুলো- কাকে ধরতে চায় ওই জলের ঝিকিমিকির মধ্যে!’ সভার লোকে বললো, ‘এ যে তোমার আবাঁধা বেণীর বাণী- বন্দিনী সে গেল কোথায়?’ আমি বলি, ‘তাকে তুমি পারবে না আজ চিনতে; তার সাতনলী হারে আজ ঝলক নেই, চমক দিচ্ছে না চুনি-বসানো কঙ্কণে। ’ ওরা বললো, ‘তবে মিছে কেন? কী পাব ওর কাছ থেকে?’ আমি বলি, ‘যা পাওয়া যায় গাছের ফুলে ডালে-পালায় সব মিলিয়ে। পাতার ভিতর থেকে তার রঙ দেখা যায় এখানে সেখানে, গন্ধ পাওয়া যায় হাওয়ার ঝাপ্‌টায়।

চার দিকের খোলা বাতাসে দেয় একটুখানি নেশা লাগিয়ে। মুঠোয় করে ধরবার জন্যে সে নয়, তার অসাজানো আটপহুরে পরিচয়কে অনাসক্ত হয়ে মানবার জন্যে তার আপন স্থানে। ’ ২ রানি ভানুসিংহীর ব্লগে প্রথম পোস্ট করা কবিতার নাম ‘আমার ফুলবাগানের ফুলগুলিকে। ’ এ কালে রমণীগণের মধ্যে সাহিত্যচর্চাকারিণীর সংখ্যা একান্তই অপ্রতুল। এটা সকলেই জানেন যে সাহিত্য ও কলা শিক্ষিতা নারীকে যতটা না আকর্ষণীয় করে তোলে, তার চেয়ে বেশি লোভনীয়, এবং তারও চেয়ে বেশি হলো, এ গুণগুলো তাকে করে তোলে অনন্যসাধারণা; এটা রানি ভানুসিংহী ভালো করেই জানেন।

আরও জানেন, এ জন্যই তাঁর বাগানের ফুলগুলিকে নিয়ে লেখা কবিতায় বর্তমানের কবিকুল বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। কাজী নজরুল ইসলাম কবিতাটা বার কয়েক মনোযোগ দিয়ে পড়েও কোনোকিছু উদ্ধার করতে না পেরে লিখলেনঃ কবিতাটা জটিল হো গিয়া। জসীম উদ্‌দীন লিখলেনঃ স্বরবৃত্তে লিখতে চেষ্টা করুন। আমি বাংলার ছড়ার ছন্দে কবিতা লিখে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছি; আমার ‘কবর’ কবিতাটা আমি ছাত্র থাকা অবস্থায়ই সরকার ডিগ্রি শ্রেণির পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আমাকে সম্মান প্রদর্শন করেছে। আপনিও পারবেন।

বেগম সুফিয়া কামালঃ এসব কী লিখেছেন বুঝতে পারলাম না আপামণি। তবে কবিতা হয়েছে বলে মনে হয় না। পূর্ণেন্দু পত্রী কবিতাটা পড়ে হাসলেন। তারপর লিখলেনঃ কবিতা খুব সহজলভ্য বস্তু নয় মহাশয়া। চেষ্টা করুন বেশি বেশি বই পড়তে।

বুদ্ধদেব বসু ঘুম থেকে উঠেই পিসি অন করে ব্লগে ঢুকলেন চোখ ডলতে ডলতে। তিনি খুব বিরক্ত হলেন। লিখলেনঃ কী লিখেছেন? মাথামুণ্ডু কিছু হয়েছে বলে মনে হয় আপনার? আমাদেরকে নিষ্কৃতি দিন, দয়া করে ব্লগে এসব ছাইপাশ পোস্ট করবেন না। আমি কবিতার বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছি। রবীন্দ্রনাথকে ঢেকে ফেলবো।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বেজার হলেন না। লিখলেনঃ বাক্যগুলো আরও প্রাঞ্জল করে লিখুন। আপনার দ্বারা হলেও হতে পারে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ঃ রমণীরা যুগে যুগে সাহিত্য রচনা করেছেন। কিন্তু তাঁদের লেখার কোনো সাহিত্যমূল্য নেই।

তথাপি তাঁরা এতো নাম কুড়ালেন, তাঁর কারণ কিছু লুলকবি তাঁদেরকে ‘বাহবা’ দিতে দিতে গাছের আগায় উঠিয়ে দিয়েছেন। কবিতা লিখা আপনার দ্বারা অসম্ভব। তবে পরামর্শ দিই আপনাকে, রবীন্দ্রনাথ আর কাজী নজরুলের লেখাগুলো বেশি করে পড়ুন। এমন সময় জীবনানন্দের প্রবেশঃ কবিতা না বুঝলেই তাকে আবর্জনা বলার পক্ষপাতী আমি নই। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় তাঁকেও লোকেরা অনেক খোঁচা দিত।

আপনারা তো আমার কবিতাকে কবিতাই বলতে চান না। তবে, রানি ভানুসিংহীর এই কবিতাটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। অভিনন্দন মহাশায়া। তখন রবীন্দ্রনাথের আত্মা ব্লগে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ তাঁর চোখ পড়ে ‘আমার বাগানের ফুলগুলিকে’ নামক একটা কবিতার উপর।

তিনি দেখেন ‘রানি ভানুসিংহী নামক জনৈকা ব্লগার এ কবিতাটাকে তাঁর নিজের ব্লগে স্বনামে পোস্ট করেছেন। তিনি হাসবেন, নাকি কাঁদবেন, এ কথা ভাবতে ভাবতে যখন হাটে হাঁড়ি ভাঙার উদ্দেশ্যে লগিন করে একটা কমেন্ট লিখে ‘সাবমিট’ করলেন, দেখলেন যে ব্লগে ম্যালফাংশান শুরু হয়ে গেছে। এরপর যতবারই কমেন্ট সাবমিট করলেন, কেবলই ডাটা এরর আসতে লাগলো। অবশেষে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে নিজের সুবিশাল সাহিত্যভাণ্ডার থেকে একটামাত্র কবিতা খোয়া গেলে কোনো বিরাট ক্ষতি হয় না এই মর্মে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে ব্লগ ছেড়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।