নৈঃশব্দের শব্দ শুনতে পারা যায় কি? ...সেই শব্দ শুনতে কেমন?...সুর-তাল-লয়ে তাদের দ্যোতনা দিব্যি আসে তো?...আমি নৈঃশব্দ ঘৃণা করি জানো নাকি?...নাগরিক শব্দদূষণের যন্ত্রণার ভেতরেও আমি এক মুহুর্ত নিরবতা সহ্য করতে পারি না!...সকাল বেলা যখন আমার ঘুম ভাঙ্গে আব্বুর ঘরের টিভি থেকে ভেসে আসা তীব্র হিন্দি গানের শব্দে, তখন যদিও মনে মনে 'বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেছে' বলে গজরাই, যেদিন নিঃশব্দে ঘুম ভাঙ্গে সেদিন কিন্তু ঠিকই অসহ্য লাগে। কারণ আমি নৈঃশব্দ ঘৃণা করি।
রাস্তা-ঘাটে বাস-ট্রাক-গাড়িতে যদি যান্ত্রিক হর্ণ না থেকে থাকতো বিথোভেনের সিম্ফনিগুলো...কিংবা মোৎজার্ট, ভিভালদি দের মাতাল করা সুরের ধ্বনি...'প্যাঁ-পোঁ' এর বদলে যদি থাকতো শান্ত, আরামদায়ক কোনো পারকাশন...রিকশা'র পেছন থেকে যে গাড়িটা মগজের প্রতিটা কোষ'কে উত্তেজিত করে ক্রমাগত হর্ন দিয়ে 'শক্তির অনুশীলন' করে, সে যদি শঙ্খের সুর তুলতো, তাতে ক্ষতি কি হতো?...রিকশা'র যে ঘন্টা ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে মাথা ধরিয়ে দেয়, সেখানে যদি 'ধিন তা তা...তা ধিন না' করে মন্দিরা বাজতো, শ্রবণেন্দ্রিয়ের কি উপায়টা থাকতো ভালো না লেগে?
মোবাইলের রিংটোনগুলো খুব যন্ত্রণা দেয়। মানুষ হাই-পিচ সাউন্ড যে কতটা পছন্দ করতে পারে তা মোবাইলের রিংটোনের বহরেই বোঝা যায়। নোকিয়া'র টরে-টক্কা রিংটোন যদি বাসের সহযাত্রীর পকেটে ফুল ভলিউমে বেজে ওঠে তখন কেমন লাগে?...আমার কিন্তু মোটেই ভালো লাগে না.....মোবাইলে কেন মেট্রোনামের সফট ট্রায়াড কর্ড বাজে না?...কিংবা খুব মন মাতানো একটা টুং-টাং চাইম বেল?...
নিত্য-নতুন ব্যাঙ্গের ছাতার মতো যে বাড়ি ঘরগুলো তৈরি হয়,তাতে হাতুড়ি-ছেনি'র বাড়িতে ঠাস্-ঠাস শব্দ না হয়ে যদি ঢং-ঢং করে ঘন্টার বাজনা হতো তবে কেমন হতো?...ছোটোবেলায় চাবি ঘোরানো খেলনা ছিলো। চাবি ঘুরিয়ে বাক্স খুললেই 'টুং-টাং' করে বাজতো...রাস্তার কানে তালা লাগানো শব্দেরা কেন মিউজিক বক্সের 'টুং-টাং' হয়ে যায় না?
বলবে এত কিছুর চাইতে নৈঃশব্দই ভালো?...মোটেই ভালো নয়, যদি বলো 'হ্যাঁ'...নৈঃশব্দের সুর অনেক করুণ!...নৈঃশব্দ আমাকে 'ঘড়ির টিক টিক' শোনায় স্পষ্ট করে। তাতে আমার সময়জ্ঞান হয়, আর সময়ের কমা-দাড়ি জেনে গেলেই আমি বিষন্ন হয়ে যাই......সময় অনেক দ্রুত আগায়, না আমি অনেক ধীরে?.........আবার কখনো সময় যে এগুতেই চায় না!......নৈঃশব্দের প্রহরে যখন কি-বোর্ডের সি মেজর স্কেল ধরি, সা রে গা মা'র ধারাপাত বাজাই, সেটাও কেমন করুণ শোনায়!...গিটারের তারে যদি আনমনে একটা 'টং' করে শব্দ করি, তবে সেটাও যেন তার সমস্ত বিষাদগ্রস্ততা নিয়ে বেজে ওঠে। ...
নৈঃশব্দের শব্দ শোনার জন্য কখনো বিষন্নতাকে সই করে বসি...কোথায় যেন একটা করুণ সুর বাজে!...কেউ যেন বহুদূরে ভায়োলিনে বিষন্নতার-একাকীত্বের করুণ সুর তুলছে। ...এত বিষাদ সেই সুরে...আমার শুনতে ভালো লাগে না......আমি অসহ্য হয়ে কানে হাত চেপে ধরি............হাত নামালে ক্ষণিকের জন্য একটা অদ্ভুত রকম নিরবতা নেমে আসে...তারপর আবারো ভায়োলিন বেজে ওঠে............
এই বিষন্নতার সুর তোলা নৈঃশব্দ আমার প্রিয় নয়। আমি নৈঃশব্দের ঘোরে ক্যালটিক নৃত্যের আনন্দময় সুর শুনতে চাই...তখন হয়তো নৈঃশব্দকে আমিও ভালোবাসবো...
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।