আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রীমঙ্গলে অরক্ষিত ৬ টি বধ্যভূমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে

রঙ্গিলা বন্ধুরে....... i_mahmud2008@yahoo.com

শ্রীমঙ্গলে অরক্ষিত ৬ টি বধ্যভূমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে ¬ ইসমাইল মাহমুদ[/sbস্বাধীনতার দীর্ঘ ৩৮ বছর পরও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার এবং আল-বদর বাহিনীর হাতে নির্মম বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের শিকার শত-শত নারী-পুরুষের স্মৃতিময় ৬টি বধ্যভূমি সংরক্ষণের অভাবে ক্রমশঃ বেহাত হয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর সরকারিভাবে শ্রীমঙ্গলে এ ৬টি বধ্যভূমি চিহ্নিত করা হয়। ১৯৮৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ শ্রীমঙ্গল এলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে এ ৬টি বধ্যভূমি সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবী জানানো হয়। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল থেকে একটি প্রতিনিধি দল বধ্যভূমিগুলোর স্থান পরিদর্শণ করেন। প্রতিনিধিদল এলাকার মুক্তিযোদ্ধ, প্রবীণ ব্যক্তি এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাথে কথা বলে ৬টি বধ্যভূমিসহ আরো বেশ ক’টি ছোট বধ্যভূমির স্থান নিশ্চিত হয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন।

কাজের কাজ হয়েছে এ পর্যন্তই। এরপর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এ ব্যাপারে সরকারি কোন মহলের পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। সরকারি তদারকি ও রক্ষণারেক্ষনের অভাবে বধ্যভূমিগুলোর অনেক জায়গা বেদখল হয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে বসত বাড়ী, দোকানপাট। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন জাতীয় সংসদের হুইপ ও বর্তমান জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস শহীদ সিন্দুরখাঁন বধ্যভূমির কিছু সংস্কার করে ‘জয়বাংলা বধ্যভূমি’ নামে ফলক উম্মোচন করেন। সে সময় বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করে ভাড়াউড়া চা বাগান সংলগ্ন বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হলেও বাকি বধ্যভূমিগুলো পড়ে রয়েছে অযতœ আর অবহেলায়।

এই ধারা অব্যাহত থাকলে একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের স্বাক্ষী হয়ে থাকা শহরের ওয়াপদা, সবুজবাগ, পূর্বাশা, সিন্ধুরখাঁন, ভাড়াউড়া চা বাগান ও সাধু বাবার বট গাছ তলা বধ্যভূমিগুলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের পূর্বাশা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ৮ শহীদের স্মৃতিবিজরিত বধ্যভূমির স্থানে ইতোমধ্যেই লোক চলাচলের রাস্তা ও আলিশান বাড়ি তৈরী হয়েছে। বাড়ি তৈরীকালে এলাকাবাসী বাঁধা প্রদান করলে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরীর সামান্য ভূমি রেখে বাকি ভূমিতে সীমানা প্রাচীর তুলে দেয়া হয়েছে। শ্রীমঙ্গল শহরের বিডিআর ক্যাম্প সংলগ্ন গণকবর সাধু বাবার বটগাছ তলা বেশ কয়েক বছর আগে চলে গেছে বিডিআর ক্যাম্পের দখলে। এছাড়া বুড়বুড়িয়া ছড়ার ভাঙ্গনে এ বধ্যভূমিটির অধিকাংশই বিলীন হয়ে গেছে।

একাত্তরের নারকীয় হত্যাকান্ডের রাজস্বাক্ষী এই বটতলা এখন বিডিআর ক্যাম্পের শোভা বর্ধনকারী বটকুঞ্জ নামে এ প্রজন্মের কাছে সমাধিক পরিচিত। এ প্রজন্ম জানে না সাধু বাবার বটতলার সেই নির্মম ইতিহাস। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ দুই যুগ ধরে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নে চা বাগানের মাঝখানে সীমানা প্রাচীর বিহীন জয়বাংলা বধ্যভূমি। ১৯৯৬ সালে বর্তমান জাতীয় সংসদের চিপ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের প্রচেষ্টায় এটি সামান্য সংস্কার হলেও মুক্তিযোদ্ধের গৌরবময় স্মৃতিগাথা জয়বাংলা বধ্যভূমিটিতে গড়ে উঠেনি কোন স্মৃতিস্তম্ভ। উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সিন্দুরখাঁন চা বাগানের ৫নং বস্তির বাঁশবাগান এলাকায় প্রায় ৩ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা এ বধ্যভূমিটি বর্তমানে সঠিক রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে বেহাত হতে চলেছে।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিনই বধ্যভুমি এলাকার বাঁশ ও মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার অন্য ৩টি বধ্যভূমির মধ্যে কলেজ রোডে ভাড়াউড়া চা বাগানের পাশে গড়ে উঠা চা শ্রমিকদের বধ্যভুমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ^ তৈরী করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১লা মে কাজ দেবার কথা বলে প্রায় ৫৫ জন নিরীহ চা শ্রমিককে বাগান থেকে ডেকে এনে এ বধ্যভূমিতে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাক হানাদান বাহিনী। বর্তমানে ওই বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরী করা হলেও কোন সীমানা প্রাচীর না থাকায় বধ্যভূমির অনেক জায়গা সাধারণ মানুষের চাষাবাদের আওতায় চলে গেছে। শহরের ওয়াপদা মাঠের কাছে অবস্থিত বধ্যভুমিটির নির্দিষ্ট কোন সীমানা প্রাচীর না থাকায় একই ভাবে বধ্যভূমির অনেক জায়গা ইতোমধ্যে বেহাত হয়ে গেছে।

সেখানে কোন স্মৃতিস্তম্ভ, সীমানা প্রাচীর কিংবা সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই। একই অবস্থা বিরাজ করছে সবুজবাগের বধ্যভূমিতে। তাছাড়া প্রতিটি বধ্যভূমির কতটুকু জায়গা রয়েছে সরকারিভাবে তারও কোন হিসেব নেই। ফলে দিন দিন এসব জায়গা চলে যাচ্ছে এক শ্রেণীর ভূমিদস্যুদের হাতে। ইসমাইল মাহমুদ ০১৭১৫১৭১৯৫০ ০১১৯৬১২৮৫১৩ ০১৬৭০৫৮৪২৭৫


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.