আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ষড়যন্ত্র- বিদ্রোহ- ষড়যন্ত্র নাকি বিপ্লব?

চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার, স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও!

১৭৫৭ সালে মীর জাফরের নেতৃত্বে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে ইংরেজদের কাছে পরাধীনতা বরণ করে বাংলা। ইংরেজদের সাথে আঁতাতের ফলে সংখ্যাগুরু সিরাজের বাহিনী পরাজয় বরণ করে সংখ্যালঘু ইংরেজ বাহিনীর কাছে। এ ইতিহাসটুকু আমাদের সবার জানা। এ ঘটনা সে সময়ের বিকাশমান বণিক পুঁজির সাথে, সে সময়ের সামন্তবাদের বিরোধের বহিঃপ্রকাশ ছিল কিনা সে বিষয়ে মতভেদ থাকলেও এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, ইংরেজদের কাছে আমাদের সেদিনের স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয়েছিল। ইংরেজদের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের প্রতিরোধ- বিদ্রোহ বাধা পড়েছিল ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রের ঘেরাটোপে।

ইংরেজ বিরোধী ২০০ বছরব্যাপী অসংখ্য কৃষক বিদ্রোহ, বিপ্লবী আন্দোলন, সশস্ত্র সংগ্রাম, সবই পরিণতিতে সেই ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত হতে পারে নি। জনগণের মুক্তির আকাক্সক্ষা কে পুঁজি করে তৈরি হয়েছে সামন্ত প্রভূদের প্রতিনিধি বৃটিশের দালাল কংগ্রেস- মুসলিম লীগ। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন সে আন্দোলনের পরিণতিও আরেক ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বাঁধা পড়লো। ভারতবর্ষকে ২ ভাগ করে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের কাছে ইজারা দিয়ে রিমোর্ট কন্ট্রোল হাতে তুলে নেয় বৃটিশ তথা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। ’৪৭ এর স্বাধীনতা যে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসক শ্রেণীর স্বাধীনতা ছিল তা বুঝতে এদেশের জনগণের একটু দেরি হয়।

’৫২, ’৬২-র ১১ দফা, ’৬৯ এ এদেশের জনগণ নতুন বিদ্রোহের পরিক্রমা রচনা করে সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধি শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে। মুক্তির বাসনা ও গণমুক্তির স্ফূরণ যখন তুঙ্গে, তৎকালীন শাসক শ্রেণীর বড় অংশীদার আওয়ামীলীগ তখন চলে বৈঠকের টেবিলে। পেছনে পেছনে চলে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা শাসকশ্রেণীর পাকিস্তানি অংশীদারদের ২৫ মার্চ কালো রাত ঘটানোর ষড়যন্ত্র। জনগণের আকাক্সক্ষার পেছনে পড়ে থাকা গণবিরোধী নেতৃত্বের ভুলের মাশুল হয় সে রাতের অসংখ্য জীবন। যুদ্ধের সমাপ্তিও ঘটে আরেক যড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে।

যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দ্রুতই বিকাশমান গণমুক্তির অগ্রগতি রোধ করতে যুদ্ধ থামিয়ে দেয়া হয় ভারতীয় শক্তির প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। গত ৩৮ বছরেও ষড়যন্ত্র-বিদ্রোহ-ষড়যন্ত্র এই পরিক্রমা থেকে মুক্ত হতে পারে নি জনগণের মুক্তি ও গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষা। বরং গণবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক এই রাষ্ট্র বাকশাল, সামরিক ও সংসদীয় স্বৈরাচার, সেনা- নিয়ন্ত্রিত সিভিল স্বৈরাচার এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ তাবেদারি ফ্যাসিস্ট চরিত্র ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির আন্দোলন, হত্যা, গুম করে দমন, কৃষক হত্যা, ফুলবাড়ি, কানসার্ট আন্দোলন দমন, বিকাশমান ছাত্র আন্দোলন দমন, বি ডি আর বিদ্রোহ দমন, ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, গণবিরোধী টিফা, টাস্কফোর্স, ট্রানজিট, টিপাইমুখ,পিএসসি চুক্তি, সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে দেশের তেলÑ গ্যাসÑকয়লা উজাড় করে দেয়া, পাহাড়ি ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর আন্দোলন দমনের নৃশংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতন, এর স্বরূপ এই রাষ্ট্রের গণবিরোধী চরিত্রের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। জনগণের বিদ্রোহ শাসকশ্রেণীর ষড়যন্ত্রের কাছে বাধা পড়ছে বলে থেমে নেই, তার পরিমাণগত ব্যাপকতা দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

’৪৭ ও ’৭১ এর মত একাত্তরোত্তর কালপর্বের প্রান্তের দিকে দ্রুতই এগিয়ে চলছি আমরা। ’৪৭ ও ’৭১ এ জনগণের বিপ্লবী উত্তরণ না ঘটার পেছনে প্রধান কারণ ছিল বিপ্লবী রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বহীনতা। ’৪৭ এ বিপ্লবী শক্তির বিভ্রান্তি ও পরিস্থিতির পশ্চাতে অবস্থান, ’৭১ এ সাম্রাজ্যবাদী ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী ষড়যন্ত্রের কাছে যুদ্ধের মাঝে দ্রুত বিকাশমান ক্ষুদ্র বিপ্লবী শক্তির পরাজয়, সাম্রাজ্যবাদ ও তার তাবেদার শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের শেষ কথা হিসেবে প্রতিপন্ন করে। ফলে যতদিন জনগণকে একটি সত্যিকারের দেশপ্রেম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির বিপ্লবী পরিক্রমায় পরিচালিত করতে না পারছে ততদিন ষড়যন্ত্র-বিদ্রোহ-ষড়যন্ত্রের পরিক্রমা চলমান থাকবে এবং আরো একটি কাল পর্বের সমাপ্তি ঘটবে ষড়যন্ত্রের কোলে। উল্টো এ সমাজের শোষণমূলক ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো জনগণের প্রতিটি বিদ্রোহকে শাসকশ্রেণী ষড়যন্ত্র বলে প্রতিপন্ন করতে সক্ষম হবে।

তাই আজ কোন মতাদর্শ ও সমাজ পরিবর্তনের বিজ্ঞান গণমুক্তির ব্যাপক স্ফুরণ কে সংগঠিত রূপে গণক্ষমতা ও গণমুক্তির লক্ষ্যমুখে পরিচালনা করতে পারে তার অনুসন্ধান জরুরি। এক্ষেত্রে আমাদের ভূ-খন্ডের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস ও ধরণটিকে উপলব্ধি করা সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ। এছাড়া সাম্প্রাতিক লাতিন আমেরিকা, নেপাল ও ভারতসহ সংগ্রামরত সকল জাতি ও জনগণের অভিজ্ঞতা বিশেষ বিচার্য হতে পারে। (প্রপদ ঢাকা কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত ভাঁজপত্রে লিখেছেন অনিন্দ্য)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.