নামাজ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির অংশ ও সবচেয়ে সেরা এবাদত বলে অন্য অনেক এবাদতের চেয়ে এর পুরস্কারও অনেক বড়। মহান আল্লাহর সাথে সংযোগের সুনিশ্চিত পথ এবং আত্মাকে উন্নত করার মাধ্যম এই নামাজ। এই উন্নত এবাদতের ইতিবাচক শিক্ষা নামাজীর মন-মানসিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে এবং সবচেয়ে উন্নত গুণবালীর সমাবেশ ঘটে তার মধ্যে। পবিত্র ইসলাম ধর্মে নামাজের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেয়ার অন্যতম কারণ এটাই। পবিত্র কোরআনের সূরা আহক্বাফের ১৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেকের স্থান তার কর্ম অনুযায়ী, এটা এ জন্য যে আল্লাহ প্রত্যেকের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং তাদের প্রতি অত্যাচার করা হবে না।
একজন নিষ্ঠাবান নামাজী সুখে ও দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রেমে মত্ত থাকেন এবং তাঁরই সাহায্য কামনা করেন। মহান আল্লাহও তাঁর বিনম্র ও ভীত-বিহ্বল বান্দাদের জন্য নিজ রহমতের অসীম দিগন্ত খুলে রাখেন। সূরা নূরের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, " সেইসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে ও নামাজ কায়েমসহ যাকাত দান থেকে বিরত রাখতে পারে না, তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি ভীত-বিহ্বল হয়ে পড়বে। তারা সৎ কাজ করে বা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে যাতে আল্লাহ তাদের উৎকৃষ্টতর কাজের প্রতিদান দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে আরো বেশি দান করেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রুজি দান করেন।
"
অবশ্য প্রকৃত নামাজীরা পুরস্কারের আশায় বা দোযখের শাস্তির ভয়ে নামাজ আদায় করেন না। তারা একমাত্র আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয়েই নামাজ পড়েন। আল্লাহর স্মরণ তাদের অন্তরকে সজীব করে এবং তারা মহান আল্লাহর নৈকট্যের সুবাদে ব্যাপক কল্যাণের অধিকারী হন। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিফল বৃথা যেতে দেন না। আর তাই তিনি সৎকর্মশীল ও নামাজীদেরকে ব্যাপক নেয়ামত ও পুরস্কার দান করে থাকেন।
নামাজীদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার হলো তাদেরকে নিজের নৈকট্য দান। পবিত্র কোরআনের সূরা আলাক্বে মহান আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ রাসূল (সাঃ)কে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নামাজ ও সিজদা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহর নেয়ামতগুলোর মধ্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভ একটি তুলনাহীন ও অমূল্য নেয়ামত। আর এই নৈকট্য নামাজের মাধ্যমেই
অর্জিত হয় । নামায হচ্ছে সমুদ্রের অন্তরের মতো বিশাল একটি শহর যেখানে সবসময় এমন এক বাসন্তী আবহাওয়া বিরাজ করে-যে বসন্ত ঐশী প্রেমের মূর্ছনায় সবসময় সতেজ থাকে।
নামাযের শহরের এই পরিবেশ খোদার জিকির-আজকারে পূর্ণ,সেজন্যে তার আধ্যাত্মিক শীতল সমীর আত্মাকে সজীব করে তোলে।
নামাযের শহরের শুরুতেই রয়েছে পূত-পবিত্র একটি ঝর্ণাধারা। ওজু করার জন্যে দেহ মনকে ঐ ঝর্ণার পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। পানি যখন মুখে বা চেহারায় দেওয়া হয় তখন চেহারার ওপর এক আকাশ নূর জ্বলজ্বল করে আর চেহারার সকল দূষণ শরতের পত্র-পল্লবের মতো ঝরে পড়ে যায়। হাত-মুখমণ্ডল ধোয়া খুবই যুক্তিসঙ্গত।
কারণটা হলো বন্ধুর সাথে দেখা করার জন্যে এবং তার সাথে কথাবার্তা বলার জন্যে অবশ্যই পবিত্র হয়ে নেওয়া উচিত। এরকম পবিত্র হয়ে সতেজ ও প্রফুল্ল মনে নামাযে দাঁড়াতে হয় এবং প্রেমালাপ শুরু করতে হয়। আল্লাহু আকবার। আমাদের পক্ষে যতোটুকু প্রশংসা করা সম্ভব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার চেয়ে বড়ো এবং মহান।
নামাযকে ইসলামের একটি মৌলিক ভিত্তি বলে অভিহিত করা হয়েছে।
মানুষের মাঝে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে নামাযের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে বহু চিন্তাবিদ ও গবেষক এ নিয়ে পড়ালেখা করেছেন,গবেষণা করেছেন। মুসলিম গবেষকগণ অবশ্য নামায এবং নামাযের আত্মা ও তার হাকিকতকে বিচিত্র দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা নামাযকে দেখেছেন মানুষের আভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে। তাঁরা মনে করেন,নামায হলো আল্লাহর পথে চলার পরিপূর্ণতম একটি উপায়।
আত্মত্যাগ, ইবাদাতে নিবিষ্টচিত্ত হওয়া এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতার জন্যে নামায হলো গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস। কারণ নামায হচ্ছে যাকাত,নিহী আনিল মুনকার বা অসৎ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা ও বিরত রাখা এবং জেহাদের মতো কঠিন কাজগুলো করার শক্তিসঞ্চারকারী ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানকারী। সত্যিকার অর্থে নামায মানুষের অন্তরে এইসব দায়িত্ব পালনের শক্তি জোগায় এবং দ্রুত ময়দানে যাবার প্রেরণা জোগায়। নামায মানুষকে যাবতীয় অন্ধকারের ঘেরাটোপ থেকে রক্ষা করে এবং ঐশী বাস্তবতা ও সামগ্রিক কল্যাণের দিকে ধাবিত করে। আর মানুষ যেহেতু কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়,বিচিত্র পরীক্ষার সম্মুখিন হয় সেহেতু সবসময়ই নামাযের প্রয়োজন রয়েছে।
কিন্তু পশ্চিমা চিন্তাবিদদের অনেকেই নামাযকে একটি ধর্মীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখেছেন। নামায এবং ইবাদাত যেহেতু মানুষকে প্রশান্তি দেয় সেহেতু এই চিন্তাবিদগণ বেশিরভাগই নামাযের মনস্তাত্ত্বিক এবং আত্মিক প্রতিফলন এবং মানুষের আভ্যন্তরীণ সত্ত্বার ওপর তার প্রভাবের দিকটিতেই নজর দিয়েছেন বেশি। নামাযের প্রভাব এবং নামাযের যেই ইবাদাত তা তাদের জন্যে অনস্বীকার্য এক আকর্ষণ। মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ডক্টর হেনরি লিঙ্ক বলেছেনঃ আমি বহু মানুষের ওপর দীর্ঘ মানসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে,যারা ধর্ম-কর্ম করেন,নামাযের মতো ইবাদাত-বন্দেগি করেন,তারা এতো বেশি শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন যে,ধর্ম-কর্মহীন কোনো মানুষের পক্ষে তা অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।